কলকাতায় পথ দুর্ঘটনা: এক্সাইড মোড়ে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারালেন এক মহিলা

কলকাতা: সপ্তাহের প্রথম দিন, সোমবার সকালেই কলকাতার রাস্তায় ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এক্সাইড মোড়ে দুই বাসের রেষারেষির ফলে প্রাণ হারালেন বরাহনগরের বাসিন্দা রেশমি নন্দী (৪৫)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রেশমি দেবী রোটারি সদনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সরকারি বাস ও ২২২ নম্বর রুটের বেসরকারি বাস একে অপরকে ওভারটেক করতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে। সেই সময় বেসরকারি বাসটি রেশমি দেবীকে ধাক্কা মারে। আহত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই দুর্ঘটনার পর বাসটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও পরে শ্যামবাজার থেকে পুলিশ সেটিকে আটক করে এবং চালককে গ্রেপ্তার করে।

একই সকালে আরেক দুর্ঘটনা, স্কুলবাসের চাকায় পিষ্ট বৃদ্ধা

এই এক্সাইড মোড়ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শহরের অন্যপ্রান্ত ওয়েলিংটন মোড়ে ঘটে আরও একটি দুর্ঘটনা। একটি স্কুলবাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধার। পথ নিরাপত্তার অভাবে একের পর এক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে কলকাতার রাস্তায়।

হাওড়াতেও পথের বলি, বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় মৃত্যু

শুধু কলকাতা নয়, রবিবার রাতে হাওড়ার ব্যাঁটরা থানার কদমতলায় ঘটে আরেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গতির এক মোটরবাইক ধাক্কা মারে অর্চনা দত্ত নামে এক মহিলাকে। অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে ফেরার সময় বাড়ির সামনেই মৃত্যু হয় তাঁর। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আড়াল করার অভিযোগ তোলে এবং বিক্ষোভ দেখায়।

প্রশ্নের মুখে পথ নিরাপত্তা, দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছেই

প্রতি বছর পথ নিরাপত্তা নিয়ে নানা সচেতনতামূলক প্রচার হলেও শহরের রাজপথে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। শুধু কলকাতা নয়, জেলার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। শনিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় ঘটে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি দোকানে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে। মুহূর্তের মধ্যে দোকানটি ভেঙে পড়ে, মৃত্যু হয় চারজনের, আহত হন ২০ জন।

একের পর এক দুর্ঘটনা যে শুধুই দুর্ঘটনা, নাকি বেপরোয়া গতির অভ্যাসের নির্মম পরিণতি—সে প্রশ্ন উঠছে বারবার। পথ নিরাপত্তা আইন কি শুধুই নিয়মের খাতায় বন্দি থাকবে, নাকি বাস্তবের রাস্তায় তার প্রয়োগ হবে? এইসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো শহরের প্রতিটি পথচারী ও যাত্রীর নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।