১৬ মে ২০২৫: একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর গুরুত্ব, পূজা বিধি ও উপায়

🎧 Listen in Audio
0:00

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে সংকষ্টী চতুর্থীর পর্ব পালিত হয়। এই দিনে ভগবান গণেশের একদন্ত রূপের পূজা-অর্চনা করা হয়, যিনি বিঘ্ননাশক ও সুখ-সমৃদ্ধিদাতা হিসেবে পরিচিত। এই বছর একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থী আজ ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার পালিত হচ্ছে।

একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর গুরুত্ব

সংকষ্টী চতুর্থীর ব্রত ভগবান গণেশকে উৎসর্গ করা হয়, যিনি ‘বিঘ্নহর্তা’ অর্থাৎ বাধা দূর করার দেবতা হিসেবে পরিচিত। এই বিশেষ দিনে ভগবান গণেশের ‘একদন্ত’ রূপের পূজা করা হয়। একদন্তের অর্থ – এক দাঁত বিশিষ্ট। এই রূপ তাঁর বল, বুদ্ধি ও ত্যাগের প্রতীক। বিশ্বাস করা হয় যে, জ্ঞানের জন্য তিনি এক দাঁত ত্যাগ করেছিলেন, সেইজন্য তিনি এই রূপেও পূজিত হন।

যে কোনও ভক্ত এই দিনে পূর্ণ श्रद्धা ও বিধি-বিধানসহ ব্রত পালন করে এবং ভগবান গণেশের পূজা করে, তার জীবনে আসা বাধা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা বারবার কোনও না কোনও কারণে বিরক্ত থাকে, তাদের জন্য এই ব্রত অত্যন্ত উপকারী। সংকষ্টী চতুর্থীর পালন করলে ঘরে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে, পাশাপাশি ভগবান গণেশের বিশেষ আশীর্বাদও লাভ হয়।

  • একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থী ২০২৫: তিথি ও মুহূর্ত
  • চতুর্থী তিথি আরম্ভ: ১৬ মে ২০২৫ প্রাতঃ ৪:০২ টা
  • চতুর্থী তিথি সমাপ্তি: ১৭ মে ২০২৫ প্রাতঃ ৫:১৩ টা
  • চন্দ্রোদয়ের সময়: ১৬ মে রাত ১০:৩৯ টা

একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীতে পূজার বিধি ও নিয়ম

ভগবান গণেশকে বিঘ্ননাশক দেবতা হিসেবে মনে করা হয়। একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর দিন তাঁর পূজা বিশেষ ফলদায়ক। যদি আপনি এই দিনে ব্রত ও পূজা করতে চান, তাহলে নিচে দেওয়া সহজ বিধি ও নিয়মগুলি অবশ্যই মেনে চলুন।

  • প্রাতঃকালে স্নান করুন: ভোরে উঠুন, শরীর শুদ্ধির জন্য স্নান করুন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, অগ্রাধিকার ভাবে হলুদ বা লাল রঙের বস্ত্র পরিধান করুন। পূজার আগে মন ও শরীর উভয়েরই পবিত্রতা জরুরি।
  • ব্রতের সংকল্প নিন: ভগবান গণেশের ধ্যান করুন এবং মনে মনে ব্রত রাখার সংকল্প নিন। এই সংকল্প আপনার পুরো দিনের উপবাস ও পূজাকে সফল করে তোলে।
  • পূজার সামগ্রী সংগ্রহ করুন: গণেশজির মূর্তি বা ছবি, দূর্বা (২১টি পাতা), লাল ফুল, মোদক বা লাড্ডু, ধূপবাতি, ঘি বা তেলের প্রদীপ, রোলী, চন্দন, জলপূর্ণ কলস এবং একটি পরিষ্কার আসনের প্রয়োজন হবে।
  • পূজার বিধি: প্রথমে গণেশজিকে স্নান করান (যদি মূর্তি হয় তাহলে জল ছিটান), তারপর তাঁকে চন্দন, রোলী, ফুল ও দূর্বা অর্পণ করুন। মোদকের ভোগ লাগান। এরপর গণেশ মন্ত্র যেমন ‘ॐ গণ গণপতয়ে নমঃ’ বা ‘গণপতি অর্থর্বশীর্ষ’ পাঠ করুন। পূজা श्रद्धা ও মনে মনে করুন।
  • চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দিন: রাতে চন্দ্রোদয় হলে, চন্দ্রমাকে জল, অক্ষত (চাল) ও ফুলে অর্ঘ্য দিন। এরপর ব্রত ভাঙ্গুন। অর্ঘ্য দেওয়ার ফলে ব্রত সম্পূর্ণ হয় এবং ভগবান গণেশের কৃপা লাভ হয়।

একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীতে করুন এই বিশেষ উপায়, পাবেন শুভ ফল

সংকষ্টী চতুর্থীর দিন যদি কিছু বিশেষ উপায় श्रद्धা ও বিধি মেনে করা হয়, তাহলে জীবনের অনেক কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে সন্তানের দীর্ঘায়ু ও জীবনের বাধা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই উপায়গুলি অত্যন্ত কার্যকরী বলে মনে করা হয়।

