ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করার আগে, বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তান সংক্রান্ত উদ্বেগ বিবেচনা করে, DoT লাইসেন্স নিয়মাবলী আরও কঠোর করেছে।
প্রযুক্তি সংবাদ: ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করার আগে, দূরসংযোগ বিভাগ (DoT) সেবা প্রদানকারীদের জন্য নতুন ও কঠোর নিরাপত্তা নিয়ম প্রয়োগ করেছে। এই নতুন নিয়মগুলির প্রভাব Airtel OneWeb, Jio, Starlink এবং Amazon Kuiper-এর মতো প্রধান উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের উপর পড়বে। বিশেষ করে, Starlink-এর জন্য এই নতুন নিরাপত্তা শর্তগুলি সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ সংস্থাটি এখনও পুরানো নিরাপত্তা মান পূরণ করেনি।
DoT কি?
DoT অর্থাৎ Department of Telecommunications (দূরসংযোগ বিভাগ), ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ যা দেশে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা সম্পর্কিত সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিভাগ কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন। কোনও সংস্থা যদি ভারতে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ব্রডব্যান্ড, ফাইবার অপটিক বা উপগ্রহ ইন্টারনেটের মতো সেবা প্রদান করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই DoT থেকে অনুমতি অর্থাৎ লাইসেন্স নিতে হবে।
DoT-এর প্রধান কাজ হলো দেশের দূরসংযোগ সেবা নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং জনগণের জন্য সহজলভ্য করা। এছাড়াও এই বিভাগ এটি নিশ্চিত করে যে কোনও সংস্থা দেশের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করে না। DoT স্পেকট্রাম বণ্টন (যেমন 4G, 5G ব্যান্ড), টেলিযোগাযোগ নীতি তৈরি, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ এবং টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলির তদারকি সহ অনেক কাজ করে।
DoT-এর নতুন কাঠামো
ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা নিয়ে দূরসংযোগ বিভাগ (DoT) নতুন নিরাপত্তা মানদণ্ড প্রকাশ করেছে। এই নতুন নিয়মগুলি কেবল নতুন সেবা প্রদানকারীদের উপর নয়, বরং যারা ইতোমধ্যে লাইসেন্স পেয়েছে তাদের উপরও প্রযোজ্য হবে। Airtel OneWeb, Jio SES, এবং Amazon Kuiper এবং Starlink-এর মতো সংস্থা যারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, তাদের সকলকেই এই নতুন নিয়মগুলি মানতে হবে।
এই নতুন নিরাপত্তা নিয়ম অনুসারে, সেবা প্রদানকারীদের তাদের ব্যবহারকারীদের ডিভাইসগুলির যাচাই করতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে ডেটা অন্য কোনও দেশে প্রেরণ করা হয়নি। এছাড়াও, তাদের গ্রাহকদের প্রকৃত অবস্থান ট্র্যাক করার দায়িত্ব থাকবে। এই সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতের নিরাপত্তা বিবেচনা করে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবাগুলিকে আরও ভালো এবং নিরাপদ করা।
উপগ্রহ ইন্টারনেট সংস্থাগুলির জন্য DoT-এর নতুন নিয়ম
ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করার আগে দূরসংযোগ বিভাগ (DoT) সংস্থাগুলির জন্য নতুন ও কঠোর নিরাপত্তা নিয়ম তৈরি করেছে। এই নিয়মগুলির উদ্দেশ্য হল দেশের নিরাপত্তা শক্তিশালী করা এবং এটি নিশ্চিত করা যে কোনও ইন্টারনেট সেবা ভারতের সীমা এবং আইনের লঙ্ঘন করে না।
এই নিয়মগুলি সেই সকল সংস্থার উপর প্রযোজ্য হবে যারা ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করতে চায়, যেমন Airtel OneWeb, Jio, Amazon Kuiper এবং Starlink
- ব্যবহারকারী টার্মিনালের যাচাই প্রয়োজন: এখন কোনও উপগ্রহ ইন্টারনেট সংস্থা তখনই সেবা দিতে পারবে যখন তারা তাদের ব্যবহারকারী টার্মিনাল অর্থাৎ ডিভাইসটি পুরোপুরি যাচাই করবে।
অর্থাৎ, যদি কোন ব্যক্তির কাছে কোনও অ-নিবন্ধিত বিদেশী ডিভাইস থাকে, তবে সে নিবন্ধন ছাড়া ভারতে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে না। - রিয়েল-টাইম অবস্থান ট্র্যাকিং: সমস্ত সংস্থাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ব্যবহারকারীদের রিয়েল-টাইম অবস্থান (লাইভ অবস্থান) ট্র্যাক করা যায়।
