দীপাসারায় সাংসদ জিয়াউর রহমান বর্ক কর্তৃক নকশা অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত ভবনের ঘটনা এখন তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
সম্ভল: দীপাসারায় সাংসদ জিয়াউর রহমান বর্ক কর্তৃক অবৈধভাবে নকশা অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত ভবনের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের গতি কচ্ছপগতির চেয়েও ধীর। নগর পরিকল্পনার বিধি-বিধান উপেক্ষা ও স্পষ্ট লঙ্ঘনের পরও প্রশাসনিক ঢিলেঢালাপনা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০ বার শুনানি স্থগিত হয়েছে, এবং এখন পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ জুন। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন সাধারণ মানুষের অবৈধ নির্মাণ হয়, তখন প্রশাসন সচেষ্ট থাকে, কিন্তু যখন কোন জনপ্রতিনিধির কথা আসে, তখন ফাইলগুলি ধুলোয় মিশে থাকে।
কোথায় প্রশাসনিক ইচ্ছাশক্তি?
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বন্দনা মিশ্র সাংসদ জিয়াউর রহমান বর্ককে নোটিশ জারি করেন। নোটিশে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বৈধ নকশা এবং অনুমোদন সংক্রান্ত নথিপত্র উপস্থাপনের জন্য বলা হয়। কিন্তু আজ, ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কারণ, নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়নি এবং ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় যখন সংশ্লিষ্ট আদালতকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করা হয়েছে যে, সাংসদের পিতা মমলুকুর রহমান বর্কের করা আপিল জেলা আদালত কর্তৃক খারিজ করা হয়েছে।
আইনজীবীদের যুক্তিতে জড়িয়ে পড়েছে ঘটনা
সাংসদের আইনজীবী নঈম কুরেশী আদালতে যুক্তি দিয়েছেন যে, যে ভবনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি জিয়াউর রহমান বর্কের নামে নয়। এছাড়াও বলা হয়েছে যে, এই মামলায় জেলা আদালতে আপিল বিচারাধীন রয়েছে, তাই শুনানি স্থগিত করা উচিত। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে প্রশাসন ও আদালত বারবার পরবর্তী তারিখ দিয়ে যাচ্ছে এবং মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এমন মনে হচ্ছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে কারিগরি কৌশল অবলম্বন করে ব্যবস্থা গ্রহণকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জনতার প্রশ্ন: কি আইন শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জন্য?
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, যখন কোন সাধারণ নাগরিক নকশা অনুমোদন ছাড়াই বাড়ি তৈরি করে, তখনই নগর কর্পোরেশন বা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বুলডোজার চলে যায়। কিন্তু যখন ঘটনাটি কোন সাংসদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে জড়িত থাকে, তখন আইনী প্রক্রিয়ায় সংবেদনশীলতা দেখানো হয়।
জনগণের বক্তব্য, এই দ্বৈত মানদণ্ড ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র উভয়েরই উপহাস করে। সাধারণ মানুষ মাসের পর মাস বিভিন্ন দপ্তরের চক্কর কাটে, অন্যদিকে ক্ষমতার কাছাকাছি ব্যক্তিরা বছরের পর বছর ছাড় পায়।
নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া থেকে আবারও শুনানি স্থগিত
জানা গেছে, সাংসদের পিতা মমলুকুর রহমান বর্ক সম্প্রতি শুল্কসহ ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। এই পদক্ষেপ সম্ভবত ব্যবস্থা এড়ানোর একটি কৌশল হতে পারে। যেহেতু প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদালত পরবর্তী শুনানির তারিখ ৩ জুন নির্ধারণ করেছে।
এখন সকলের দৃষ্টি ৩ জুনের শুনানির উপর। প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ছে যাতে তারা এই ঘটনায় কঠোর ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যদি এবারও শুধুমাত্র তারিখ পাওয়া যায়, তাহলে এই ঘটনা বিচার বিলম্ব ও বিচার অস্বীকারের এক উদাহরণ হিসেবে রূপ নেবে।