শাহরুখ খানের ‘মনত’: নাম পরিবর্তন, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বিলাসবহুল সৌন্দর্য

🎧 Listen in Audio
0:00

বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের আইকনিক বাংলা ‘মনত’ শুধুমাত্র একটি সম্পত্তি নয়, বরং তার স্বপ্ন ও পরিশ্রমের প্রতীক। শেষ সময়ে খবর এসেছে যে কিং খান তার এই বিলাসবহুল বাংলার ব্যাপক সংস্কারের কাজ চালাচ্ছেন, যার কারণে তিনি এবং তার পরিবার কিছুদিনের জন্য একটি চারতলা ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। কিন্তু জানেন কি, এই ২০০ কোটি টাকার বাংলার নাম এখন পর্যন্ত তিনবার বদল হয়েছে এবং এটি একটি হেরিটেজ প্রোপার্টিও বটে? চলুন, ‘মনত’ সংক্রান্ত কিছু আকর্ষণীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

শুরু থেকেই শাহরুখ খানের ছিল না ‘মনত’!

আজ ‘মনত’ শাহরুখ খানের পরিচয় হয়ে উঠেছে, কিন্তু প্রথম দিকে তিনি এখানে বাস করতেন না। শাহরুখ এবং গৌরী আগে বান্দ্রায় একটি সি-ফেসিং ৩BHK অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। ১৯৯৭ সালে ‘য়েস বস’ ছবির শুটিংয়ের সময় যখন শাহরুখের দৃষ্টি এই বাংলায় পড়ে, তখন তিনি এতে মুগ্ধ হন। যদিও তখন এটি তার বাজেটের বাইরে ছিল, কিন্তু তার পরিশ্রম ও সংগ্রামের ফলে ২০০১ সালে তিনি এটি কিনে নেন এবং তাঁর স্বপ্নের প্রাসাদ গড়ে তোলেন।

তিনবার বদল হয়েছে ‘মনত’র নাম

শাহরুখ খানের বাংলার নাম প্রথমে ছিল ‘ভিলা ভিয়েনা’, যা ছিল গ্যালারিস্ট কেকু গান্ধীর। শাহরুখ যখন এটি কিনে নেন, তখন তিনি এর নাম রাখেন ‘জন্নত’, যার অর্থ স্বর্গ। কিন্তু যখন এই বাংলাটি তার কর্মজীবনের জন্য শুভ বলে প্রমাণিত হয়, তখন তিনি এর নাম বদলে ‘মনত’ রাখেন, যার অর্থ প্রার্থনা। এই নামটি শাহরুখের জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্যকে তুলে ধরে।

‘মনত’ একটি হেরিটেজ প্রোপার্টি

‘মনত’ শুধুমাত্র একটি বিলাসবহুল বাংলা নয়, বরং মুম্বাইয়ের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি ১৯২০-এর দশকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি গ্রেড III হেরিটেজ স্ট্রাকচার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। INTACH (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ)-এর মতে, এই মর্যাদা শুধুমাত্র সেইসব ভবনকে দেওয়া হয় যা ঐতিহাসিক বা স্থাপত্যগত দিক থেকে বিশেষ। যদিও এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা আধুনিক ও বিলাসবহুল রূপে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু ক্লাসিক সাদা কলাম ও রাজকীয় চেহারা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

‘মনত’ শুধু বাংলা নয়, বরং একটি আলাদা জগত

‘মনত’ কোনও বিলাসবহুল প্রাসাদ থেকে কম নয়। এতে একজন সুপারস্টারের জীবনযাত্রাকে সংজ্ঞায়িত করার মতো সবকিছুই আছে—
* টেনিস কোর্ট
* হোম লাইব্রেরি
* সুসজ্জিত জিম
* সুইমিং পুল
* ব্যক্তিগত অডিটোরিয়াম
* বক্সিং রিং
* বিলাসবহুল হোম থিয়েটার, যা বলিউড ক্লাসিকস ‘শোলে’, ‘মুঘল-এ-আজম’ এবং ‘রাম ও শ্যাম’-এর পোস্টার দিয়ে সজ্জিত।

এই বাংলাটি কলা, ভব্যতা ও আধুনিকতার একটি অনন্য সমন্বয়, যা শাহরুখ ও গৌরী বিশেষভাবে ডিজাইন করেছেন।

‘মনত’ কে ডিজাইন করেছেন?

এই চমৎকার বাংলার নকশার কৃতিত্ব শাহরুখের স্ত্রী গৌরী খান এবং স্থপতি কায়েফ ফকিহের। এই বাংলাটিকে রূপান্তর করতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছিল। সম্প্রতি ডিজাইনার রাজীব পारेখ এর সংস্কারের কাজ দেখছেন। এই বাংলাটি ছয়তলা এবং এতে অনেকগুলো বেডরুম, বিলাসবহুল লিভিং স্পেস এবং প্রাইভেট কর্নার রয়েছে।

শাহরুখ কেন বলেছিলেন – ‘সবকিছু বিক্রি করে দেব, কিন্তু মনত নয়’

শাহরুখ খানের জন্য ‘মনত’ শুধু একটি বাড়ি নয়, বরং তার স্বপ্ন ও সংগ্রামের গল্প। একবার শাহরুখ বলেছিলেন—
"যদি কখনও সমস্যা হয়, তাহলে সবকিছু বিক্রি করে দেব, কিন্তু মনত নয়!"

এই বক্তব্যটি দেখায় যে শাহরুখের কাছে এই বাংলাটি কতটা বিশেষ। এটি তার কঠোর পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রতীক, যা তিনি তার নিষ্ঠা ও প্রতিভার মাধ্যমে অর্জন করেছেন।

Leave a comment