বিহারের গয়ার নাম এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গয়া জী’ রাখা হয়েছে, যা শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান নয়, বরং পিতৃমাতার মোক্ষ লাভের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছে। এই পরিবর্তন গয়াকে একটি সম্মানজনক পরিচয় প্রদান করে, যা এটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যার পর গয়া জেলায় আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন এই ধর্মীয় স্থানটি পূর্বের চেয়ে আরও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করা হবে।
গয়া জীর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব কালক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই স্থান হিন্দু ধর্মে পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধ ও পিন্ডদানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ পিতৃপক্ষের সময় আসে, যাতে তারা তাদের পিতৃমাতাকে শান্তি ও মোক্ষ দান করতে পারে। স্থানীয় সাধু-সন্ত, গয়াওয়াল পণ্ডিত এবং জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ‘গয়া’ নামটি পরিবর্তন করে ‘গয়া জী’ করার দাবি জানানো হচ্ছিল, যা এখন গৃহীত হয়েছে। মানুষ এই পরিবর্তনটিকে একটি সম্মানজনক পদক্ষেপ মনে করছে, যার ফলে এই ধর্মীয় স্থানের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গয়া জীর ধর্মীয় প্রসঙ্গ শাস্ত্র ও পুরাণে পাওয়া যায়। গরুড় পুরাণ অনুসারে, পৃথিবীতে মানব মুক্তির জন্য চারটি প্রধান ধামের মধ্যে গয়া একটি। এখানে ভগবান বিষ্ণুর বিষ্ণুপদ মন্দির অবস্থিত, যা পিতৃদেবতা হিসেবে পূজিত হয়। এছাড়াও, এই স্থান পিতৃমাতার মোক্ষ লাভের জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন এই স্থান কীভাবে মোক্ষের ভূমি হয়ে উঠেছিল? এর পিছনে একটি আকর্ষণীয় পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে, যা গয়াসুরের সাথে জড়িত।
গয়াসুরের কথা ও মোক্ষ লাভের পথ
গয়া জীর ধর্মীয় গুরুত্ব গয়াসুরের পৌরাণিক কাহিনীর সাথে জড়িত। গয়াসুরের জন্ম অসুরকুলে হয়েছিল, কিন্তু সে ছিল ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। একদিন সে ভগবান বিষ্ণুর কাছে এই বর চেয়েছিল যে সে এতটাই পবিত্র হবে যে যারা তাকে দেখবে তারা মোক্ষ লাভ করবে। ভগবান বিষ্ণু তার তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে তাকে এই বর দিয়েছিলেন। এরপর, গয়াসুরের দর্শন থেকে সকলে মোক্ষ লাভ করতে থাকে, যার ফলে স্বর্গের ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।
স্বর্গে অস্থিরতা দেখা দিলে সকল দেবতা ভগবান বিষ্ণুর কাছে গেলেন। ভগবান বিষ্ণু গয়াসুরকে বললেন যে সে তার দেহকে যজ্ঞের জন্য সমর্পণ করুক, যাতে মোক্ষ লাভের সঠিক পথ স্থাপন করা যায়। গয়াসুর ভগবান বিষ্ণুর আদেশ মেনে নিল এবং তার দেহ যজ্ঞের জন্য সমর্পণ করে দিল। যজ্ঞের পর ভগবান বিষ্ণু গয়াসুরকে মোক্ষ দান করলেন এবং আশীর্বাদ করলেন যে তার দেহ যেখানে যেখানে ছড়িয়ে পড়বে সেই স্থান পবিত্র হবে।
গয়াসুরের দেহ পাথর হয়ে গয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, এবং এখান থেকেই এই স্থানের নাম ‘গয়া’ হয়। এই স্থান পিতৃমাতার পিন্ডদান ও মোক্ষের ভূমি হয়ে ওঠে। আজও গয়া জীতে মানুষ তাদের পিতৃমাতার জন্য পিন্ডদান করে এবং মোক্ষ লাভের জন্য এখানে আসে।
গয়া জী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের প্রতীক
এখন ‘গয়া জী’ নামে পরিচিত এই স্থান আরও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হবে। গয়া জীর নাম শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে নয়, বরং পিতৃমাতার মোক্ষ লাভের পথ হিসেবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অবস্থিত বিষ্ণুপদ মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর বাসের বিশ্বাস রয়েছে, যা এই পবিত্র স্থানটিকে আধ্যাত্মিক দিক থেকে আরও মহান করে তোলে।
গয়া জী এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থান হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসে। এখানকার ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিশ্বাস এটিকে একটি অনন্য স্থান করে তুলেছে। গয়া জীর নাম এখন শুধুমাত্র ভক্তদের জন্য একটি সম্মানের প্রতীক নয়, বরং এই স্থান কালক্রমে আরও বেশি গুরুত্ব অর্জন করছে।