ব্রিক্স সম্মেলনের সময় ভারত এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে, যাকে রাশিয়া একটি ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তবে, রাশিয়া স্পষ্ট করে বলেছে যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের মধ্যে হওয়া বৈঠকে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।
রাশিয়ার প্রতিনিধি ডেনিস আলিপোভ এই ব্যাপারে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন যে তাদের সরকার এই আলোচনাকে উৎসাহিত করেনি, বরং এটি ভারত ও চীনের মধ্যে একটি স্বশাসিত আলাপ ছিল। এই বক্তব্যটি স্পষ্ট করেছে যে রাশিয়ার দৃষ্টি নিজের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার দিকে, যেখানে ভারত ও চীনের মধ্যে আলোচনা তাদের নিজস্ব স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে হয়েছে।
নয়াদিল্লি: রাশিয়া কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিক্স সম্মেলনকে সফল বলে ঘোষণা করেছে। গত সপ্তাহের সম্মেলনের ফলাফল সম্পর্কে দিল্লিতে মিডিয়াকে জানাতে গিয়ে ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপোভ বলেছেন যে এটি ৩৫ টি দেশ এবং ছয়টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতাদের সাথে বর্ধিত আকারে প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ছিল।
এতে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং এশিয়ান, আফ্রিকান এবং লেটিন আমেরিকান দেশগুলির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছিল। আলিপোভ বলেছেন যে এই সম্মেলন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘মঞ্চ’ হিসেবে উঠে এসেছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং আলাপচারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাশিয়ায় ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা
ব্রিক্স সম্মেলনের সময় ভারত এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে, যাকে রাশিয়া একটি ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে দেখেছে। তবে, রাশিয়া স্পষ্ট করে বলেছে যে এই বৈঠকে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপোভকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে হওয়া বৈঠকে রাশিয়ার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তখন তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে এই বৈঠকে রাশিয়ার কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। তিনি আরও বলেছেন যে এ ধরণের আলাপচারিতার তারা স্বাগত জানায়, যা আঞ্চলিক স্থিরতা এবং সহযোগিতাকে বৃদ্ধি করে।
সীমা বিবাদে ভারত-চীন সমঝোতা
সম্প্রতি সমাপ্ত ব্রিক্স সম্মেলনের সুযোগে ভারত এবং চীন তাদের সীমান্ত এলাকায় সামরিক অবরোধ শেষ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তি ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের সীমান্তে সংঘর্ষের চার বছর পর এসেছে, যখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কয়েক দশকের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছিল।
এই চুক্তির ভিত্তিতে পূর্ব লাদাখের দেপসাং সমভূমি এবং ডেমচোকে ভারতীয় এবং চীনা সেনাদের পিছু হটার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার জন্য উভয় দেশ ২৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পার সৈন্যদের প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে। এই চুক্তিটিকে আঞ্চলিক স্থিরতার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সীমা বিবাদ সমাধানের আবেদন
ভারত ও চীনের মধ্যে বৈঠকের সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদী সীমা বিবাদ সমাধানের দিকে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “সীমান্তে শান্তি ও স্থিরতা বজায় রাখা আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।” মোদী পারস্পরিক আস্থা, সম্মান এবং সংবেদনশীলতাকে দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে এই মূল্যবোধগুলিকে মাথায় রেখে উভয় পক্ষকেই এগিয়ে যেতে হবে। তার এই বক্তব্য সীমা বিবাদ সমাধানের প্রচেষ্টাকে দেখায় এবং আঞ্চলিক স্থিরতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
চীনের প্রেক্ষিতে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের মন্তব্য
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর লাদাখের দেপসাং এবং ডেমচোকে সৈন্য প্রত্যাহারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে ২০২০ সালের পরিস্থিতিতে ভারত ফিরে যাবে। জয়শঙ্কর বলেছেন যে পরবর্তী ধাপে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার হ্রাস করা প্রয়োজন, তবে এই প্রক্রিয়া তখনই এগিয়ে যাবে যখন ভারত নিশ্চিত হবে যে অন্য পক্ষও একই প্রচেষ্টা করছে। তার এই মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে স্থিরতা এবং আস্থা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে।