গুয়াহাটীতে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দুর্ঘটনা: পাইলটের তিনবার ‘মেডে’ কল

🎧 Listen in Audio
0:00

গুয়াহাটীতে বৃহস্পতিবার সংঘটিত ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার আগে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের পাইলট তিনবার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-র সাথে রেডিও যোগাযোগে Mayday! Mayday! Mayday! বলেছিলেন।

গুয়াহাটী: বৃহস্পতিবার দুপুরে, গুয়াহাটীর আকাশে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। দিল্লি থেকে গুয়াহাটী যাওয়ার পথে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট রানওয়ে থেকে অল্প দূরত্বের আগেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই দুর্ঘটনায় বহু পরিবার গভীর শোকে ডুবেছে, কিন্তু এই ঘটনার সাথে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত- দুর্ঘটনার ঠিক আগে পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) কে কোড ওয়ার্ডে তিনবার বলেছিলেন: Mayday! Mayday! Mayday!

এই বাক্যটি শুনতে ছোট হলেও এর পিছনে গুরুত্ব অপরিসীম। এটি এমন একটি শব্দ যা কোন পাইলট কখনোই বলতে চায় না, কারণ এর অর্থ হলো- পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, জীবন বিপন্ন, সাহায্য প্রয়োজন।

Mayday কি? সংকটাপন্ন বিমানের শেষ আহ্বান

Mayday একটি আন্তর্জাতিক জরুরী সংকেত, যা কোন বিমান, জাহাজ অথবা যানবাহন গুরুতর সংকটের সময় রেডিওর মাধ্যমে প্রেরণ করে। এই শব্দটি ইঙ্গিত করে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ক্রু আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এবং তাদের জীবন সরাসরি বিপন্ন।

Mayday শব্দটি তিনবার ক্রমিকভাবে বলা হয় Mayday! Mayday! Mayday! যাতে রেডিওতে অন্যান্য শব্দগুলির মধ্যে এটি স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায় এবং কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়।

গুয়াহাটী দুর্ঘটনার আগে পাইলটের কল

এয়ার ইন্ডিয়ার এই ফ্লাইটটি যখন গুয়াহাটীর সরদার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দরের কাছে পৌঁছায়, তখন আচমকা প্রবল বাতাস এবং দৃশ্যমানতার সমস্যা দেখা দেয়। পাইলট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু রানওয়ে থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে ইঞ্জিনে ত্রুটি এবং পাওয়ার ফেইলিওরের খবর পায়।

সেই মুহূর্তে, যখন সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছিল, পাইলট এটিসিকে অবিলম্বে সংকট সংকেত পাঠায়- Mayday! Mayday! Mayday!

এটিসি অবিলম্বে উদ্ধারকারী দলকে সতর্ক করে, কিন্তু উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই বিমানটি মাটিতে আঘাত করে। এই দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী আহত হয়, এবং দুই যাত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে।

Mayday শব্দের উৎপত্তি: ফ্রান্স থেকে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কল

Mayday শব্দের সূচনা হয় ১৯২৩ সালে। এই ধারণার পিছনে ব্যক্তি ছিলেন ফ্রেডেরিক মকফোর্ড, যিনি লন্ডনের ক্রয়ডন বিমানবন্দরে একজন জ্যেষ্ঠ রেডিও কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সময় লন্ডন থেকে প্যারিসের মধ্যে উড়ানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, এবং মকফোর্ডের এমন একটি শব্দ প্রয়োজন ছিল যা ইংরেজি এবং ফরাসি উভয় ভাষাতেই বোঝা যাবে।

তিনি Mayday শব্দটি বেছে নেন, যা ফরাসি শব্দ m’aidez (আমাকে সাহায্য করো) থেকে অনুপ্রাণিত। এর উচ্চারণ মে-ডে এর মতো, যা রেডিওতে শোনা সহজ এবং স্পষ্ট ছিল।

