মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনের সংযমী অবস্থান

🎧 Listen in Audio
0:00

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ব্রিটেন ‘নিরাশাজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বুধবার ব্রিটেন সরকার এই বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে, এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে এখনই ব্রিটেন কোনো প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করবে না।

UK: বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক বিশ্বব্যাপী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর আরোপিত কর (শুল্ক) কে ব্রিটেন সরকার ‘নিরাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছে। তবে, ব্রিটেন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হিসাবে কোনও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে না। ব্রিটিশ সরকারের দাবি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে চায় এবং এ কারণেই কোনও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা এড়িয়ে চলেছে। ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতিতে স্থিতিশীলতা এবং স্বচ্ছতা অত্যন্ত জরুরি।

ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান, সব সম্ভাবনা উন্মুক্ত

ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথান রেনোল্ডস এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন যে, সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সব সম্ভাবনার বিষয়ে বিবেচনা করছে। তিনি বলেছেন, "আমরা প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করব না, তবে আমাদের কাছে সব বিকল্প উন্মুক্ত আছে। আমরা ব্রিটেনের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখব।"

ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জেমস মারেও সরকারের এই অবস্থানের সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমাদের সরকার যেকোনো অন্যায় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে রেখেছে। তবে, আমরা বাণিজ্যিক কূটনীতির মাধ্যমে এটি সমাধান করার চেষ্টা করব।"

ইইউ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, ব্রিটেন সংযম দেখিয়েছে

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ইইউ আমেরিকান ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, বার্বন, পিনাট বাটার এবং জিন্সের মতো পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। তবে, ব্রিটেন এই ধরণের প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ তারা আমেরিকার সাথে বাণিজ্যিক চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করেছেন। এই বৈঠকে উভয় নেতা আমেরিকা-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তিকে গতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটেনের সংযমী অবস্থান এই আলোচনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারে।

ব্রিটেনের ইস্পাত শিল্পের উপর হুমকি, টাটা ইস্পাতের কারখানার উপর প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কের ফলে ব্রিটেনের ইস্পাত শিল্পে গুরুতর ধাক্কা লাগতে পারে। ইতোমধ্যেই সংগ্রামরত এই খাতের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ এখন মাত্র ০.১%। ওয়েলসস্থিত পোর্ট টেলবোট ইস্পাত কারখানা, যা ব্রিটেনের বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা, এই সিদ্ধান্তের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারে। এই কারখানার মালিক টাটা ইস্পাত এটিকে আরও দক্ষ এবং পরিবেশ-বান্ধব করার পরিকল্পনা করেছে, তবে আমেরিকার শুল্ক তাদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

ভবিষ্যতে কি ব্রিটেন প্রতিক্রিয়া দেবে?

এখনই ব্রিটেন আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করার অস্বীকার করেছে, তবে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যদি এই পদক্ষেপ ব্রিটেনের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জোনাথান রেনোল্ডসের ভাষায়, "আমরা জাতীয় স্বার্থের সাথে আপোষ করব না, এবং প্রয়োজন হলে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেব।"

Leave a comment