হরিয়ানার গুরুগ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এক ইন্ডিগো কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে অপমানজনক আচরণের জন্য। ডিএলএফ ফেজ ১ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
ভারতের কর্পোরেট ক্ষেত্রে সমতা ও অন্তর্ভুক্তির কথা প্রায়শই বলা হয়, কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন বলে। সম্প্রতি একটি ঘরোয়া বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর এক কর্মীর দ্বারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জাতিভিত্তিক নির্যাতন ও বৈষম্যের অভিযোগ আনায় কর্মক্ষেত্রের প্রকৃত চিত্র আবারও সামনে এসেছে। গুরুগ্রামে দায়ের করা এফআইআরে কোম্পানির তিনজন উচ্চপদস্থ কর্মীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনা এখন পুলিশ তদন্তের আওতায় চলে এসেছে এবং দেশজুড়ে এর আলোচনা শুরু হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
ইন্ডিগোতে কর্মরত ৩৫ বছর বয়সী কর্মী শরণ এ অভিযোগ করেছেন যে তাকে বারবার জাতিগতভাবে অপমান করা হয়েছে। তিনি অনুসূচিত জাতির আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। তার দাবি, এই অপমান এক-দুবার নয়, বারবার হয়েছে এবং এর ফলে মানসিকভাবে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। ২৮ এপ্রিল কোম্পানির একটি সভায় তিনজন উচ্চপদস্থ কর্মী তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর জাতিগত মন্তব্য করেছেন, যার ফলে তিনি অত্যন্ত আহত হয়েছেন।
কোথায় এবং কীভাবে এফআইআর দায়ের হয়েছে
শরণ এ প্রথমে কর্ণাটকে শূন্য এফআইআর দায়ের করেছিলেন, যার ভিত্তিতে পরে গুরুগ্রামের ডিএলএফ ফেজ ১ থানায় এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। থানার কর্মকর্তা রাজেশ কুমার জানিয়েছেন যে অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং বর্তমানে ঘটনার তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তথ্য যাচাইয়ের পর আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এফআইআরে কী বলা হয়েছে
শরণ এ তার অভিযোগে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে কোম্পানিতে তাকে বারবার অপমান ও বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি লিখেছেন যে, সভায় কর্মী তপস দে, মনীষ সাহানী এবং ক্যাপ্টেন রাহুল পাটিল তাকে জাতিগত ভিত্তিতে অপমান করেছেন। শরণের দাবি, তাকে বারবার সতর্কতামূলক চিঠি দেওয়া হয়েছে, বেতন কাটা হয়েছে এবং অযথা ছুটি কাটা হয়েছে। এছাড়াও, তাকে ইস্তফা দিতে চাপ দেওয়া হয়েছে।
কোম্পানির পক্ষ
ইন্ডিগো এই পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং সকল অভিযোগকে সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছে। কোম্পানির মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, ইন্ডিগো কর্মক্ষেত্রে কোনও ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতনকে মেনে নেয় না। কোম্পানির নীতি হল শূন্য সহনশীলতা এবং তারা সকল কর্মীর জন্য সমান ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোম্পানি আরও জানিয়েছে যে, যদি তদন্তকারী সংস্থার প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা পুরোপুরি সহযোগিতা করবে।
প্রশাসনকেও জানানো হয়েছিল
শরণ এ আরও দাবি করেছেন যে, তিনি এই নির্যাতনের কথা কোম্পানির সিইও এবং অভ্যন্তরীণ কমিটিকে জানিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার দাবি, অভ্যন্তরীণভাবে কোনও সাড়া না পাওয়ায় তাকে আইনি পথ অবলম্বন করতে হয়েছে।
ঘটনার গুরুত্ব
এই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির নির্যাতনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ সামাজিক সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। আজ যখন কোম্পানিগুলো নিজেদের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈচিত্র্য সমর্থক হিসেবে দেখানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তখন এই ধরনের ঘটনা সামনে আসার ফলে সেই ভান ভাঙ্গে। জাতিভিত্তিক বৈষম্য শুধু গ্রামীণ এলাকার সমস্যা ছিল না, বরং এখন এটি শহরাঞ্চলের কর্পোরেট পরিবেশেও জায়গা করে নিয়েছে।
আইনি দিক
ভারতে অনুসূচিত জাতি ও উপজাতির ওপর অত্যাচার প্রতিরোধ আইন (SC/ST Act) একটি শক্তিশালী আইন, যা এই ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দिलानेর জন্য তৈরি করা হয়েছে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পুলিশের মতে, অভিযোগকারীর বিবৃতি, প্রমাণ এবং সাক্ষীর ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা
এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেক সামাজিক কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠন এ ব্যাপারে নজর রাখছে। তাদের মতে, কর্মক্ষেত্রে জাতিভিত্তিক বৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা যা উপেক্ষা করা যায় না। অনেকেই বলছেন যে, যদি অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের শুধু আইনি শাস্তিই নয়, কোম্পানিকেও দায়ী করা উচিত।
শ্রম আইন কী বলে
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও কর্মীর সাথে তার সামাজিক শ্রেণী বা জাতির ভিত্তিতে বৈষম্য করা সম্পূর্ণ অবৈধ। যদি প্রমাণিত হয় যে কোম্পানি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি, তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
আগামী পথ
এই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং এখনই কোনও ফলাফলে পৌঁছানো তাড়াহুড়োর সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, শরণ এ-র দ্বারা নেওয়া এই পদক্ষেপ অন্যান্য অনেক কর্মীর জন্যও একটা আদর্শ হতে পারে, যারা গোপনে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিন্তু সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে।