ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ: বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে নতুন সংকট

ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ: বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে নতুন সংকট
সর্বশেষ আপডেট: 02-04-2025

আজ, ২রা এপ্রিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প “মার্কেটিং মুক্তি দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং পুরো বিশ্বে পারস্পরিক ট্যারিফ আরোপের পরিকল্পনা করেছেন। এর অধীনে, অন্যান্য দেশ থেকে আমেরিকায় আমদানি করা পণ্যসমূহের উপর কর আরোপ করা হবে।

ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ, ২রা এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে এমন তাঁর নতুন ট্যারিফের ঘোষণা করেছেন, যার অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যসমূহের উপর শুল্ক আরোপ করা হবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন যে, ট্রাম্প বুধবার তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর সময় গার্ডেন প্রেস কনফারেন্সের সময় এই পরিকল্পনার খুলাসা করবেন। এর অধীনে আমেরিকা তাদের বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করছে, যার উদ্দেশ্য বিদেশি পণ্যের উপর আমেরিকার নির্ভরতা কম করা। তবে, এই পরিকল্পনার অনেক দিক নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

ভারতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব

ভারতকে আমেরিকার সাথে তাদের রপ্তানির উপর ব্যাপক ট্যারিফের মুখোমুখি হতে হতে পারে। আমেরিকাকে ভারতের রপ্তানি অনেক ক্ষেত্রে হয়, যেমন ফার্মাসিউটিক্যালস, পোশাক, খনিজ এবং কৃষি পণ্য। বিশেষ করে, ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের উপর এই নতুন ট্যারিফের সরাসরি প্রভাব পড়বে, কারণ আমেরিকায় ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের বড় বাজার রয়েছে। অনুমান অনুযায়ী, ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্রে প্রায় ১০.৯০ শতাংশ ট্যারিফের প্রভাব পড়তে পারে। তবে, ভারতের কিছু পণ্য, যেমন আকরিক এবং পেট্রোলিয়াম, এর উপর কোন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে না, কারণ এর উপর ইতিমধ্যেই উচ্চ ট্যারিফ আরোপ করা আছে।

কানাডা এবং মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়া

কানাডা এবং মেক্সিকো ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ট্যারিফ পরিকল্পনাগুলির প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কর্নি বলেছেন যে, আমেরিকার সাথে তাদের পুরোনো সম্পর্ক এখন শেষ হয়ে গেছে এবং কানাডা প্রতিশোধমূলক ট্যারিফ আরোপ করবে, যার প্রভাব আমেরিকার উপর পড়বে। একইভাবে, মেক্সিকোও বলেছে যে, তারা আমেরিকান পণ্যের উপর প্রতিশোধমূলক ট্যারিফ আরোপ করবে। মেক্সিকোর উদ্দেশ্য হল আমেরিকার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ কম করা এবং তাদের জাতীয় শিল্পকে উন্নীত করা।

চীনের প্রতিক্রিয়া

চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্পের ট্যারিফ প্রস্তাবগুলির উপর যৌথভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। চীন বলেছে যে, আমেরিকান ট্যারিফের প্রভাব অবশেষে আমেরিকার অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং চীনকে বিশ্ববাজারে শক্তিশালী করবে। এই দেশগুলি মনে করে যে, ট্রাম্পের আক্রমণের ফলে আমেরিকা একাকী হয়ে পড়তে পারে, যখন তাদের সহযোগিতা ও শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্রাম্পের ট্যারিফের বিশ্বব্যাপী প্রভাব

ট্রাম্পের ট্যারিফ পরিকল্পনার বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ট্যারিফগুলির ফলে ভোক্তাদের বেশি দাম দিতে হতে পারে, যার ফলে বিক্রয় হ্রাস এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। ট্যারিফের উদ্দেশ্য হল আমেরিকান শিল্পকে রক্ষা করা, কিন্তু এটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে।

এই পরিকল্পনার অধীনে বিভিন্ন পণ্যের উপর আরোপিত ট্যারিফ থেকে আমেরিকার সরকারের প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব প্রাপ্তির আশা করা হচ্ছে। তবে, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ভোক্তাদের উপর নেতিবাচক হতে পারে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের দিকে একটি নতুন মোড় আসতে পারে।

Leave a comment