ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ট্যারিফ ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করেছেন। এর ফলে ভারতের ৩৮,০০০ কোটি টাকার মেটাল রপ্তানি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ভারত সরকার WTO কে এর বিষয়ে অবহিত করেছে।
ট্রাম্প ট্যারিফ: আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর ট্যারিফ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা ভারতের জন্য এক বড় ধাক্কা হতে পারে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর প্রতিবেদনের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের মেটাল খাতের প্রায় ৩৮,০০০ কোটি টাকা (৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের রপ্তানি প্রভাবিত হতে পারে। এই সংবাদ ব্যবসায়িক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এবং সকলের দৃষ্টি এখন ভারত সরকারের পরবর্তী কৌশলের উপর নির্ভরশীল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত কী?
৩০ মে ২০২৫ তারিখে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে আমেরিকায় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর আরোপিত ট্যারিফ ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করা হবে। এই নতুন নিয়ম ৪ জুন ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে এটি আমেরিকার "জাতীয় নিরাপত্তা" শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয়। তাঁর মতে, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য এই পদক্ষেপ অপরিহার্য।
ভারতের উপর এর কী প্রভাব পড়বে?
ভারত ২০২৫ অর্থবছরে আমেরিকাকে প্রায় ৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম সম্পর্কিত পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে ৫৮৭.৫ মিলিয়ন ডলার লোহা ও ইস্পাত, ৩.১ বিলিয়ন ডলার লোহা বা ইস্পাত দিয়ে তৈরি সামগ্রী এবং ৮৬০ মিলিয়ন ডলার অ্যালুমিনিয়াম পণ্য অন্তর্ভুক্ত। এখন আমেরিকায় এর উপর ৫০% ট্যারিফ আরোপ করা হলে ভারতীয় পণ্য সেখানে ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
এর ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা দুর্বল হবে এবং রপ্তানিতে হ্রাস পেতে পারে। এটি বিশেষ করে সেসব কোম্পানির জন্য উদ্বেগজনক যারা আমেরিকাকে তাদের প্রধান বাজার হিসেবে দেখে।
ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া
ভারত সরকার এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) কে জানিয়ে দিয়েছে এবং বলা হচ্ছে তারা এর প্রতিরোধমূলক কৌশল প্রণয়ন করছে। ভারত তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সকল বিকল্পের উপর বিবেচনা শুরু করেছে, যার মধ্যে WTO-তে অভিযোগ দায়ের করা এবং বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনা অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ভারতীয় মেটাল খাতকে এই সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী কৌশল তৈরি করতে হবে।
GTRI প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে?
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) এই সিদ্ধান্তকে কেবল ব্যবসার জন্য ক্ষতিকরই নয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকারক বলে মনে করে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়। বর্তমানে যখন সমগ্র বিশ্ব সবুজ প্রযুক্তি ও পরিষ্কার শক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জের লক্ষ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। GTRI মনে করে আমেরিকার এই "আমেরিকা ফার্স্ট" অর্থাৎ 'অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী' মনোভাব বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ উভয়ের জন্যই উদ্বেগের বিষয়।