সারা আলি খান তার ‘কেদারনাথ’ ছবি দিয়ে বলিউডে অভিষেক করেছিলেন। আজ তিনি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও ফিট দেখতে, কিন্তু জানেন কি, ছবির জগতে পা রাখার আগে তার ওজন প্রায় ৯৬ কিলোগ্রাম ছিল?
সারা আলি খানের ওজন কমানো: বলিউডের উদীয়মান ও আকর্ষণীয় অভিনেত্রী সারা আলি খান শুধুমাত্র তার অভিনয় দিয়েই নয়, তার ফিটনেস ট্রান্সফরমেশন দিয়েও সকলের মন জয় করেছেন। আজ সারাকে দেখে কেউই বলতে পারবে না যে একসময় তার ওজন ছিল ৯৬ কিলোগ্রাম। এ ওজনের সাথেও তিনি আত্মবিশ্বাস হারাননি, কিন্তু নিজেকে সুস্থ ও ফিট করার জন্য তিনি একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে সারা প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়ে তার জীবনে সম্পূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন।
সারার ওজন বৃদ্ধির কারণ
সারা আলি খান একবার একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তার ওজন বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল তার খাবারের অভ্যাস। তিনি খাওয়ার প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং বিশেষ করে ফাস্ট ফুড ও অস্বাস্থ্যকর জিনিসপত্র বেশি পছন্দ করতেন। এর সাথে তিনি পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম) রোগেও আক্রান্ত হন, যা একটি হরমোনাল ডিসঅর্ডার এবং এর ফলে ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিজমের উপরও খারাপ প্রভাব পড়ে।
পিসিওডির কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই, কিন্তু সঠিক খাদ্য ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সারাও তার স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন এবং তার জীবনযাত্রায় বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি তার খাওয়া-দাওয়া ও দৈনন্দিন অভ্যাসগুলিকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছিলেন যাতে তার ওজন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
সারার ডায়েট প্ল্যান
সারা আলি খান তার ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় লো কার্ব (কম কার্বোহাইড্রেট) এবং হাই প্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করেছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল যে বেশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই তিনি দিনে শুধুমাত্র একবার, আর তাও দুপুরের খাবার পর্যন্ত, কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ শুরু করেছিলেন। এরপর তার মনোযোগ ছিল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের উপর, যার ফলে পেশী গঠন হয় এবং শরীরের মেটাবলিজম দ্রুত হয়। তার ডায়েট প্ল্যান ছিল প্রায় এমন:
- সকালে: গ্রিন টি অথবা লেবু-মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে দিনের শুরু
- মধ্য-সকাল: পুরো ফল অথবা সালাদ
- দুপুরে: প্রোটিন ও শাক-সবজি সমৃদ্ধ খাবার, যেখানে কার্বোহাইড্রেট সীমিত পরিমাণে থাকবে
- সন্ধ্যায়: গ্রিন স্মুথি, যেখানে ধনে, জিরা, পালং শাক, কাকড়ি ইত্যাদি থাকবে
- রাতে: হালকা ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডাল, পনির অথবা মুরগি
সারা তার শরীরকে ডিটক্স করার জন্য ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর পানীয়, যেমন ধনে-জিরা পানিও পান করতেন, যা মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তার এই ডায়েট প্ল্যান শুধু ওজন কমানোতেই সাহায্য করে না, বরং তার পিসিওডির লক্ষণগুলিও নিয়ন্ত্রণ করে।
সারার ওয়ার্কআউট প্ল্যান: জিম থেকে যোগাসন পর্যন্ত
ওজন কমানো শুধুমাত্র সঠিক ডায়েট দিয়ে সম্ভব নয়, এর জন্য সঠিক ওয়ার্কআউট প্ল্যানও প্রয়োজন। সারা প্রথমদিকে জিমে গিয়ে ওয়ার্কআউট করা কঠিন বলে মনে করেছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি তার অভ্যাসগুলিকে পরিবর্তন করে নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করেছিলেন। তার ওয়ার্কআউট প্ল্যান ছিল:
- কার্ডিও: দৌড়ানো, ট্রেডমিল, সাইক্লিং ইত্যাদি ব্যায়াম, যা ফ্যাট বার্নিং-এর জন্য প্রয়োজনীয়
- স্ট্রেংথ ট্রেনিং: পেশীকে টোন করার এবং শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য ওয়েট ট্রেনিং
- যোগ ও পাইলেটস: নমনীয়তা বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধি এবং চাপ কমানোর জন্য
- সারা জানিয়েছেন যে, প্রাথমিক দিনগুলিতে ওয়ার্কআউট করা কঠিন ছিল, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে তার শরীর ফিট হতে শুরু করে এবং ওজন কমতে শুরু করে।
সারার ট্রান্সফরমেশন: অনুপ্রেরণা ও সাহসের বার্তা
সারার এই ট্রান্সফরমেশন শুধুমাত্র বলিউডের জন্য নয়, তাদের জন্যও অনুপ্রেরণা যারা তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে সংগ্রাম করছে। তার অভিজ্ঞতা বলে যে, পিসিওডি जैसी গুরুতর সমস্যা হোক অথবা মোটা হওয়া, সঠিক চিন্তাভাবনা, সঠিক খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে যেকোনো সমস্যাকে জয় করা সম্ভব। সারা শুধুমাত্র তার ওজন কমিয়েই নয়, নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবেও উন্নত করেছেন। তার এই যাত্রা প্রমাণ করে যে সাফল্যের জন্য ধৈর্য্য, নিষ্ঠা এবং সঠিক নির্দেশনা কতটা প্রয়োজন।