  • সন্তানের দীর্ঘায়ু জন্য উপায়: যদি আপনি আপনার সন্তানদের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন, তাহলে একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর দিন ভগবান গণেশের সামনে शुद्ध ঘি প্রদীপ জ্বালান। এরপর “সন্তান গণপতি স্তোত্র” श्रद्धা পূর্বক পাঠ করুন। এই স্তোত্র গণেশজির বিশেষ স্তুতি যা সন্তানের রক্ষা ও সমৃদ্ধির জন্য পাঠ করা হয়।
  • বিঘ্ন দূর করার জন্য উপায়: এই দিন গণেশজিকে ২১টি দূর্বা পাতা অর্পণ করুন এবং আঁক (মাদার) ফুল অর্পণ করুন। এরপর বप्পাকে মোদক বা লাড্ডুর ভোগ লাগান। পূজার পর দরিদ্রদের অন্ন, জল ও দান করুন। এই কर्म আপনার সমস্যাগুলি দূর করার পাশাপাশি পুণ্য ও সুখ-শান্তিও প্রদান করে।

বনছে শুভ যোগ

এই বছর একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর দিন দুটি বিশেষ যোগ বনছে, যার নাম ‘সিদ্ধ যোগ’ ও ‘শিব্বাস যোগ’। এই দুটি যোগ ধার্মিক কাজ ও পূজা-পাঠের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। যখন এই ধরণের যোগ বনে, তখন সেই সময় করা পূজা ও উপাসনার প্রভাব অনেক বেশি হয়। এই দিন ভগবান গণেশের পূজার ফলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি ও मनোकामना পূরণ হয়।

সিদ্ধ যোগ ও শিব্বাস যোগের ফলে এই দিন ঘর-পরিবারে ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি মানসিক শান্তি ও শক্তিও লাভ হয়। যারা এই দিন বিশেষ পূজা করে, তাদের কাজে সফলতা ও নতুন সুযোগ লাভ করে। তাই এই अवसरের পুরো সুযোগ গ্রহণ করে গণেশ জির উপাসনা করা উচিত যাতে জীবনে সৌভাগ্য বজায় থাকে।

একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর কথা

পুরাণিক কথার অনুযায়ী, একবার ভগবান পরশুরাম কৈলাস পর্বতে ভগবান শিবের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় ভগবান গণেশ সেখানে দ্বারপাল হিসেবে বসে ছিলেন এবং তিনি পরশুরামকে শিবজির সাথে দেখা করতে বাধা দিয়েছিলেন। গণেশজির এই নিয়ম ছিল যে, অনুমতি ছাড়া কেউ শিবজির কাছে যেতে পারবে না। পরশুরামের কাছে এই কথা ভালো লাগেনি এবং তিনি খুব ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। ক্রোধে পরশুরাম তার ফর্সা দিয়ে ভগবান গণেশের এক দাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন।

ভগবান গণেশের এক দাঁত ভাঙার কারণে তাঁকে ‘একদন্ত’ বলা হতে থাকে। এই ঘটনা থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ভগবানও তাঁর কর্তব্য পালন করেন এবং নিয়মের সম্মান করেন। গণেশজি সংযম দেখিয়েছিলেন এবং তাঁর দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যদিও তাঁকে আঘাত লেগেছিল। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনে কষ্টের মধ্যেও আমাদের আমাদের কর্তব্য পালন চালিয়ে যেতে হবে।

একদন্ত ভগবান গণেশের এই রূপ ত্যাগ ও জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তাঁর এই রূপ থেকে ভক্তদের এই বার্তা পাওয়া যায় যে, জ্ঞান ও বিবেকের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। পাশাপাশি, যে কোনো সমস্যার সমাধান সংযম ও ধৈর্য্যের সাহায্যে করা যায়। তাই সংকষ্টী চতুর্থীর দিন এই কথা স্মরণ করা ও ভগবান গণেশের পূজা করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।

এই কথার মাধ্যমে আমাদের এটাও বুঝতে হবে যে, প্রত্যেক কঠিন সময় সংযম ও কর্তব্যবোধের সাহায্যে কাজ করলেই আমরা জীবনের বাধা অতিক্রম করতে পারি। একদন্ত গণেশ জির এই কথা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস, যা আমাদের জীবনে সর্বদা সংযত, বুদ্ধিমান ও ধৈর্য্যশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়।

একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর আরতি

 

জয় গণেশ, জয় গণেশ, জয় গণেশ দেবা।
মাতা যাকি পার্বতী, পিতা মহাদেবা॥

একদন্ত মহাবীর, সিদ্ধি কে দাতা।
বিঘ্নহর্তা গণপতি, সর্ব সুখদাতা॥

দূর্বা, ফুল, চন্দন, অক্ষত চড়াইবো।
মোদক প্রসাদ তোমায়, আমরা লাগাইবো॥

মাতা পার্বতীর লাল, আমরা সব পুকারি।
গণপতি বप्পা মোরিয়া, সংকট থেকে উবাড়ো॥

জয় জয় জয় গণেশ, মঙ্গলমূর্তি দাতা।
আমাদের সুখকর্তা, সংকট হর্তা॥

একদন্ত সংকষ্টী চতুর্থীর ব্রত ভগবান গণেশের কৃপা লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ अवसर। এই দিন বিধিপূর্বক ব্রত ও পূজা করলে জীবনের সকল বাধা দূর হয় এবং সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়। এই বছর ১৬ মে বনছে শুভ যোগের সুযোগ গ্রহণ করে ভগবান গণেশের আরাধনা করুন এবং তাঁর আশীর্বাদে আপনার জীবনকে মঙ্গলময় করে তুলুন।

Leave a comment