৪ জুন ২০২৫: বিশ্ব গ্লোবাল রানিং ডে উদযাপন

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম বুধবার বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল রানিং ডে (Global Running Day) পালিত হয়। এ বছর এই বিশেষ দিনটি ৪ জুন ২০২৫ তারিখে পালিত হচ্ছে। এই দিনটি শুধুমাত্র দ্রুত দৌড়োনোর জন্য নয়, বরং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই যারা নিজেদেরকে কিছুটা ভালো, কিছুটা সুস্থ এবং কিছুটা সুখী দেখতে চায়। আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসেন এবং একটি সুস্থ জীবনযাত্রার সূচনা করতে চান, তাহলে এই দিনটি আপনার জন্য।

কি গ্লোবাল রানিং ডে?

গ্লোবাল রানিং ডে একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন যা মানুষকে দৌড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করে, তা এক কিলোমিটার হোক বা পাঁচ। এর উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ফিটনেসকে জীবনযাত্রার অংশ করে তোলা। এই দিনে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ, তাদের অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন, একসাথে দৌড়ায় – তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে, তাদের নিজস্ব গতিতে।

কিভাবে গ্লোবাল রানিং ডে পালন করবেন?

  • শুরু করুন: আপনি যদি কখনো দৌড়াননি, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। রানিং কোন প্রতিযোগিতা নয়, এটি নিজের সাথে একটি যাত্রা। একটি জোড়া ভালো জুতা পরুন এবং বাইরে বের হোন।
  • ধাপে ধাপে এগিয়ে যান: শুরুতে দ্রুত দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। এক মিনিট দৌড়ান, এক মিনিট হাঁটুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। Couch to 5K এর মতো অ্যাপস আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
  • ভালো জুতা পরতে ভুলবেন না: আপনার পায়ের সম্পূর্ণ চাপ জুতার উপর থাকে, তাই রানিংয়ের জন্য বিশেষ জুতা কিনুন যা আরামদায়ক এবং সহায়ক হবে।
  • ওয়ার্মআপ এবং কুল ডাউন অবশ্যই করুন: সরাসরি দৌড় শুরু করা পেশীগুলিকে ক্ষতি করতে পারে। ৫ মিনিটের ওয়ার্মআপ ওয়াক এবং শেষে স্ট্রেচিং অবশ্যই করুন।

কেন দৌড়ানো এত গুরুত্বপূর্ণ?

দৌড়ানো শুধুমাত্র শরীরের জন্যই নয়, মন এবং আত্মার জন্যও উপকারী। আসুন এর কিছু চমৎকার সুবিধা জেনে নেওয়া যাক:

  • সুস্থ হৃদয় এবং ফুসফুস: দৌড়ানোর ফলে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত হয়, হৃদয় শক্তিশালী হয় এবং ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি: রানিংকে 'মুভিং মেডিটেশন'ও বলা হয়। এটি দ্বারা চাপ কমে এবং মেজাজ ভালো হয়।
  • ক্যালোরি বার্ন এবং ওজন কমানো: আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে রানিং আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হতে পারে।
  • উন্নত একাগ্রতা এবং আত্মবিশ্বাস: রানিং করার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত হয় এবং আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।

রানিং-এর ইতিহাস

জানেন কি মানুষের দৌড়ানোর কলা বংশানুক্রমে এসেছে? লক্ষ লক্ষ বছর আগে যখন আমাদের পূর্বপুরুষরা জঙ্গলে বাস করত, তখন তারা শিকারের পিছনে অবিরাম দৌড়াত। এই প্রক্রিয়াটিকে 'পারসিস্টেন্স হান্টিং' বলা হয়, যেখানে প্রাণীটিকে এতটা দৌড়ানো হত যে তা ক্লান্ত হয়ে পড়ে যেত। এই কৌশলটির কারণে মানুষের দেহ ধীরে ধীরে দৌড়ানোর জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে।

গ্লোবাল রানিং ডে সেই দৌড়ানোর প্রবৃত্তিকে উদযাপন করার দিন। এর সূচনা ২০০৯ সালে আমেরিকায় 'ন্যাশনাল রানিং ডে' হিসেবে হয়। পরে ২০১৬ সালে এই দিনটি আন্তর্জাতিক হয় এবং এখন ১৭৭ টিরও বেশি দেশে মানুষ স্বাস্থ্য এবং ফিটনেসের জন্য এটি পালন করে।

রানিংয়ের সময় মনে রাখার বিষয়গুলি

  • রানিংয়ের মাঝখানে থেমে যাওয়া কোন ভুল নয়।
  • আপনার শরীরের কথা শুনুন – ক্লান্ত হলে থেমে যান।
  • সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন রানিং করুন।
  • হাইড্রেটেড থাকুন – দৌড়ানোর আগে এবং পরে অবশ্যই পানি পান করুন।
  • কোনও বন্ধু বা গ্রুপের সাথে দৌড়ান – মোটিভেশন বৃদ্ধি পাবে।

শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্যও উপকারী

গ্লোবাল রানিং ডে শুধুমাত্র দ্রুত দৌড়োনোর জন্য নয়, বরং সকল বয়সের মানুষের জন্য। শিশুরা খেলাধুলার মধ্যে দৌড়াতে পারে, মহিলারা হালকা জগিং করতে পারে এবং বৃদ্ধরা পার্কে হাঁটার মাধ্যমেও এই দিনটি পালন করতে পারেন। অনেক দ্রুত দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই, শুধু আপনার ক্ষমতার মতো শরীরকে সক্রিয় রাখুন।

এই দিনের উদ্দেশ্য হল দৌড়ানোর মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাত্রাকে উৎসাহিত করা। ছোট বাচ্চারা যদি প্রতিদিন কিছুটা দৌড়ায় তাহলে তাদের হাড় শক্তিশালী হয় এবং বৃদ্ধদের জন্য হাঁটা জয়েন্টের ব্যথা এবং হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। তাই সবাই এই দিনের অংশীদার হতে পারে, বয়স যাই হোক না কেন।

গ্লোবাল রানিং ডে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে দৌড়ানো শুধু একটি খেলা নয়, বরং স্বাস্থ্য এবং সুখের পথ। এই দিনটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে যে আমরা আমাদের ক্ষমতার মতো হাঁটব, দৌড়াব এবং সক্রিয় থাকব। তাই এই ৪ জুন, আপনার জুতা পরুন এবং দৌড় শুরু করুন – কারণ স্বাস্থ্যই সবচেয়ে বড় দৌড়।

Leave a comment