বিচারপতি বি. আর. গাভাই: ভারতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি

🎧 Listen in Audio
0:00

বিচারপতি বি. আর. গাভাই ভারতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ গ্রহণ করেছেন। তার পিতা রামকৃষ্ণ সূর্যভান গাভাই ডঃ অম্বেদকরের সাথে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার দায়িত্বকাল ২০২৫ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে।

প্রধান বিচারপতির যাত্রা: বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। এটি কেবলমাত্র তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং দেশের ন্যায়িক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করার মতো। বিচারপতি গাভাইয়ের জীবনের যাত্রা সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির এক অপূর্ব কাহিনী। তিনি প্রথম বৌদ্ধ সিজিআই (Chief Justice of India) এবং ভারতীয় দলিত সম্প্রদায় থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি। তার জীবনের এই চমৎকার যাত্রা জানা সকলের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। আসুন, জেনে নেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত।

বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের প্রাথমিক জীবন

বিচারপতি গাভাইয়ের জন্ম ১৯৬০ সালের ২৪ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের আমরাওয়াতী জেলায়। তার লালন-পালন হয়েছে একটি সাধারণ পরিবারে। আমরাওয়াতীর “ফ্রেজারপুরা” নামক झुग्गी বস্তিতে কেটেছে তার শৈশব। তার পরিবার आর্থিকভাবে দুর্বল ছিল, কিন্তু তার মা-বাবা তাকে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এবং সব পরিস্থিতিতেই তার পাশে ছিলেন। বিচারপতি গাভাইয়ের পিতা, রামকৃষ্ণ সূর্যভান গাভাই, একজন প্রখ্যাত অম্বেদকরবাদী নেতা ছিলেন, যিনি তার রাজনীতি ও সমাজসেবার মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছিলেন।

তার পিতা ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া (গাভাই)-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বিচারপতি গাভাইয়ের পরিবারে শিক্ষা ও সমাজসেবার প্রতি গভীর আন্তরিকতা ছিল, যা তার জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে।

শিক্ষা ও কর্মজীবনের সূচনা

বিচারপতি গাভাইয়ের শিক্ষাজীবনও ছিল সংগ্রামময়। শৈশবে তিনি আমরাওয়াতীর নগরপালিকা স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানে তিনি মারাঠি মাধ্যমে পড়াশোনা করতেন এবং সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি মাটিতে বসে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি বি.কম ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এরপর আইন পড়াশোনার জন্য আমরাওয়াতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

আইন ডিগ্রি পাওয়ার পর, মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিচারপতি গাভাই আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মুম্বাই ও নাগপুরের আদালতে অভ্যাস করে তার ন্যায়িক কর্মজীবনের সূচনা করেন। পরে তিনি বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে সরকারি আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।

ন্যায়পালিকায় পদার্পণ

বিচারপতি গাভাইয়ের ন্যায়িক কর্মজীবনের সূচনা হয় ২০০১ সালে, যখন তাকে বিচারপতি হিসেবে নিযুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২০০৩ সালে তাকে বোম্বে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি করা হয় এবং ২০০৫ সালে তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন। বিচারপতি গাভাইয়ের ন্যায়িক কর্মজীবন তাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ বিচারপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সুপ্রিম কোর্টে তার অবদান তাকে একজন নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষ বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

বিচারপতি গাভাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ রায়

বিচারপতি গাভাইয়ের कार्यकालে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে রাজনীতি, নাগরিক অধিকার এবং সমাজের কল্যাণের সাথে সম্পর্কিত অনেক মামলার উল্লেখ করা যায়। তিনি সেই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন, যা নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং দিল্লির প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়ার মামলায় রায় দিয়েছিলেন। এছাড়াও, তিনি অবৈধ কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (UAPA) এবং মনি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মতো কঠোর আইনের অধীনে গ্রেফতারের পদ্ধতি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন।

তার নেতৃত্বেই সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়াই মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস করা “আইনের শাসন”-এর বিরুদ্ধে। এছাড়াও, বিচারপতি গাভাই অনুসূচিত জাতির সংরক্ষণে সংরক্ষণ প্রদানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন।

বিচারপতি গাভাইয়ের পারিবারিক অবদান

বিচারপতি গাভাইয়ের পরিবারে গভীর রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল। তার পিতা, রামকৃষ্ণ সূর্যভান গাভাই, যিনি সমাজের কল্যাণের জন্য তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন, একজন আদর্শ ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। তার মা-বাবা সবসময় তাকে সমাজসেবা ও ন্যায়ের পথে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। বিচারপতি গাভাইয়ের পিতা ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করেছিলেন এবং তিনি একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে খ্যাত ছিলেন।

বিচারপতি গাভাইয়ের যাত্রা ও তার জীবন দর্শন

বিচারপতি গাভাই সবসময় তার জীবনকে ডঃ ভীমরাও অম্বেদকরের সংগ্রাম ও চিন্তাধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে করেন। তিনি নিজেই বলেছেন যে তার এই যাত্রা সম্পূর্ণরূপে ডঃ অম্বেদকরের প্রচেষ্টার ফল। বিচারপতি গাভাই ২০২৪ সালে এক ভাষণে বলেছিলেন যে, তার মতো একজন ব্যক্তির আমরাওয়াতীর झुग्गी বস্তি থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছানোর কৃতিত্ব ডঃ অম্বেদকরের। তিনি তার কথা “জয় ভীম” ধ্বনি দিয়ে শেষ করেন।

রাহুল গান্ধী ও বিচারপতি গাভাই

বিচারপতি গাভাইয়ের কর্মজীবন কেবলমাত্র ন্যায়পালিকায় তার অবদানের জন্যই নয়, বরং তার নিরপেক্ষতা ও সততা ওজনের জন্যও পরিচিত। ২০২৩ সালে যখন রাহুল গান্ধীর লোকসভা সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়, তখন বিচারপতি গাভাই এ বিষয়ে রায় দিয়ে রাহুল গান্ধীকে দেওয়া সাজা স্থগিত করেন, যার ফলে তার সদস্যপদ পুনঃস্থাপিত হয়।

```

Leave a comment