ED-এর অভিযান: রাজস্থানে ২৭০০ কোটি টাকার মনি লন্ডারিংয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে

🎧 Listen in Audio
0:00

রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা (প্রয়োগ নির্দেশালয় - ED) রাজস্থানে আবারও বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে মনি-লন্ডারিংয়ের এক চাঞ্চল্যকর মামলায় ২৭০০ কোটি টাকার লেনদেনের কারসাজির কথা প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া অভিযানটি রাত পর্যন্ত চলে, যেখানে জয়পুর, জোধপুর, উদয়পুর এবং বিলওয়ারা সহ রাজ্যের চারটি প্রধান শহরের বহু স্থানে অভিযান চালানো হয়। এছাড়াও, গুজরাট এবং দিল্লিতেও ২৪টি স্থানে একযোগে অভিযান চালানো হয়।

ED সূত্রের মতে, এই মামলাটি শেল কোম্পানি, হাওয়ালা নেটওয়ার্ক এবং বেনামী সম্পত্তির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত। অভিযানের সময় বহু দলিল, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং ডিজিটাল তথ্য জব্দ করা হয়েছে, যা আরও উন্মোচনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে।

অভিযানের সূচনা ও কার্যকলাপের পরিধি

সূত্রের মতে, প্রয়োগ নির্দেশালয় গত কয়েক মাস ধরে একটি সিন্ডিকেটের উপর নজর রাখছিল, যারা ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করার কাজ করছিল। গোপন তদন্ত এবং তথ্য পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে ED-এর দলগুলি বিভিন্ন শহরে একযোগে অভিযান শুরু করে।

  • জয়পুর: মালবিয় নগর, সিভিল লাইন্স এবং টোঙ্ক রোডে অবস্থিত বহু ব্যবসায়ী ও রিয়েল এস্টেট ফার্মের অফিস সিল করা হয়।
  • জোধপুর: এমএনআইটি এলাকা এবং পাল রোডে দুটি ব্রোকার হাউস এবং একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের ফার্মে অভিযান চালানো হয়।
  • উদয়পুর: খনি ও হোটেল ব্যবসার সাথে জড়িত কিছু স্থানের তল্লাশি করা হয়।
  • বিলওয়ারা: টেক্সটাইল ব্যবসার সাথে জড়িত একজন বড় ব্যবসায়ীর বাড়ি এবং কারখানায় একযোগে অভিযান চালানো হয়।

হাওয়ালা, ক্রিপ্টো এবং ভুয়া বিলিংয়ের ব্যবহার

ED-এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এই মনি-লন্ডারিং নেটওয়ার্কটি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করছিল। হাওয়ালা চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা দেশের বাইরে পাঠানো হত। কিছু ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেনের সন্দেহ রয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেন গোপন রাখার জন্য বিপুল পরিমাণে ভুয়া বিলিং এবং GST চালান ব্যবহার করা হত। শেল কোম্পানিগুলি দিল্লি এবং গুজরাটে নিবন্ধিত ছিল, কিন্তু তাদের পরিচালনা রাজস্থান থেকে হত।

২৪টি স্থানে একযোগে অভিযান

গুজরাটের আহমেদাবাদ, সুরাট এবং বড়োদরা শহরে ED-এর দলগুলি সক্রিয় ছিল, যেখানে হাওয়ালা এজেন্ট, গয়না ব্যবসায়ী এবং ক্রিপ্টো সংক্রান্ত দুইজন বিশেষজ্ঞের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। দিল্লিতে সাউথ এক্সটেনশন এবং করোল বাগ এলাকায় দুই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের অফিসে তল্লাশি করা হয়। মোট ২৪টি স্থানে অভিযান চালানো হয়, যেখানে দলিলপত্রের সাথে সাথে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, হার্ড ড্রাইভ এবং ব্যাংকিং পাসবুক জব্দ করা হয়।

রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য

ED-এর এই অভিযান রাজস্থানের রাজনীতিতেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কিছু ব্যবসায়ীর রাজনৈতিক যোগাযোগেরও তদন্ত চলছে, যা আগামী দিনে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে। বিরোধী দলগুলি অভিযানের সমর্থন করেছে, যদিও কিছু স্থানীয় নেতা এটিকে রাজনৈতিক প্রেরণাপ্রাপ্ত বলে অভিহিত করেছে। ED কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এই তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

জব্দকৃত দলিলপত্র এবং ডিজিটাল প্রমাণের ফরেনসিক পরীক্ষার পর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। এই মনি-লন্ডারিং সিন্ডিকেটের সাথে আরও নাম শীঘ্রই প্রকাশিত হতে পারে। প্রয়োগ নির্দেশালয়ের এই অভিযান কেবলমাত্র রাজস্থানেই নয়, দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a comment