রাজা রঘুবংশী হত্যা: স্ত্রী নয়, প্রেমিকই মাস্টারমাইন্ড!

🎧 Listen in Audio
0:00

রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। যাকে এতদিন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বলে মনে করা হচ্ছিল, সোনম রঘুবংশী, সেই ধারণাকে পুলিশের তদন্ত সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে।

অপরাধ সংবাদ: রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ডে পুলিশের তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড় নেওয়া। পূর্বে যেখানে এই ঘটনা স্ত্রী সোনম রঘুবংশী কর্তৃক স্বামীর হত্যার ষড়যন্ত্র হিসেবে ধরা পড়েছিল, এখন তদন্তে উঠে এসেছে যে এই ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড অন্য কেউ নয়, সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা। পুলিশ পাঁচজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলি কেবলমাত্র সনসনীখেজ নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে হত্যার পরিকল্পনা কতটা পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত ছিল।

কন্ট্রাক্ট কিলিং নয়, ব্যক্তিগত ষড়যন্ত্র ছিল হত্যা

পুলিশ স্পষ্ট করে বলেছে যে রাজার হত্যা কোনও পেশাদার কন্ট্রাক্ট কিলিং ছিল না। হত্যাকারী রাজ কুশওয়াহার ব্যক্তিগত বন্ধু ও আত্মীয় ছিলেন, যারা কেবলমাত্র বন্ধুত্ব ও আবেগের বশবর্তী হয়ে তার সাহায্য করেছিল। এদের মধ্যে বিশাল, আনন্দ, আকাশ এবং একজন চাচাতো ভাইও ছিল। হত্যার পরিকল্পনা মাসের পর মাস ধরে চলেছিল। তদন্ত অনুসারে, মোট চারবার রাজার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তিনবার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল।

  • ফেব্রুয়ারী ২০২৫ প্রথম পরিকল্পনা: সোনমকে নিখোঁজ দেখিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া।
  • দ্বিতীয় পরিকল্পনা: কোনও মহিলার মৃতদেহকে স্কুটিসহ পুড়িয়ে দেওয়া যাতে মনে হয় সোনমের মৃত্যু হয়েছে। দুটি পরিকল্পনাই কারিগরি কারণে ব্যর্থ হয়।
  • ১১ মে: এই সময় সোনমের রাজা রঘুবংশীর সাথে বিয়ে হয়, যার ফলে হত্যার পরিকল্পনায় নতুন মোড় আসে।
  • ১৯ মে: সোনম ও রাজা কামাখ্যা দেবী মন্দির দর্শনের জন্য আসাম যান। সেখানে গুয়াহাটিতে হত্যার তৃতীয় পরিকল্পনা তৈরি হয় কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না।

সোহরায় বুনে উঠল মৃত্যুর জাল

অবশেষে চতুর্থবারে সোহরা (চেরাপুঞ্জি) তে হত্যার পরিকল্পনা সফল হয়। সোনম রাজাকে সেখানে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করে, যখন তার সহযোগীরা ইতিমধ্যেই সেখানে উপস্থিত ছিল।

  • পার্কিং স্থলে সোনম রাজের তিন সহযোগীর সাথে দেখা করে।
  • রাজাকে झाड़ির মধ্যে নিয়ে গিয়ে আক্রমণ করা হয় এবং তাকে গর্তে ফেলে দেওয়া হয়।
  • হত্যার সময় সোনম সেখানে উপস্থিত ছিল এবং সে আসামীদের সাহায্য করেছিল।

প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা

হত্যার পর আসামিরা প্রমাণ মুছে ফেলার পুরোপুরি চেষ্টা করেছিল:

  • সোনম তার রেনকোট আকাশকে দিয়েছিল কারণ তার শার্টে রক্ত লেগেছিল।
  • এভি পয়েন্টের কাছে রেনকোট ফেলে দেওয়া হয়।
  • সোনম নিজেই স্কুটি চালিয়ে সেখান থেকে পালায় এবং পরে আকাশ স্কুটি চালাতে শুরু করে।
  • রাজা কর্তৃক ভাড়া করা স্কুটি আনন্দ সীমান্তের কাছে ফেলে দেয়।

বোরখা পরে পালানো সোনম, রাজের নির্দেশ

  • হত্যার পর সোনম বোরখা পরে পালানো শুরু করে:
  • বোরখা বিশালের হাতে সোনমের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
  • সোনম গুয়াহাটি থেকে বাস ধরে, শিলিগুড়ি, পাটনা, আরারা, লখনউ হয়ে ইন্দোরে পৌঁছায়।
  • রাজ নিজেই সোনমকে ইন্দোরে পালানোর পরামর্শ দেয়, যখন সে পুলিশের অভিযানের খবর পায়।

মিথ্যা অপহরণের পরিকল্পনা

হত্যার পর পুলিশ দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়। যখন রাজ বুঝতে পারে যে পুলিশ তার কাছে পৌঁছে গেছে, তখন সে সোনমকে ফোন করে নতুন নাটক রচনার নির্দেশ দেয়। সোনমকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সে তার পরিবারকে ফোন করে বলবে যে সে অপহরণকারীদের কবল থেকে বেরিয়ে এসেছে। পুলিশের সক্রিয়তার কারণে এই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে পাঁচজন আসামী পুলিশ হেফাজতে রয়েছে:

  • রাজ কুশওয়াহা (মাস্টারমাইন্ড)
  • সোনম রঘুবংশী
  • বিশাল
  • আনন্দ
  • আকাশ

রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ড কেবলমাত্র এক স্বামীর নৃশংস হত্যা নয়, বরং এটি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থার নামে করা ষড়যন্ত্রের চরম উদাহরণ।
যতক্ষণ পুলিশের তদন্ত এগিয়ে চলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের আরও অনেক স্তর উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

```

Leave a comment