রজনীকান্তের ৭৫তম জন্মদিন: এক বর্ণময় জীবন

🎧 Listen in Audio
0:00

রজনীকান্ত ১২ই ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করেন। তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালের ১২ই ডিসেম্বর ব্যাঙ্গালোরে (বর্তমানে বেঙ্গালুরু) হয়েছিল। রজনীকান্ত, যাঁর আসল নাম শিবাজী রাও গায়কওয়াড়, আজ ৭৫ বছর বয়সে পা দিলেন। এই উপলক্ষে, আমরা তাঁর জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখব, যাঁর মাধ্যমে তিনি সাউথ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার হয়েছেন। রজনীকান্তের জীবন সংগ্রাম, পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রতীক। তিনি তাঁর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই একটি বড় স্থান অর্জন করেননি, বরং বিশ্বজুড়ে নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারে অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে, কিন্তু তিনি কখনও হার মানেননি। আজ তিনি শুধু সাউথ ইন্ডিয়াতেই নন, পুরো দেশ ও বিদেশেও তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে বাস করেন।

রজনীকান্তের প্রারম্ভিক জীবন, সংগ্রাম এবং পরিশ্রম

রজনীকান্তের জন্ম ১৯৫০ সালের ১২ই ডিসেম্বর ব্যাঙ্গালোরের (বর্তমানে বেঙ্গালুরু) একটি মারাঠি পরিবারে হয়েছিল। তাঁর শৈশব ছিল সংগ্রামে ভরা। ৯ বছর বয়সে তাঁর মাকে হারানোর পর, তিনি জীবনে অনেক কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন। নিজের জীবনকে উন্নত করার জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। প্রথমে তিনি কুলি হিসাবে কাজ করতেন, তারপর কাঠমিস্ত্রি হিসাবে কাজ করেন এবং পরে ব্যাঙ্গালোর ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসে বাস কন্ডাক্টরের চাকরিও করেন।

বাস কন্ডাক্টর হিসেবে রজনীকান্ত অনেক নাম করেছিলেন। তিনি এতটাই আকর্ষণীয় ছিলেন যে, তাঁর বাসে যাত্রা করার জন্য লোকেরা অন্য বাস ছেড়ে দিত। এর পর রজনীকান্ত তাঁর অভিনয় করার শখ পূরণ করার জন্য মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন।

কে. বালাচন্দরের সাথে কর্মজীবনের শুরু

রজনীকান্তের ক্যারিয়ার একটি বিশেষ মোড় নেয় যখন তিনি সাউথের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক কে. বালাচন্দরের কাছ থেকে সুযোগ পান। ১৯৭৫ সালে, তিনি তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র অপূর্ব রাগাঙ্গাল-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের খুব পছন্দ হয়েছিল এবং এখান থেকেই তাঁর সুপারস্টার হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। এর পর তিনি অনেক ছবিতে কাজ করেন, যার মধ্যে মুল্লুম মালারুম, জনি এবং থিল্লু মুল্লু-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের মন জয় করেন।

রজনীকান্ত শুধু তামিল সিনেমাতেই নয়, বলিউডেও নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন। ডন, অন্ধ কানুন, গ্রেফতার-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় স্মরণীয়। তাঁর অভিনয়ের বিশেষত্ব ছিল যে, তিনি প্রতিটি চরিত্রে সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে অভিনয় করতেন, তা সে নেতিবাচক হোক বা ইতিবাচক।

রজনীকান্তের সংগ্রামপূর্ণ যাত্রা এবং সাফল্য

রজনীকান্তের যাত্রায় অনেক অসুবিধা ছিল, কিন্তু তিনি কখনও হাল ছাড়েননি। তিনি শুধু সিনেমাতেই সাফল্য পাননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর সংগ্রামকে পরাজিত করেছেন। রজনীকান্ত যেভাবে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন, তা দেখে মনে হয় তিনি হয়তো কখনও সুপারস্টার হতে পারতেন না, কিন্তু তাঁর পরিশ্রম এবং সংগ্রাম তাঁকে সেই স্থানে পৌঁছে দিয়েছে, যেখানে তিনি আজ দাঁড়িয়ে আছেন।

তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, তাঁর সিনেমার মুক্তির আগে তাঁর ভক্তরা বিশাল কাটআউট এবং হোর্ডিং লাগিয়ে দেন। রজনীকান্তের ভক্তরা তাঁকে ঈশ্বরের মতো মনে করেন এবং তাঁর প্রতিটি সিনেমার জন্য অপেক্ষা করেন।

রজনীকান্তের নেটওয়ার্থ এবং জীবনযাত্রা

রজনীকান্তের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটি দীর্ঘ এবং উজ্জ্বল ক্যারিয়ার রয়েছে। আজ তিনি যে সাফল্য অর্জন করেছেন, তা একজন বাস কন্ডাক্টর থেকে শুরু করে সাউথ সিনেমার সবচেয়ে বড় সুপারস্টার হওয়ার যাত্রা। আজ রজনীকান্তের একটি বিশাল সম্পত্তি রয়েছে। তাঁর আনুমানিক নেটওয়ার্থ প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা।

তাঁর কাছে অনেক দামি গাড়ি রয়েছে, যার মধ্যে ৬.৫ কোটি টাকার একটি রয়েস ফ্যান্টম, ৬ কোটি টাকার রোলস রয়েস ঘোস্ট এবং ৩.১০ কোটি টাকার ল্যাম্বরগিনি উরুস রয়েছে। এছাড়াও, তাঁর কাছে ৩৫ কোটি টাকার একটি বিলাসবহুল বাড়িও রয়েছে। এর পাশাপাশি, রজনীকান্ত একটি সিনেমার জন্য ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পান, যা প্রমাণ করে যে তিনি কতটা বড় স্টার।

রজনীকান্তের ফিল্মি ক্যারিয়ার: সাউথ থেকে বলিউড পর্যন্ত

রজনীকান্তের ফিল্মি ক্যারিয়ার ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চলছে। তিনি প্রায় ১৭০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর সিনেমার সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর অভিনয় শৈলী, বিশেষ ভঙ্গি এবং দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা। তিনি একের পর এক অনেক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন, যার মধ্যে বাশা, থালাপথি, আন্নামালাই, মান্নান এবং ভিরা-এর মতো সিনেমা বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল।

রজনীকান্তের ভক্ত এবং তাঁর অনন্য ভঙ্গি

রজনীকান্তের ফ্যান ফলোয়িং শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। তাঁর ভক্তরা তাঁর প্রতিটি ভঙ্গি নকল করেন, তা সে সিগারেট বাতাসে ঘুরিয়ে ধরার কায়দা হোক বা তাঁর বিখ্যাত মুদ্রা নিক্ষেপের স্টাইল।

রজনীকান্তের ভক্তরা তাঁর সিনেমা মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই সিনেমা হলে উৎসব পালন করেন এবং তাঁর কাটআউটের সামনে পূজা করেন। রজনীকান্ত নিজেকে তাঁর ভক্তদের থেকে কখনও উপরে মনে করেন না এবং সবসময় তাঁদের ভালোবাসা ও আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ থাকেন।

রজনীকান্তের জীবন একটি অনুপ্রেরণা। তিনি তাঁর পরিশ্রম, সংগ্রাম ও একাগ্রতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, যদি মানুষের মধ্যে কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে সে যেকোনো পরিস্থিতিতেই সাফল্য অর্জন করতে পারে। তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

Leave a comment