১৯৪৮ সালে এই শব্দটিকে আন্তর্জাতিকভাবে আনুষ্ঠানিক সংকট কল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

Mayday কলের প্রোটোকল

যখন কোন পাইলট Mayday কল করে, তখন পরে একটি নির্দিষ্ট ক্রমে তথ্য দেওয়া হয়:

  1. বিমানের নাম এবং ধরণ
  2. কল সাইন (ফ্লাইট নম্বর)
  3. জরুরী অবস্থার প্রকৃতি
  4. বর্তমান অবস্থান বা শেষ জানা অবস্থান
  5. বর্তমান আবহাওয়ার অবস্থা
  6. কত ইন্ধন বাকি আছে
  7. কতজন লোক বিপন্ন
  8. কিসের সাহায্য প্রয়োজন

এই বিবরণের ভিত্তিতে এটিসি বা অন্যান্য উদ্ধারকারী দল তাদের কৌশল তৈরি করে।

Mayday Relay কি?

কখনও কখনও সংকটাপন্ন বিমান যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে অথবা তার রেডিও ব্যবস্থা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে কাছ দিয়ে যাওয়া অন্য কোন ফ্লাইট তার পক্ষ থেকে Mayday কল প্রেরণ করে। এটিকে বলা হয় Mayday Relay। এই ব্যবস্থাটি তখন কার্যকর হয় যখন একটি বিমান সম্পূর্ণরূপে সংকটাপন্ন কিন্তু যোগাযোগের বাইরে।

আইনি এবং সামাজিক প্রভাব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশে Mayday-এর ভুল ব্যবহার গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হয়। সেখানে যদি কেউ মিথ্যা জরুরী কল করে, তাহলে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা ভোগ করতে হতে পারে।

এই ধরণের কলগুলি কেবল উদ্ধার সংস্থানের অপচয় করে না, বরং প্রকৃতপক্ষে সংকটে আটকে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্যে বিলম্ব ঘটায়।

ভারতীয় বিমান পরিবহনে Mayday-এর উদাহরণ

ভারতেও আগে Mayday কলের উদাহরণ দেখা গেছে। ২০১৯ সালে, একটি বেসরকারি জেট বিমান মুম্বাই বিমানবন্দরে অবতরণের আগে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে Mayday কল করেছিল। একই বছর একটি ইন্ডিগো বিমান বেঙ্গালুরুতে হঠাৎ প্রযুক্তিগত ত্রুটির পর Mayday কল করে জরুরি অবতরণ করেছিল।

এই ধরনের ঘটনাগুলি দেখায় যে এটি একটি বাস্তব এবং কার্যকর ব্যবস্থা যা সংকটের সময় জীবন বাঁচাতে পারে।

কেন পাইলটদের Mayday বলা প্রয়োজন?

অনেক সময় পাইলটরা শেষ সময় পর্যন্ত প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি নিজেদের মেরামত করার চেষ্টা করে। কিন্তু যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন Mayday কল করে সাহায্য চাওয়া তাদের দায়িত্ব হয়ে ওঠে।

এই কল:

  • উদ্ধার দলকে আগে থেকে প্রস্তুত থাকার সুযোগ দেয়
  • বিমানবন্দরকে রানওয়ে খালি করার এবং অগ্নি নির্বাপক দল প্রস্তুত করার সময় দেয়
  • যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে

গুয়াহাটী দুর্ঘটনার পরের অবস্থা

গুয়াহাটী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অগ্নি নির্বাপক দল, অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসা দল মোতায়েন করা হয়। DGCA এবং AAIB (Aircraft Accident Investigation Bureau) তদন্ত শুরু করেছে।

Mayday কলের অডিও রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে যাতে বোঝা যায় পাইলট কী পরিস্থিতিতে এই কল করেছিলেন এবং এই সময়ে কি কোন সাহায্যে বিলম্ব হয়েছিল।

```

Leave a comment