সংসদের বাজেট অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর ওয়াকফ (সংশোধন) বিল এখন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অনুমোদনও পেয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিল এখন আইন হিসেবে কার্যকর হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার এর জন্য অধিসূচনা জারি করেছে।
ওয়াকফ বিল ২০২৫: ভারত সরকার কর্তৃক সংসদে পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধন) বিল ২০২৫ এখন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অনুমোদন পেয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিল এখন আইন হিসেবে কার্যকর হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক অধিসূচনার মাধ্যমে এটি কার্যকর করা হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির ঘোষণা, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাবে।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ কী?
এই বিল ‘ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UMMEED)’ নামে পরিচিত হবে। এর উদ্দেশ্য ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
প্রধান বৈশিষ্ট্য ও বড় পরিবর্তন
১. ASI সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভে ওয়াকফের দাবি বাতিল: এখন ওয়াকফ বোর্ড কোনও ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব জরিপ (ASI) সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ বা ঐতিহাসিক স্থানে ওয়াকফের দাবি করতে পারবে না।
২. সরকারি সম্পত্তিকে ওয়াকফ ঘোষণা করার উপর নিষেধাজ্ঞা: এই নতুন আইনের অধীনে কোনও সরকারি জমি বা ভবনকে এখন ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করা যাবে না।
৩. আদিবাসী অঞ্চলের সুরক্ষা: ৫ম ও ৬ষ্ঠ তফসিল অন্তর্ভুক্ত আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে কোনও জমিকে ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
৪. সম্পত্তি দানকারীকে ৫ বছর ধরে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হতে হবে: ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে কোনও দান তখনই বৈধ হবে যখন দানকারী অন্তত পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হবে।
৫. ওয়াকফ সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার: এখন ওয়াকফ-আল-ঔলাদ (পারিবারিক ওয়াকফ) -এ মুসলিম নারীরা উত্তরাধিকার ও সম্পত্তিতে অংশীদার হবে। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও অनाথ নারীরাও অধিকার প্রাপ্ত হবে।
অ-মুসলিম সদস্য ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা
ওয়াকফ বোর্ডে এখন অ-মুসলিম সদস্যও নিয়োগ করা যাবে।
বোর্ডে দুইজন নারী সদস্য নিয়োগ বাধ্যতামূলক হবে।
পিছিয়ে পড়া, নিম্নবর্গের মুসলিম এবং নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধিত্ব পাবে।
সত্যতা যাচাই ও রেকর্ডের শক্তিশালীকরণ
কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ ঘোষণা করার আগে বাধ্যতামূলক সত্যতা যাচাই হবে।
জেলা কালেক্টর ওয়াকফ সম্পত্তির জরিপ ও মালিকানার নিশ্চয়তা দেবেন।
যেসব ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ টাকার বেশি, তাদের বার্ষিক অডিট করানো বাধ্যতামূলক হবে।
মুতওয়াল্লীদের ৬ মাসের মধ্যে তাদের সম্পত্তির বিবরণ ওয়াকফ পোর্টালে দাখিল করতে হবে।
ওয়াকফ সম্পত্তিতে এখন সীমা আইন ১৯৬৩ (Limitation Act) প্রযোজ্য হবে, যার ফলে অপ্রয়োজনীয় ও বহু বছর ধরে চলা সম্পত্তি বিরোধ কমে যাবে।
সংসদে বিল কীভাবে পাস হয়েছে?
লোকসভায় ভোট: ২৮৮ ভোট সমর্থনে, ২৩২ ভোট বিরোধে।
রাজ্যসভায় ভোট: ১২৮ ভোট সমর্থনে, ৯৫ ভোট বিরোধে।
উভয় সদনে বিল ধ্বনি ভোটে নয় বরং ভোট বিভাজনের মাধ্যমে পাস হয়েছে।
ওয়াকফ সংশোধন আইন ২০২৫ ভারতে ধর্মীয় সম্পত্তির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনি স্পষ্টতা বৃদ্ধি করবে। এই আইন কেবলমাত্র সরকারি ও জনসাধারণের স্বার্থের সম্পত্তির সুরক্ষা করবে না, বরং আদিবাসী ও নারীদের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারকেও শক্তিশালী করবে।