হিন্দু ধর্মে ভগবান শিবের আরাধনার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মহাদেবকে প্রসন্ন করার জন্য সপ্তাহের প্রতিদিনই কোনও না কোনও বিশেষ পূজা হয়, কিন্তু প্রদোষ ব্রতকে এর মধ্যে সবচেয়ে শুভ ও প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। ২০২৫ সালে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ প্রদোষ ব্রত ৮ জুন পড়ছে এবং এটি রবি প্রদোষ ব্রত হবে, যা রবিবারের দিন হওয়ায় আরও বেশি শুভ বলে মনে করা হয়। এই বিশেষ দিনে ভগবান শিবের উপাসনা করলে জীবনের সকল সংকট দূর হয় এবং ভাগ্যের দিক পরিবর্তন হতে পারে।
কী প্রদোষ ব্রত এবং কেন বিশেষ?

প্রদোষ ব্রত প্রতি মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে পালন করা হয়, যা চন্দ্র মাসের শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষ উভয়তেই আসে। এই দিন প্রদোষ কালে (সূর্যাস্তের প্রায় ৪৫ মিনিট পূর্বে এবং ৪৫ মিনিট পর পর্যন্ত সময়) ভগবান শিবের পূজা করা হয়।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রদোষ ব্রত রাখলে ভগবান শিব তাঁর ভক্তদের সাথে দ্রুত প্রসন্ন হন। এই ব্রত বিশেষ করে তাদের জন্য ফলপ্রসূ হয় যারা ধন, সন্তান, স্বাস্থ্য এবং শান্তির কামনা করেন।
২০২৫ সালে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ প্রদোষ ব্রত রবিবারে আসার ফলে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। একে রবি প্রদোষ ব্রত বলা হয় এবং এটি জীবনে সূর্য সংক্রান্ত দোষ এবং বাধা দূর করে।
ব্রত তিথি এবং শুভ মুহূর্ত
- ব্রত তিথি আরম্ভ: রবিবার, ৮ জুন ২০২৫, সকাল ৭:১৭ টা
- ব্রত তিথি সমাপ্তি: সোমবার, ৯ জুন ২০২৫, সকাল ৯:৩৫ টা
- শুভ পূজা মুহূর্ত (প্রদোষ কাল): সন্ধ্যা ৭:১৮ টা থেকে রাত ৯:১৯ টা পর্যন্ত
এই সময়ের মধ্যে ভগবান শিব এবং মা পার্বতীর পূজা করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
কিভাবে প্রদোষ ব্রতের পূজা করবেন?
প্রদোষ ব্রতে ভক্তরা পুরো দিন নিরাহার অথবা ফলাহার করে ব্রত রাখেন। সন্ধ্যার সময় স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করে পূজা করা হয়। বাড়িতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে অথবা মন্দিরে গিয়ে ভগবান শিবের অভিষেক এবং পূজন করা হয়।
পূজন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত
- শিবলিঙ্গে জল এবং পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক
- বেলপাতা, ধতুরা, আক ফুল, সাদা ফুল, গাভীর দুধ, মধু এবং ঘি অর্পণ
- ধূপ, দীপ এবং নৈবেদ্য অর্পণ করে শিব মন্ত্রের জপ
- ॐ নমঃ শিবায় মন্ত্রের ১০৮ বার উচ্চারণ
- শিব চালিসা অথবা রুদ্রাষ্টকের পাঠ
শিবলিঙ্গে এই জিনিসগুলি অর্পণ করুন, জেগে উঠবে নিদ্রিত ভাগ্য

- জল এবং ঘি: শিবলিঙ্গে পবিত্র জল এবং গাভীর ঘি অর্পণ করা অত্যন্ত পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়। এই উপায় জীবন থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করে মানসিক শান্তি দেয়।
- দুধ, দই এবং মধু: পঞ্চামৃত হিসেবে এই জিনিসগুলি দিয়ে অভিষেক করলে শরীরের রোগ দূর হয় এবং কাজে বাধা দূর হয়।
- বেলপাতা: শিবলিঙ্গে ত্রিদলীয় বেলপাতা অর্পণ করলে ভগবান শিব অতি প্রসন্ন হন। এই পাতাগুলি মনের শুদ্ধতা এবং সমর্পণের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
- সাদা চন্দন এবং গঙ্গাজল: চন্দন ঠাণ্ডার প্রতীক, যা দিয়ে শিবলিঙ্গকে শীতলতা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে গঙ্গাজল দিয়ে পবিত্রতা আসে।
- আক এবং ধতুরা: এই দুটি ফুল মহাদেবের অতি প্রিয়। এগুলি অর্পণ করলে শত্রুদের থেকে মুক্তি এবং ভয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
শিবলিঙ্গে ভুল করেও এই জিনিসগুলি অর্পণ করবেন না
- তুলসী দল: তুলসী মা ভগবান বিষ্ণুর প্রিয়া বলে মনে করা হয়, তবে শিবলিঙ্গে তুলসী অর্পণ নিষিদ্ধ। এর ফলে ভগবান শিব অপ্রসন্ন হন।
- হলুদ এবং সিঁদুর: হলুদ এবং সিঁদুর বৈবাহিক সৌভাগ্যের প্রতীক, যা শিবের ভয়ঙ্কর এবং সংহারক রূপের সাথে মিল নেই। তাই এগুলি নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।
- নারকেলের পানি: শিবলিঙ্গে নারকেলের পানি অর্পণ করাও নিষেধ, কারণ এটি দেবী পূজায় ব্যবহার করা হয়।
ব্রত থেকে প্রাপ্ত সুফল
- মানসিক শান্তি এবং আত্মবলে বৃদ্ধি
- ব্যবসা এবং কর্মজীবনে সাফল্য
- সন্তান সুখের প্রাপ্তি
- পারিবারিক কলহ এবং বাধা-বিপত্তির ধ্বংস
- গ্রহ দোষ এবং পিতৃ দোষের শান্তি
- অকাল মৃত্যু এবং রোগ থেকে মুক্তি
প্রদোষ ব্রত শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি জীবনে শুভতা, স্থায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া একটি পথ। ভগবান শিবের আরাধনা এই দিন যতটুকু ভক্তি এবং নিয়মিতভাবে করা হয়, ততটুকু দ্রুত মহাদেব তাঁর কৃপা বর্ষণ করেন।