বলিউডের সবচেয়ে গ্ল্যামারাস ও গ্রেসফুল অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম মাধুরী দীক্ষিত আজ তার ৫৮তম জন্মদিন উদযাপন করছেন। ৯০-এর দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন মাধুরী তার দুর্দান্ত অভিনয় ও মনোমুগ্ধকর নৃত্যশৈলী দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। কিন্তু তার এই যাত্রা যতটা সাফল্যে ভরা, ততটাই বিতর্ক থেকেও মুক্ত ছিল না। এক সময় এমনও হয়েছিল যখন তাঁর উপর গানের মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানো এবং সম্পর্কে ফাটল ফেলা যোন্ন্য গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল।
মাধুরী দীক্ষিতের ক্যারিয়ার
১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খলনায়ক’ চলচ্চিত্রে মাধুরী দীক্ষিত সংজয় দত্ত ও জ্যাকি শ্রফের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। ছবিটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হয়েছিল, কিন্তু এর একটি গান ‘চোলি কে পিছে ক্যা হ্যাঁ’ জোরালো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। গানটি নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল— রাস্তা থেকে সংসদ পর্যন্ত বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
গানের কথার জন্য অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠলেও, এর পরেও ছবিটি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল এবং মাধুরীর তারকা মূল্য আরও বেড়ে গিয়েছিল। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুভাষ ঘাইয়ের ‘খলনায়ক’ ছবিটি যদিও ব্লকবাস্টার হয়েছিল, কিন্তু তার চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল এর গান ‘চোলি কে পিছে ক্যা হ্যাঁ’, যা নিয়ে তখন ব্যাপক হইচই পড়ে গিয়েছিল। মাধুরী দীক্ষিতের উপর চিত্রায়িত এই গান নিয়ে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল।
গানে নিষেধাজ্ঞা থেকে চলচ্চিত্রের মুক্তি পর্যন্ত
গানে নিষেধাজ্ঞা জারি করার থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের মুক্তি বন্ধ করার দাবী উঠেছিল। অনেক সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল এবং বিষয়টি আদালতে গিয়েছিল। তবে আদালত এই বলে আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল যে গানে কোনো আপত্তিকর উপাদান নেই যার জন্য এটিকে বন্ধ করা উচিত। তবুও, এই গানটি সেই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও বিক্রি হওয়া গান হয়ে উঠেছিল। ‘চোলি কে পিছে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন অলকা ইয়াগনিক ও ইলা অরুণ, সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল এবং কথা লিখেছিলেন আনন্দ বখশী।
কোরিওগ্রাফার সরোজ খানের নির্দেশনায় মাধুরী দীক্ষিতের পারফরম্যান্স আজও দর্শকদের মনে তাজা। মজার ব্যাপার হল, সব বিতর্কের মাঝেও এই গানের ৯০ লক্ষের বেশি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল এবং অলকা-ইলারা ফিল্মফেয়ারের শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক সিঙ্গার পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ছবিতে মাধুরীর সাথে সংজয় দত্ত, জ্যাকি শ্রফ, অনুপম খের, রাখী গুলজার, রম্যা কৃষ্ণা, সুষমিতা সেন, এ.কে. হাঙ্গল ও নীনা গুপ্তা সহ আরও অনেক তারকা অভিনয় করেছিলেন।
৯০-এর দশকে মাধুরী দীক্ষিত
৯০-এর দশকে মাধুরী দীক্ষিত শুধুমাত্র তার অসাধারণ অভিনয় ও নৃত্যের জন্যই নয়, বরং তার ব্যক্তিগত জীবনও দীর্ঘ সময় ধরে সংবাদ শিরোনামে ছিল। ‘ধক-ধক গার্ল’ -এর উপর তখন ‘অশ্লীলতা’ ছড়ানোর সাথে সাথে ‘ঘর ভাঙ্গা’র মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছিল। এই অভিযোগ এনেছিলেন সংজয় দত্তের প্রথম স্ত্রী ঋচা শর্মার বোন আনার শর্মা। সেই সময় চলচ্চিত্র পত্রিকা থেকে শুরু করে সংবাদপত্র পর্যন্ত সংজয় ও মাধুরীর প্রেমের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সংজয় মাধুরীর সাথে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, যখন ঋচা শর্মা আমেরিকায় ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা করছিলেন। সম্পর্ক বাঁচানোর জন্য ঋচা চিকিৎসার মাঝখানে মুম্বাই ফিরে এসেছিলেন এবং এক সাক্ষাৎকারে তিনি মাধুরীকে ‘ঘর ভাঙা মহিলা’ বলে আক্রমণ করেছিলেন।
তবে, ১৯৯৩ সালে মুম্বাই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সংজয় দত্তের গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের সম্পর্কে বিবাদ দেখা দেয়। গ্রেফতারির পর মাধুরী তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন এবং আর কখনো সর্বজনীকভাবে তাঁর সাথে দেখা যায়নি। কয়েক বছর পর, ১৯৯৯ সালে মাধুরী দীক্ষিত তার জীবনে নতুন মোড় নিয়ে আমেরিকান কার্ডিয়াক সার্জন ডাঃ শ্রীরাম নেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজ তাদের দুই ছেলে রয়েছে এবং মাধুরী সুখী পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং সামাজিক কাজে সক্রিয় রয়েছেন।