পহেলগাঁও হামলার ठीक ১৫ দিন পর ভারতীয় সেনা পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (POK) -এর সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রতিশোধ নিয়েছে। এই অভিযান গত রাত ১ টা ৪৪ মিনিটে শুরু হয়।
অপারেশন সিন্দুর: ভারত পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) -এ সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে "অপারেশন সিন্দুর" নামে একটি তীব্র সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানের অধীনে ভারতীয় সেনা লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদীন-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মোট ৯টি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে।
পুলওয়ামা হামলার পর এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে। ভারতীয় সেনার এই নিখুঁত এয়ার স্ট্রাইক সন্ত্রাসবাদীদের নেটওয়ার্ককে বড় ধাক্কা দিয়েছে, যার মধ্যে জইশের প্রধান মসুদ আজহারের আস্তানাও অন্তর্ভুক্ত। অপারেশন সিন্দুর নামটি ভারতের এই আক্রমণাত্মক হামলার নাম দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর জন্য দায়ী সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করা।
রাত ১ টা ৪৪ মিনিটে ভারতীয় বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তান এবং PoK-এ অবস্থিত সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে। এতে ৯টি প্রধান সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকে বছর ধরে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ এবং জম্মু-কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করানোর কাজে নিয়োজিত ছিল।
অপারেশন সিন্দুরের অধীনে ধ্বংস হওয়া ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি
এই ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটির মধ্যে অনেক প্রধান সংগঠন এবং তাদের শিবির অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। আসুন জেনে নেই এই ঘাঁটিগুলি সম্পর্কে:
- মারকাজ সুবহান আল্লাহ, বাহাওয়ালপুর: এটি ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর, যা ২০১৫ সাল থেকে সক্রিয় ছিল। এই ঘাঁটি থেকে মসুদ আজহার এবং অন্যান্য প্রধান সন্ত্রাসবাদী নেতারা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছিলেন। এখান থেকে জইশের সন্ত্রাসবাদীরা ভারতে হামলা করার জন্য প্রস্তুত করা হতো।
- মারকাজ তৈয়বা, মুরিদকে: লস্কর-ই-তৈয়বার সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। এখানে প্রতি বছর ১০০০ নতুন সন্ত্রাসবাদী ভর্তি হতো। ওসামা বিন লাদেন এই কেন্দ্রে মসজিদ এবং গেস্ট হাউস নির্মাণ করেছিলেন।
- সরজাল/তেহরা কলান: এটি ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি প্রধান ঘাঁটি, যা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হতো। এখানে সন্ত্রাসবাদীদেরকে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রস্তুত করা হতো।
- মাহমুনা জোয়া সেন্টার, সিয়ালকোট: হিজবুল মুজাহিদীনের এই ঘাঁটি জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করতো। এই কেন্দ্র সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ এবং সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
- মারকাজ আহলে হাদিস, বরনাল: এটি লস্কর-ই-তৈয়বার আরেকটি প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল, যা পাকিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। এখান থেকে লস্করের সন্ত্রাসবাদীদের পুঞ্চ-রাওঁজরি-রিয়াসি সেক্টরে পাঠানো হতো।
- মারকাজ আব্বাস, কোটলি: জইশ-ই-মোহাম্মদের এই ঘাঁটি কোটলিতে অবস্থিত ছিল এবং এখান থেকে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা করা হতো। এর প্রধান কারি জাররার জম্মু-কাশ্মীরে অনেক সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
- মসকার রাহিল শাহিদ, কোটলি: এটি হিজবুল মুজাহিদীনের সবচেয়ে পুরোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে প্রায় ১৫০-২০০ সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ নিত। এই কেন্দ্র থেকে সন্ত্রাসবাদীদের ভারতীয় সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য পাঠানো হতো।
- শাহওয়াই নাল্লাহ ক্যাম্প, মুজফ্ফরাবাদ: এটি লস্কর-ই-তৈয়বার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিবির ছিল, যেখানে আজমল কাসাবের মতো সন্ত্রাসবাদীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ২৬/১১-এর মুম্বই হামলায় এই শিবির থেকে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসবাদীরা ভারতে বিধ্বংসী কাজ করেছিল।
- মারকাজ সায়্যেদনা বিলাল, মুজফ্ফরাবাদ: এটি জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিবির ছিল, যা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে অবস্থিত ছিল। এই কেন্দ্র ভারতের বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশ করার আগে সন্ত্রাসবাদীদের জন্য একটি ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে কাজ করতো।
অপারেশন সিন্দুরের গুরুত্বপূর্ণ দিক
অপারেশন সিন্দুর ভারতীয় সেনার একটি বড় সামরিক সাফল্য, কারণ এটি কেবল ভারতের নিরাপত্তা বাড়ায় না, বরং পাকিস্তানকেও এই বার্তা দেয় যে ভারত তার নিরাপত্তা বিষয়ে কোনও ধরনের ঢিলেঢালাপনা করবে না। ভারতীয় সেনার এই কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে সঠিক এবং পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল, যেখানে এয়ার স্ট্রাইক, নৌবাহিনীর সহায়তা এবং সেনাবাহিনীর সাথে মিলে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে।
এই অভিযানের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবিরত অভিযানের তত্ত্বাবধান করেছিলেন এবং সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এই কর্মকাণ্ড ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তিশালী এবং সিদ্ধান্তমূলক শক্তির প্রদর্শন।