বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা: ইউনুস, আমেরিকা ও মিয়ানমারের কৌশলগত খেলা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা: ইউনুস, আমেরিকা ও মিয়ানমারের কৌশলগত খেলা
সর্বশেষ আপডেট: 12-04-2025

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন রাজনীতিতে যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ অশান্তির ইঙ্গিত নয়, বরং ভারতের মতো প্রতিবেশী ও কৌশলগত অংশীদারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিরতা আবারও ভূ-রাজনৈতিক হিসেবের শিকার হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। একসময় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ও দারিদ্র্য উन्मূলনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ ইউনুস এখন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েছেন। প্রশ্ন কেবল তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতার নয়, বরং সেই গভীর এজেন্ডার যা আমেরিকার কৌশলগত অংশ হিসেবে "অপারেশন মিয়ানমার" নামে সামনে এসেছে।

মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন কাঠামো কাজ করছে, তা কেবলমাত্র ক্ষমতার স্থান পূরণের জন্য নয়, বরং মিয়ানমার সীমান্তে আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থ সাধনের মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ইউনুসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি এই উদ্বেগকে আরও গভীর করে তুলেছে যে, ইউনুস একজন গণতান্ত্রিক নেতা নাকি পশ্চিমা স্বার্থের পুতুল?

নির্বাচনের বদলে টালবাহানার রাজনীতি

২০২৪ সালের আগস্টে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে ৯০ দিনের মধ্যে স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন ইউনুস নিজেই বলছেন যে নির্বাচন ২০২৬ সালের শুরু পর্যন্ত সম্ভব নয়। এতে বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র মধ্যে রোষ জেগে উঠেছে। তারা নির্বাচনের বিলম্বকে জনমতের হত্যা বলে অভিহিত করেছে।

আমেরিকা কি তৈরি করছে ‘কৌশলগত সুড়ঙ্গ’?

অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি ক্ষমতার আদান-প্রদান নয়, বরং একটি কৌশলগত 'বেস ক্যাম্প' স্থাপন। আমেরিকার সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফর এবং রাখাইন সীমান্তে বাংলাদেশী সামরিক প্রস্তুতির খবরাখবর এই বিষয়টির পুষ্টি করে যে, আমেরিকা মিয়ানমারের দিকে তার সামরিক প্রভাব বিস্তার করার জন্য বাংলাদেশের ভূমি এবং সরকার, উভয়কেই ব্যবহার করতে চায়।

ইউনুস সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে বাংলাদেশের ‘রক্ষাকর্তা’ ও ‘একমাত্র বিকল্প’ বলে প্রচারণা শুরু করেছে। এটি গণতন্ত্রের সেবা নয়, বরং ক্ষমতার দীর্ঘ খেলা চালানোর পদ্ধতি বলে মনে হয়। এই বর্ণনাকে উসকে দিচ্ছে সেই আমেরিকার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও সংস্থাগুলি যারা আগে শেখ হাসিনাকে ‘নিরঙ্কুশ’ বলে অভিহিত করতে কোনও দ্বিধা করেনি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাকি কৌশলগত পুতুল?

আশ্চর্যের বিষয় হল, আমেরিকা, যা হাসিনা সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলে, এখন এই অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের অসাংবিধানিকতা ও নির্বাচনের বিলম্ব নিয়ে একটা শব্দও বলছে না। কি এই নীরবতা এই বিষয়টির প্রমাণ যে বর্তমান কাঠামো তাদেরই সৃষ্টি? এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠে, কি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সত্যিই মোহাম্মদ ইউনুসের হাতে নিরাপদ আছে, নাকি তিনি কেবলমাত্র একজন চরিত্র যাকে মিয়ানমারে আমেরিকার সামরিক বিস্তারের জন্য সামনে আনা হয়েছে?

এখন ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির জন্যও সতর্কতা অবলম্বন করার সময়। কারণ এটি কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সুরক্ষা ও স্থিরতার সাথে জড়িত।

Leave a comment