রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি: বৃত্তি ও ছাত্রাবাসের অবস্থায় উদ্বেগ

🎧 Listen in Audio
0:00

কংগ্রেসের সাংসদ এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী পুনরায় সামাজিক ন্যায় এবং শিক্ষার অধিকারের সুর উঠিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে বঞ্চিত সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তির অর্থ প্রদানে বিলম্বের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নয়াদিল্লি: লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের সমস্যাগুলিকে জাতীয় আলোচনার অংশ করার নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি বিস্তারিত চিঠি লিখে দেশজুড়ে দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

রাহুল গান্ধী তার চিঠিতে শুধুমাত্র বৃত্তি প্রদানে বিলম্ব নয়, জীর্ণ ছাত্রাবাস এবং মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের বিষয়টিও সরকারের নজরে আনেন। তিনি বলেছেন, যদি সময়মতো এই সমস্যাগুলির দিকে নজর না দেওয়া হয়, তাহলে কোটি কোটি তরুণ প্রতিভা সম্পদের অভাবে পিছিয়ে পড়ে যাবে।

বৃত্তি প্রদানে বিলম্ব সবচেয়ে বড় বাধা

রাহুল গান্ধী চিঠিতে বিশেষ করে ম্যাট্রিক পরবর্তী বৃত্তি প্রদানে বিলম্বের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, প্রায় ৯০ শতাংশ প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী এই ধরণের বৃত্তি পরিকল্পনার উপর নির্ভরশীল, কিন্তু সময়মতো বৃত্তি না পাওয়ার ফলে তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় অথবা তারা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।

তিনি বিহারের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে সেখানকার বৃত্তি পোর্টাল তিন বছর ধরে বন্ধ ছিল, যার ফলে ২০২১-২২ সালে একজনও ছাত্রছাত্রী বৃত্তি পায়নি। এটি শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতাই নয়, এটি একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারে ঠেলে দেয়।

ছাত্রাবাসের অবস্থা করুণ

রাহুল গান্ধী তার সাম্প্রতিক বিহার সফরের উল্লেখ করে দারভঙ্গায় অবস্থিত আম্বেদকর ছাত্রাবাসের দুর্দশার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে,

  • একটি ঘরে ৬-৭ জন ছাত্রছাত্রী থাকতে বাধ্য।
  • শৌচালয় এবং পানির ব্যবস্থা খুবই খারাপ।
  • খাদ্য, গ্রন্থাগার এবং ইন্টারনেটের মতো মৌলিক সুবিধা নেই।
  • তিনি এই অবস্থাকে "শিক্ষার অধিকারের উপর ঠাট্টা" বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

নীতিগত স্তরে সংস্কারের দাবি

রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন যে, সরকারকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে অবিলম্বে নীতিগত স্তরে সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে:

  • বৃত্তি বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং দ্রুততা আনা উচিত।
  • ছাত্রাবাসে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত যাতে গরিব ও বঞ্চিত শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা সম্মানের সাথে শিক্ষা লাভ করতে পারে।
  • তিনি এও পরামর্শ দিয়েছেন যে বৃত্তি পোর্টাল স্থায়ী এবং আপডেট করা উচিত যাতে বারবার প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফলে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

শিক্ষা নয়, সুযোগ-সুবিধার লড়াই হয়ে উঠছে

রাহুল গান্ধীর এই চিঠিটি উন্মোচন করেছে যে, ভারতে শিক্ষা আজও অনেক ছাত্রছাত্রীর জন্য ‘স্বপ্ন’, যা সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং প্রশাসনিক অবহেলায় ভেঙে পড়ছে। তিনি এও বলেছেন, যদি সময়মতো সংস্কার না করা হয়, তাহলে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদেরই ক্ষতি হবে না, দেশের সামাজিক ন্যায় ব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চিঠিটি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন নয়, বরং রাহুল গান্ধীর একটি কৌশলগত উদ্যোগ, যার মাধ্যমে তিনি দেশের তরুণ এবং বঞ্চিত শ্রেণীর মধ্যে আস্থা স্থাপন করতে চান। এর আগেও তিনি ছাত্র রাজনীতি, বেকারত্ব এবং তরুণদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেছেন।

Leave a comment