মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২৫% শুল্ক: চীনের আগ্রাসী উৎপাদন নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া

🎧 Listen in Audio
0:00

চীনের দ্রুতগতির উৎপাদন ও বিশ্ববাজারে তাদের আগ্রাসী উপস্থিতি এখন তাদের জন্যই বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। অনেক দেশ তাদের দেশীয় অর্থনীতিকে সস্তা চীনা পণ্যের বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর শুল্ক আরোপ শুরু করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীন-নির্দেশিত শুল্ক: চীনের প্রায় ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের উৎপাদন বৃদ্ধি অভিযান বিশ্বব্যাপী শিল্পজগতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব মার্কিন বাজারেও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। চীন থেকে সস্তা পণ্যের প্রবল আগমনের ফলে মার্কিন উৎপাদনকারীদের উপর চাপ বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের শিল্পকে রক্ষা করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছেন যে চীন থেকে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের উপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে মার্কিন উৎপাদন খাতের সুরক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ: ১২৫% শুল্কের ঘোষণা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীন থেকে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের উপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে আগ্রাসী বাণিজ্য নীতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যাকে ট্রাম্প মার্কিন উৎপাদনকারীদের রক্ষা করার ‘অপরিহার্য পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশকে ৯০ দিনের ছাড় দিয়ে মাত্র ১০% শুল্ক আরোপ করেছে, কিন্তু চীন এই ছাড় থেকে সম্পূর্ণ বাদ। এর স্পষ্ট ইঙ্গিত হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লড়াই শুরু করেছে।

চীনের কৌশল: ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে কারখানার বন্যা

চীন গত চার বছরে রিয়েল এস্টেট ও আবাসন খাত থেকে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার শিল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও, সম্প্রতি ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের আরও একটি বিনিয়োগ গ্লোবাল বাজারে অতিরিক্ত উৎপাদনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, BYD-এর মতো কোম্পানিগুলো নতুন কারখানা স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে এবং ইলেকট্রিক যানবাহন থেকে শুরু করে সারের যোগান বিশ্বজুড়ে বেড়ে গেছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া: চীনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধতা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের ইলেকট্রিক যানবাহনের উপর ৪৫.৩% শুল্ক আরোপ করেছে।
ব্রাজিল ধাতু ও ফাইবার অপটিক কেবলের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।
মেক্সিকো ও থাইল্যান্ডও চীন থেকে আমদানির উপর কঠোর শুল্ক আরোপের বিষয়ে বিবেচনা করছে।
এই ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দেয় যে, এখন শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলিও চীনের ‘ডাম্পিং কৌশল’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

প্রভাব: বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক

২০২৩ এবং ২০২৪ সালে চীনের রপ্তানি যথাক্রমে ১৩% এবং ১৭% বেড়েছে, যার ফলে তাদের জিডিপির ২০% শুধুমাত্র রপ্তানি থেকে আসছে। এর বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি জিডিপির মাত্র ১১% রয়েছে, যা ২০২১ সালের তথ্যের চেয়েও কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি ২৯৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যার ফলে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।

চীন যে আগ্রাসী কৌশল অবলম্বন করে বিশ্ববাজার দখল করার চেষ্টা করেছিল, সেই কৌশলই এখন তাদের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিচ্ছে। यদি দেশগুলি একত্রিত হয়ে এইভাবে কঠোর আমদানি শুল্ক অব্যাহত রাখে, তবে চীনের অতিরিক্ত ক্ষমতা এবং ডাম্পিং নীতি চীনের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

Leave a comment