নলিনী জয়ন্তের প্রয়াণ দিবস: জীবন ও কর্ম

নলিনী জয়ন্তের প্রয়াণ দিবস: জীবন ও কর্ম
সর্বশেষ আপডেট: 26-12-2024

নলিনী জয়ন্তের প্রয়াণ দিবস ২২শে ডিসেম্বর পালন করা হয়। তিনি ২০১০ সালের ২২শে ডিসেম্বর মুম্বাইতে মারা যান। ১৯২৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন নলিনী জয়ন্ত। ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করেছিলেন। তিনি ছিলেন এমন একজন অভিনেত্রী যিনি ১৯৪০ ও ১৯৫০ এর দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ছয় বছর বয়সে, তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও মুম্বাই স্টেশনের শিশু সভা অনুষ্ঠানে গান গেয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। দশ বছর বয়সে তিনি স্কুলের নাটকে অভিনয় শুরু করেন। তাঁর অভিনয় যাত্রা আরও গতি পায় যখন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "শ্রীমতীজি" নাটকে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন।

নলিনীর মাসি রতন বাঈ ছিলেন একজন বিখ্যাত মারাঠি গায়িকা ও অভিনেত্রী। তিনি নলিনীর জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলেন। নলিনীর পরিবার সিনেমাটোগ্রাফির সাথে যুক্ত ছিল এবং তাঁর তুতো ভাই কুমারসেন সমর্থ জার্মানি থেকে সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনিই নলিনীকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে উৎসাহিত করেছিলেন।

নলিনী জয়ন্তের কর্মজীবন

নলিনী জয়ন্তের চলচ্চিত্র জীবন ১৯৪১ সালে মেহবুব খানের "বেহেন" সিনেমার মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর তিনি বহু সিনেমায় অভিনয় করেন, কিন্তু ১৯৫০ এর দশকে তিনি বিশেষ পরিচিতি পান। "সমাধি" (১৯৫০) এবং "সংগ্রাম" (১৯৫০) এর মতো সিনেমায় তাঁর অভিনয় তাঁকে তারকা খ্যাতি এনে দেয়। এই সিনেমাগুলিতে তিনি নায়কের বিপরীতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন।

নলিনী জয়ন্তকে ১৯৫০ এর দশকে ফিল্মফেয়ার কর্তৃক চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। অভিনেতা দিলীপ কুমার তাঁকে "এখন পর্যন্ত সেরা অভিনেত্রী" হিসাবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি তাঁর কর্মজীবনে "কালা পানি" (১৯৫৮), "মুনিমজি" (১৯৫৫), "রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম" (১৯৫৫) এর মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।

অশোক কুমার, ত্রিলোক কাপুর এবং বলরাজ সাহনির মতো অভিনেতারা নলিনীর সাথে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাদের সাথে তিনি বেশ কয়েকটি হিট ছবিতে কাজ করেন। তাঁর অভিনয়ে স্বাভাবিকতা এবং গভীরতা ছিল, যা তাঁকে অন্যান্য অভিনেত্রীদের থেকে আলাদা করত। ১৯৫৮ সালের "কালা পানি" ছবিতে তিনি সেরা সহ-অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জিতেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও বিবাহ

নলিনী জয়ন্ত ১৯৪০ এর দশকে পরিচালক বীরেন্দ্র দেসাইকে বিয়ে করেন। পরে তিনি অভিনেতা প্রভু দয়ালকে বিয়ে করেন, যাঁর সাথে তিনি বহু সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। তবে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। পরবর্তীকালে তিনি নিজেকে সমাজ থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

২০১০ সালের ২২শে ডিসেম্বর নলিনী জয়ন্ত মারা যান। মুম্বাইয়ের চেম্বুরে তাঁর বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনরা জানান যে তিনি গত কয়েক বছর ধরে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন এবং কারও সাথে তাঁর কোন যোগাযোগ ছিল না। মৃত্যুর তিন দিন পর অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়, যার ফলে মানুষ তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পারে।

নলিনী জয়ন্তের চলচ্চিত্র তালিকা

নলিনী জয়ন্তের অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল:

"নাস্তিক" (১৯৮৩)

"বন্দিশ" (১৯৮০)

"কালা পানি" (১৯৫৮)

"মুক্তি" (১৯৬০)

"আওয়াজ" (১৯৫৬)

"মুনিমজি" (১৯৫৫)

"সলোনি" (১৯৫২)

ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পুরস্কার ও সম্মান

নলিনী জয়ন্ত তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৫৯ সালে "কালা পানি" সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এছাড়াও, ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে একাডেমি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি জানাতেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

নলিনী জয়ন্ত ছিলেন ভারতীয় সিনেমার একজন প্রভাবশালী অভিনেত্রী। নিজের কঠোর পরিশ্রম এবং অসাধারণ অভিনয় দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে এক বিশেষ স্থান তৈরি করেছিলেন। হিন্দি সিনেমাই শুধু নয়, ভারতীয় শিল্পকলা ও সংস্কৃতিতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর সিনেমাগুলি কেবল তাঁর সময়ের দর্শকদেরই আকৃষ্ট করেনি, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর জীবন ও কর্ম আজও সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়ে জীবিত থাকবে।

```

Leave a comment