রবিবার, হরিয়ানার রোহতক শহরে এক অসাধারণ ও আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেল, যখন ২২ বছর বয়সী এক যুবতী সাংসারিক মোহ-মায়া ত্যাগ করে জৈন সাধ্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
চণ্ডীগড়: রবিবার, হরিয়ানার রোহতক শহরে এক অনন্য ও হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য দেখা গেল, যখন ২২ বছর বয়সী এক যুবতী সাংসারিক মোহ-মায়া ত্যাগ করে জৈন সাধ্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই পদক্ষেপ কেবল তার পরিবারের জন্যই নয়, সমগ্র সমাজের জন্যও অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছে। যুবতী তার ভাইদের শেষবারের জন্য রাখি বেঁধে দিলেন এবং এই পবিত্র উপলক্ষে তিনি তার কেশ ক্ষুরিত করলেন।
এইসাথে তিনি নতুন নাম গ্রহণ করলেন এবং আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে অগ্রসর হলেন। এই অনুষ্ঠানটি বেশ আবেগঘন ছিল, যাতে পরিবারের সদস্য এবং আশেপাশের লোকজন অংশগ্রহণ করেছিলেন।
৬ ঘন্টা স্থায়ী দীক্ষা অনুষ্ঠান, আবেগের সাগর উচ্ছ্বাসিত
শহরের একটি জৈন স্থানকে দীক্ষা অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রায় ৬ ঘন্টা স্থায়ী ছিল। এই অনুষ্ঠানে শত শত ভক্ত, জৈন আচার্য, পরিবারের সদস্য এবং নগরবাসী উপস্থিত ছিলেন। যুবতী জৈন ধর্মের দীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রথমে ভাইদের রাখি বেঁধে দিলেন এবং তারপর তার কেশ ত্যাগ করে সাংসারিক জীবন থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন।
নাম বদল, পরিচয় বদল – এখন সাধ্বী ‘সিদ্ধপ্রজ্ঞা’
দীক্ষা গ্রহণ করে যুবতী তার পূর্ববর্তী নাম ত্যাগ করে ‘সিদ্ধপ্রজ্ঞা’ নাম গ্রহণ করলেন। এখন তিনি আর কোনও সম্পর্কের পরিচয় ধারণ করবেন না, কোনও সাংসারিক সুখের সাথে জড়িত থাকবেন না। আচার্যের নির্দেশনায় তাকে জৈন সাধ্বী হওয়ার সকল প্রতিজ্ঞা করানো হয়। "আমি আত্ম-শুদ্ধি এবং মোক্ষের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য এই জীবন বেছে নিয়েছি," – দীক্ষার আগে সিদ্ধপ্রজ্ঞা বলেছিলেন।
রাখির শেষ বন্ধন: ভাই-বোনের আবেগঘন মুহূর্ত
সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তটি তখন আসে যখন সিদ্ধপ্রজ্ঞা তার দুই ছোট ভাইকে শেষবারের জন্য রাখি বেঁধে দেন। ভাইদের চোখে জল ছিল, কিন্তু বোনের সিদ্ধান্তে গর্বও প্রতিফলিত হচ্ছিল। মা-বাবাও আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছেন, "মেয়েটি যে পথ বেছে নিয়েছে সেটি কঠিন, কিন্তু মহানও। এই ত্যাগ আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।" সিদ্ধপ্রজ্ঞা গত দুই বছর ধরে জৈন ধর্মীয় প্রবচন, তপস্যা এবং সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি সন্ন্যাসের সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের বিরোধ সত্ত্বেও তিনি তার সংকল্পে অটল ছিলেন। অবশেষে যখন তিনি তার ইচ্ছার দৃঢ়তা প্রমাণ করেন, তখন পরিবার তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে আশীর্বাদ করে।
সমাজে প্রশংসা এবং সমর্থন
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। স্থানীয় জৈন সমাজের প্রধানরা বলেছেন যে আজকের ভৌতিক যুগে যখন যুবকরা বিভ্রান্তির পথে যাচ্ছে, তখন এক যুবতীর ত্যাগের দিকে অগ্রসর হওয়া সমাজকে নতুন দিক দান করবে। এটি কেবল একটি দীক্ষা নয়, একটি বিপ্লব – যা যুবকদের আত্ম-শৃঙ্খলা, সংযম এবং মোক্ষের অনুপ্রেরণা দেয়।
দীক্ষার পর সাধ্বী সিদ্ধপ্রজ্ঞাকে আচার্যশ্রীর তত্ত্বাবধানে একটি জৈন স্থানকে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি ভবিষ্যতে ধর্মের অধ্যয়ন, তপস্যা এবং প্রবচন করবেন। এখন তার জীবন ব্রত, সংযম, তপস্যা এবং মৌন সাধনার সাথে চলবে।