কেন্দ্রীয় উপভোক্তা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (CCPA) ডিজিটাল প্রতারণা এবং উপভোক্তা প্রতারণামূলক ‘ডার্ক প্যাটার্ন’ ডিজাইনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। CCPA সংস্থাগুলিকে তাদের রিপোর্টে স্বঘোষণা করার জন্যও বলেছে যে তাদের প্ল্যাটফর্মে কোনও বিভ্রান্তিকর বা প্রতারণামূলক নকশা নেই।
নয়াদিল্লি: ডিজিটাল বাজারে উপভোক্তাদের প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত ‘ডার্ক প্যাটার্ন’ নকশা কৌশলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় উপভোক্তা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (CCPA) কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। দেশে বর্ধমান অনলাইন ব্যবসার মধ্যে উপভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য CCPA সমস্ত ই-কমার্স সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা তাদের ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপে ব্যবহৃত ডার্ক প্যাটার্নের তিন মাসের মধ্যে স্ব-অডিট করবে। সাথে সাথে সংস্থাগুলিকে এই বিষয়ে স্বঘোষণা (সেল্ফ ডিক্লেয়ারেশন) করতে হবে যে তাদের প্ল্যাটফর্মে কোনও বিভ্রান্তিকর নকশা নেই।
এই উদ্যোগটি উপভোক্তা বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক গঠিত যৌথ কার্যকরী গোষ্ঠী (Joint Working Group - JWG)-এর সুপারিশ এবং কঠোর নির্দেশিকার উপর ভিত্তি করে শুরু হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল ডিজিটাল বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং উপভোক্তাদের বিভ্রান্তিকর কৌশল থেকে রক্ষা করা।
ডার্ক প্যাটার্ন: প্রতারণার লুকানো কৌশল
ডার্ক প্যাটার্ন প্রযুক্তি হল এমন নকশা যার উদ্দেশ্য উপভোক্তাকে অজান্তেই কোনও পণ্য বা সেবার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে বা অবাঞ্ছিত বিকল্প বেছে নিতে বাধ্য করা। উদাহরণস্বরূপ, এমন নকশা যার ফলে গ্রাহক অজান্তেই অতিরিক্ত চার্জ দিতে শুরু করেন, অথবা কোনও সেবা বাতিল করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানান যে এই প্যাটার্ন গ্রাহকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে এবং ডিজিটাল বাজারকে নিরপেক্ষ প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।
CCPA-এর কঠোর নির্দেশ এবং স্ব-অডিটের দাবী
কেন্দ্রীয় উপভোক্তা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করেছে যে ই-কমার্স সংস্থাগুলিকে এখন তাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে থাকা সমস্ত ডার্ক প্যাটার্ন চিহ্নিত করে তিন মাসের মধ্যে তা অপসারণ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সংস্থাগুলিকে নিজেদের নকশার গভীর মূল্যায়ন করতে হবে এবং এর পরে একটি সরকারী ঘোষণা জারি করতে হবে যে তাদের প্ল্যাটফর্মে কোনও বিভ্রান্তিকর নকশা নেই। CCPA-এর বিশ্বাস যে এতে উপভোক্তা এবং সংস্থাগুলির মধ্যে আস্থা শক্তিশালী হবে এবং ডিজিটাল ব্যবসায় স্বচ্ছতার স্তর বৃদ্ধি পাবে।
যৌথ কার্যকরী গোষ্ঠীর গঠন এবং এর ভূমিকা
ডার্ক প্যাটার্নের বর্ধমান প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উপভোক্তা বিষয়ক বিভাগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক, উপভোক্তা সংগঠন এবং জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে যৌথ কার্যকরী গোষ্ঠী (JWG) গঠন করেছে। এই গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ডার্ক প্যাটার্নের ব্যবহারের উপর নজরদারি করা, সময় সময় রিপোর্ট দেওয়া এবং উপভোক্তাদের সচেতন করা। JWG ডিজিটাল বাজারে বিভ্রান্তিকর এবং অনুচিত অনুশীলন বন্ধ করার জন্য সুপারিশও দেবে।
বড় সংস্থাগুলিকেও সতর্কতা, Uber এবং Ola-কে নোটিশ
গত মাসে কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর সভাপতিত্বে ডার্ক প্যাটার্ন নিয়ে 50 টিরও বেশি প্রধান ই-কমার্স সংস্থার বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকে সচিব রোহিত কুমার সিং স্পষ্ট করেছেন যে ডার্ক প্যাটার্ন কোনও তুচ্ছ সমস্যা নয়, বরং এটি পরিকল্পিতভাবে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।
CCPA এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাব পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা Uber এবং Ola-কেও নোটিশ জারি করা হয়েছে। Uber এবং Ola-এর ‘অ্যাডভান্স টীপ’ বৈশিষ্ট্যটিকে ডার্ক প্যাটার্নের উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে স্পষ্ট তথ্য ছাড়াই অতিরিক্ত টিপস চাওয়া হয়।
উপভোক্তাদের জন্য সচেতনতা অভিযান
CCPA এবং JWG-এরও মনে হয় যে নিয়ম তৈরির সাথে সাথে উপভোক্তাদেরও ডার্ক প্যাটার্নের বিরুদ্ধে সচেতন করা জরুরি। এই দিকে গোষ্ঠী কর্তৃক উপভোক্তা সচেতনতা কর্মসূচী পরিচালনা করা হবে যাতে লোকেরা অনলাইনে কেনাকাটা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে এবং প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারে। ডার্ক প্যাটার্নের বিরুদ্ধে CCPA-এর এই উদ্যোগ ডিজিটাল ব্যবসায় নীতি এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সমস্ত সংস্থা এই দিকে আন্তরিকভাবে কাজ করে তবে উপভোক্তা সুরক্ষা শক্তিশালী হবে এবং ভারতের ই-কমার্স সেক্টরের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। এই পদক্ষেপটি সেই সমস্ত উপভোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে যারা প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে প্রায়শই বিভ্রান্তিকর নকশার শিকার হন।
ভবিষ্যতে আরও কঠোরতার প্রত্যাশা
বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোম্পানিগুলি নিয়ম লঙ্ঘন করে তবে CCPA-এর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে। ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও কঠোর নজরদারি এবং নিয়ম প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই দিকে উপভোক্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় নতুন প্রযুক্তিগত পদ্ধতি এবং নিয়মের উন্নয়ন করছে যাতে ডিজিটাল জগতে উপভোক্তাদের পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়া যায়।