মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) কেরলের রাজনীতিতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে নীলাম্বুর উপনির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিধানসভা আসন ওয়াইনাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং টিএমসি প্রধান মমতা ব্যানার্জী আবারও তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শন করে দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। কেরলের মালপুরম জেলার নীলাম্বুর বিধানসভা আসনে অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পি. ভি. আনোয়ারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র একটি উপনির্বাচনের ঘোষণা নয়, বরং এর মাধ্যমে মমতা কংগ্রেস এবং বাম উভয়কেই তীব্র রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন।
ওয়াইনাদ থেকে মমতার জবাবী আক্রমণ
নীলাম্বুর বিধানসভা আসন ওয়াইনাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, যেখান থেকে সম্প্রতি প্রিয়ঙ্কা গান্ধী ওয়াদ্রা সংসদে প্রবেশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে টিএমসির এখানে নির্বাচনে লড়াই করা একটি পরিকল্পিত কৌশলের অংশ। মমতা ব্যানার্জী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর দল अब কেবলমাত্র বাংলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং জাতীয় পর্যায়ে কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটিগুলিতেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।
পি. ভি. আনোয়ারের টিএমসিতে যোগদান
৫৮ বছর বয়সী পি. ভি. আনোয়ারের বাম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) থেকে পদত্যাগ এবং টিএমসিতে যোগদান নীলাম্বুর উপনির্বাচনকে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। আনোয়ার একজন প্রভাবশালী নেতা এবং এই অঞ্চলে তাঁর শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। তিনি পূর্বেও নীলাম্বুর থেকে বিধায়ক ছিলেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়। আনোয়ারের কংগ্রেস, আইইউএমএল এবং বামদের সাথে যোগাযোগ ছিল, কিন্তু এখন তিনি মমতা ব্যানার্জীর হাত ধরেছেন।
টিএমসি তাঁকে কেবলমাত্র প্রার্থীই নয়, কেরলের রাজ্য সংযোজকও করেছে। এটি ইঙ্গিত করে যে মমতা ব্যানার্জী তাঁকে রাজ্যে দলের বিস্তারের দায়িত্ব দিয়েছেন।
বাম ও কংগ্রেসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
আনোয়ারের টিএমসিতে যোগদানের ফলে কংগ্রেস এবং বাম উভয়েরই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বামদের জন্য এই আঘাত বেশ বড়, কারণ আনোয়ার একসময় তাদের নির্ভরযোগ্য নেতা ছিলেন এবং নীলাম্বুরকে বামদের দুর্গ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিলেন। এখন তিনি যখন বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়েছেন, তখন এলডিএফ-এর জন্য এখানে তাদের আধিপত্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের জন্য এই উপনির্বাচন যশের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ এটি প্রিয়ঙ্কা গান্ধী ওয়াদ্রার সংসদীয় ক্ষেত্রের অংশ। মমতার এখানে প্রার্থী দেওয়া কংগ্রেস নেতৃত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো।
ধর্মীয় ও সামাজিক সমীকরণও গুরুত্বপূর্ণ
নীলাম্বুর মিশ্র জনসংখ্যার একটি অঞ্চল। এখানে মুসলিম, হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় সমান। আনোয়ারের ছবি একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সামাজিকভাবে সক্রিয় নেতার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে আসছেন, যার ফলে তিনি সকল শ্রেণীর সমর্থন পেয়েছেন। তাঁর এই ইমেজ টিএমসির জন্য উপকারী হতে পারে কারণ দলকে এখানে স্থানীয় সমর্থনের প্রয়োজন। আনোয়ার যদি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হন, তাহলে টিএমসি প্রথমবারের মতো কেরলে বিধানসভা আসন পেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী জনসমর্থন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এখন অন্যান্য রাজ্যেও বিস্তারের চেষ্টা করছে। গোয়া, ত্রিপুরা, আসামের পর এখন কেরলের মতো রাজ্যে নজর, যেখানে মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি এবং যেখানে মমতার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। টিএমসির এই কৌশল ভারতীয় রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে আঞ্চলিক দল এখন তাদের রাজ্যের বাইরেও তাদের প্রভাব বিস্তার করছে।