গুজরাটের রাজনীতিতে কংগ্রেস আবারও পুরোনো পথে পা বাড়াচ্ছে, এমন এক পথ যা ১৯৮৫ সালের পর থেকে দলকে ক্ষমতার অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে রাহুল গান্ধীর জাতিগত জনগণনা কৌশলকে কেন্দ্র করে গুজরাট ইউনিটে নীরব আন্দোলন দেখা যাচ্ছে।
Congress Gujarat Adhiveshan 2025: আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের দুদিনব্যাপী জাতীয় অধিবেশন দলীয় কর্মী ও নেতাদের মধ্যে একদিকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বয়ে এনেছে, অন্যদিকে উদ্বেগ ও কৌশলগত মতবিরোধের ঢেউও সৃষ্টি করেছে। এর প্রধান কারণ হল রাহুল গান্ধীর জাতিগত জনগণনা-কেন্দ্রিক কৌশল, যাকে তিনি এখন কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরছেন।
জাতীয় অধিবেশন থেকে বেড়ে ওঠা উদ্বেগ
আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত দুদিনব্যাপী অধিবেশনে উৎসাহ বৃদ্ধির চেষ্টা অবশ্যই করা হয়েছিল, কিন্তু জাতিগত জনগণনা সংক্রান্ত প্রস্তাব আসার সাথে সাথেই রাজ্যের নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল। এটি সেই গুজরাট যেখানে কংগ্রেস ১৯৮৫ সালে KHAM (ক্ষত্রিয়, হরিজন, আদিবাসী, মুসলিম) সমীকরণের সাহায্যে বিরাট জয়ের পর ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু এই একই সমীকরণ পরবর্তী নির্বাচনে বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায় এবং দল মাত্র ৩৩টি আসনে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
রাহুলের কৌশল ও গুজরাটের বাস্তবতা
আজ যখন রাহুল গান্ধী OBC, দলিত, আদিবাসী ও মুসলিম ভোটারদের এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করছেন, তখন গুজরাট কংগ্রেসের অনেক নেতা এটিকে রাজনৈতিক আত্মঘাতী হিসেবে দেখছেন। একজন জ্যেষ্ঠ পদাধিকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রাহুল গান্ধীকে গুজরাটের জটিল সামাজিক গঠনকে উপেক্ষা করা উচিত ছিল না। KHAM-এর ইতিহাস সবার সামনে রয়েছে।
বিজেপির শক্তিশালী আধিপত্য, কংগ্রেসের জটিল চ্যালেঞ্জ
গুজরাটে বিজেপি আজ কেবল সরকার নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০২২ সালে বিজেপি রেকর্ড ১৫৬টি আসন জিতেছে, এবং এর বেশিরভাগ আসনই সেই OBC, দলিত ও আদিবাসী ভোটারদের সমর্থনের মাধ্যমে এসেছে, যাদের কংগ্রেস তাদের নতুন কৌশলের মাধ্যমে আকর্ষণ করতে চায়। কিন্তু বিজেপি কেবল প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, তারা এই শ্রেণিগুলিকে ক্ষমতা ও সংগঠন উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিনিধিত্ব দিয়ে তাদের আধিপত্য আরও শক্তিশালী করেছে।
জাতিগত কার্ড: কংগ্রেসের জন্য সুযোগ নাকি আবার ধোঁকা?
জাতিগত জনগণনা এমন একটি বিষয় যা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে রাজনৈতিক লাভ দিতে পারে, কিন্তু গুজরাটের রাজনীতিতে এটি আবেগগত মেরুকরণ ও সামাজিক প্রতিরোধের কারণ হতে পারে। কংগ্রেস যদি ২০২৭ সালে এই বিষয়টিতেই নির্বাচনে অবতরণ করে, তাহলে তারা আবার তাদের পুরোনো ক্ষত খুলে ফেলার মতো পদক্ষেপ নেবে।
দলীয় লাইন থেকে সরে গিয়ে যদিও কেউ খোলাখুলি ভাবে কিছু বলছে না, তবে গুজরাট কংগ্রেসে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে যে জাতিভিত্তিক রাজনীতির চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থানীয় সংগঠন, শক্তিশালী নেতৃত্ব ও উন্নয়ন-ভিত্তিক আলোচনা। একজন নেতার সরাসরি মন্তব্য ছিল, 'আমরা শুধু ঘোষণা করছি, আর বিজেপি এই সম্প্রদায়গুলিকে স্থানীয়ভাবে সংযুক্ত করে রেখেছে।' কংগ্রেসকে ঘোষণার চেয়ে বেশি স্থানীয়ভাবে কাজ করতে হবে।