যদি কোনও নিরাপত্তা সংস্থা এই তথ্যের চাহিদা জানায়, তবে সংস্থাকে ব্যবহারকারীর স্থির বা মোবাইল টার্মিনালের সঠিক অবস্থান (দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশ) জানাতে হবে। - ব্যবহারকারী ডেটা সম্পূর্ণরূপে ভারতেই থাকবে: DoT স্পষ্ট করে বলেছে যে সংস্থাগুলি ভারতীয় ব্যবহারকারীদের ডেটা দেশের বাইরে পাঠাতে পারে না। এর অর্থ হল প্রতিটি সংস্থাকে এটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা ভারতে ব্যবহারকারীদের ডেটা কেবলমাত্র ভারতের ভিতরেই প্রক্রিয়া এবং সংরক্ষণ করবে। ডেটা গোপনীয়তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রতিবন্ধী এলাকায় সেবা বন্ধ করতে হবে: যদি কোনও ব্যবহারকারী এমন এলাকায় চলে যায় যা 'অনঅথোরাইজড' অর্থাৎ প্রতিবন্ধী (যেমন সীমান্ত এলাকা, সেনাবাহিনীর এলাকা ইত্যাদি), তবে সংস্থাকে তার সেবা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে সংবেদনশীল এলাকায় অনুমতি ছাড়া কোনও নেটওয়ার্ক কার্যকলাপ হয় না।
- সীমান্তের কাছে বিশেষ নজরদারি অঞ্চল তৈরি হবে: ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে একটি বিশেষ নজরদারি অঞ্চল তৈরি করা হবে। এই অঞ্চলে কোনও উপগ্রহ সেবার কার্যকলাপের উপর বিশেষ নজরদারি রাখা হবে। এই সিদ্ধান্ত বিশেষ করে পাকিস্তান এবং চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে নিরাপত্তা হুমকি বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে।
- ২৯ টিরও বেশি নতুন নিয়ম: মোট মিলিয়ে, DoT উপগ্রহ ইন্টারনেট সংস্থাগুলির জন্য ২৯ থেকে ৩০ টি নতুন নিরাপত্তা মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। এই নিয়মগুলি অনুসরণ করা প্রতিটি সংস্থার জন্য বাধ্যতামূলক হবে যারা ভারতে ইন্টারনেট সেবা দিতে চায়। এই সিদ্ধান্ত সমস্ত স্টেকহোল্ডার এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির পরামর্শের পর নেওয়া হয়েছে।
Starlink ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
Starlink, যা এলন মাস্কের সংস্থা, ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই সংস্থাটি অত্যন্ত দ্রুত ইন্টারনেট গতি প্রদানের দাবি করে, বিশেষ করে সেইসব এলাকায় যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারে না। ভারতের মতো বৃহৎ দেশে Starlink-এর জন্য একটি বিশাল বাজার থাকতে পারে।
কিন্তু এখন সরকার যা নতুন নিরাপত্তা নিয়ম তৈরি করেছে, তা Starlink-এর সেবা চালুতে বিলম্ব ঘটাতে পারে। এই নিয়ম অনুসারে সংস্থাগুলিকে ব্যবহারকারীর অবস্থান জানাতে হবে, ডেটা দেশের বাইরে পাঠাতে হবে না এবং সীমান্তের কাছে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। ভারত সরকার পাকিস্তান এবং চীনের মতো দেশ থেকে হওয়া হুমকি বিবেচনা করে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই Starlink-কে প্রথমে সকল শর্ত পূরণ করতে হবে, তবেই তারা ভারতে তাদের সেবা চালু করতে পারবে।
নতুন নিরাপত্তা নিয়ম কি ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেটকে প্রভাবিত করবে?
হ্যাঁ, সরকার কর্তৃক তৈরি এই নতুন নিরাপত্তা নিয়মগুলি ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবাকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। এই নিয়মগুলি দেশের নিরাপত্তা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তান এবং চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে উদ্বেগ বিবেচনা করে। এই নিয়মগুলির সবচেয়ে বড় প্রভাব Starlink-এর উপর পড়তে পারে, যা এখনও পুরানো নিয়মগুলিও পূরণ করতে পারেনি। এখন তাদের নতুন কঠোর নিয়মগুলিও অনুসরণ করতে হবে, যার ফলে ভারতে তাদের ইন্টারনেট সেবা চালু হতে আরও বিলম্ব হতে পারে।
অন্যদিকে Airtel OneWeb, Jio এবং Amazon Kuiper-এর মতো সংস্থাগুলিকেও এই নিয়মগুলি মানতে হবে, যাতে তারা ভারতে লাইসেন্স পেতে পারে। তাদের ব্যবহারকারী ডেটার নিরাপত্তা, অবস্থান ট্র্যাকিং, সীমান্তের কাছে নজরদারি এবং বিদেশী ডিভাইস শনাক্তকরণ ইত্যাদি সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করতে হবে।