মেরঠ হত্যাকাণ্ড: পুলিশের কাছে মুস্কানের বাবা-মার চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

🎧 Listen in Audio
0:00

মেরঠের চর্চিত সৌরভ হত্যাকাণ্ডে এবার পুলিশ বড় সূত্র পেয়েছে। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মুস্কানের বাবা-মা পুলিশের কাছে চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন।

Meerut Murder Case: মেরঠের ব্রহ্মপুরী থানা এলাকার ইন্দিরানগরে সৌরভ রাজপুত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যখন পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত মুস্কানের বাবা-মা কবিতা রস্তোগী এবং প্রমোদ রস্তোগীকে থানায় ডেকে তাদের জবানবন্দী নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনেই পুলিশের কাছে আবারও সেই কথাই বলেছেন যা তারা আগে হত্যার কথা প্রকাশ করার সময় বলেছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাকি সাক্ষীদের জবানবন্দীও শীঘ্রই নেওয়া হবে এবং এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হচ্ছে।

প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীর হত্যা

তিন মার্চ রাতে সৌরভকে তার স্ত্রী মুস্কান তার প্রেমিক সাহিল শুক্লার সঙ্গে মিলে নির্মমভাবে হত্যা করে। দুজনে মিলে প্রথমে সৌরভকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে এবং তারপর ছুরি দিয়ে তাকে গুঁড়িয়ে হত্যা করে। এর পরেই মৃতদেহটি বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ১৫ টুকরো করে কেটে ফেলে। মাথা এবং দুই হাত আলাদা করে একটি ব্যাগে ভরে সাহিল তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে চার মার্চ দুজনে একটি নীল ড্রাম কিনে এবং সৌরভের মৃতদেহের টুকরোগুলো সেখানে রেখে সিমেন্ট ও ধুলো দিয়ে পুরে দেয়।

হত্যার পর হিমাচল ভ্রমণ

হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর পর মুস্কান এবং সাহিল কোনো অনুতাপ ছাড়াই শিমলা, মানালী এবং কসওলে ঘুরতে যায়। মানালীতে সাহিলের জন্মদিনও উদযাপন করা হয়। ১৭ মার্চ রাতে দুজনে মেরঠ ফিরে আসে এবং পরের দিন ১৮ মার্চ মুস্কান নিজেই তার বাবাকে হত্যার কথা জানায়, যার পরেই এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

মা-বাবার সামনে স্বীকার করল সত্য

পুলিশ মুস্কানের বাবা-মা কবিতা এবং প্রমোদ রস্তোগীর জবানবন্দী নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ১৮ মার্চ সকালে মুস্কান একটি মিথ্যা কাহিনী বানিয়েছিল, কিন্তু যখন তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়, তখন মুস্কান হত্যার কথা স্বীকার করে। মুস্কান প্রথমে সৌরভের ভাই এবং মায়ের উপর অভিযোগ করেছিল, কিন্তু পরে নিজের অপরাধ স্বীকার করে।

জেলে রামায়ণ এবং সংশোধনের চেষ্টা

বর্তমানে মুস্কান এবং সাহিল দুজনেই জেলে বন্দী। মুস্কান জেলে সুন্দরকান্ড পাঠ করছে এবং সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সাহিলও রামায়ণ পড়ছে এবং জেলের খেতে শাকসবজি চাষে সাহায্য করছে। যদিও মুস্কান এখনও সাহিলের সাথে দেখা করতে আগ্রহী এবং বারবার আবেদন করেছে, কিন্তু জেলের নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেখা করার অনুমতি দেওয়া যায়নি।

সৌরভের মা রেনু দেবী দাবি করেছেন যে মুস্কান এবং সাহিলকে আলাদা আলাদা জেলে স্থানান্তরিত করা উচিত, যাতে তারা কোন মানসিক স্বস্তি না পায় এবং আইনি ব্যবস্থা নিরপেক্ষ হয়। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে নিয়ম অনুযায়ীই কারও সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া যায়।

নেশা মুক্তি কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা হবে

জেল অধীক্ষক ডাঃ বীরেশ রাজ শর্মা জানিয়েছেন যে দুই অভিযুক্তের চিকিৎসা এখনও চলছে। তাদের নেশা থেকে মুক্তি দিতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। লন্ডন থেকে ফিরে সৌরভ তার স্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন করতে ভারতে এসেছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারী মুস্কানের এবং ২৮ ফেব্রুয়ারী মেয়ে পিহুর জন্মদিন ছিল। কিন্তু এই আনন্দের মাঝেই মুস্কান এবং সাহিল মিলে এক ভয়াবহ পরিকল্পনা করেছিল। তিন মার্চ রাতে সৌরভকে হত্যা করা হয় এবং তার দেহ ড্রামে সিল করে রাখা হয়।

এসপি সিটি আয়ুষ বিক্রম সিং জানিয়েছেন যে মুস্কান এবং সাহিলের প্রেমের সম্পর্কে সৌরভ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাই তাকে পথ থেকে সরানোর জন্য এত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার প্রস্তুতি মুস্কান আগে থেকেই শুরু করেছিল – সৌরভের মদে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত কোফ্তায় নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়।

Leave a comment