এক্সপ্রেসওয়েতে ‘পে-এজ-ইউ-গো’ টোল ব্যবস্থা: যাত্রীদের জন্য বড় সুবিধা

🎧 Listen in Audio
0:00

দেশের এক্সপ্রেসওয়ে এবং জাতীয় মহাসড়কে যাত্রা করা মানুষদের জন্য খুব শীঘ্রই একটি বড় সুবিধা আসতে চলেছে।

নয়াদিল্লি: দেশের রাস্তায় যাত্রা করা কোটি কোটি মানুষের জন্য একটি বড় সুসংবাদ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয় শীঘ্রই একটি বিপ্লবী "পে-এজ-ইউ-গো" (Pay As You Go) টোল নীতি আনতে চলেছে, যার ফলে এখন আপনাকে কেবলমাত্র এক্সপ্রেসওয়েতে যতটা দূরত্ব ভ্রমণ করবেন তার জন্যই টোল দিতে হবে। এই নতুন ব্যবস্থা বর্তমান ফ্ল্যাট রেট টোল সিস্টেমের স্থান দখল করবে, যেখানে যাত্রীদের নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য পুরো টোল পরিশোধ করতে হত, তারা পুরো রুট ব্যবহার করুক বা না করুক।

কিভাবে কাজ করবে নতুন টোল ব্যবস্থা?

নতুন টোল নীতিতে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবস্থার ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে এই প্রধান উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে:

  • অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন (ANPR) ক্যামেরা: এই ক্যামেরাগুলো গাড়ির নম্বর প্লেট স্ক্যান করবে এবং প্রবেশ/প্রস্থান পয়েন্ট রেকর্ড করবে।
  • ফাস্ট্যাগ সিস্টেম: গাড়ির ফাস্ট্যাগের সাথে সংযুক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ভ্রমণ অনুযায়ী টোলের পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে।
  • জিপিএস-ভিত্তিক ট্র্যাকিং (ভবিষ্যতে): কিছু প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসওয়েতে জিপিএস ট্যাগিং সিস্টেমও পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা প্রকৃত দূরত্বের উপর ভিত্তি করে টোল গণনা করবে।
  • উদাহরণ: যদি কোন যাত্রী দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়েতে কেবল ৫০ কিমি যাত্রা করে, তাহলে তাকে পুরো ১,৪০০ কিমি টোল দিতে হবে না, বরং কেবলমাত্র ৫০ কিমি অনুযায়ী চার্জ করা হবে।

নতুন ব্যবস্থার সুবিধা

  • যাত্রীদের জন্য সুবিধা: ছোট দূরত্বের যাত্রা করা ব্যক্তিদের অতিরিক্ত টোল দিতে হবে না।
  • যানজট কমে যাবে: টোল প্লাজায় লাইন শেষ হবে, কারণ পেমেন্ট স্বয়ংক্রিয় হবে।
  • স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে: যাত্রীরা অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে তাদের ভ্রমণের বিল পরীক্ষা করতে পারবেন।
  • রাজস্ব বৃদ্ধি: ছোট যানবাহনের মালিকরা আরও এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে, যার ফলে সরকারকে আরও রাজস্ব পাওয়া যাবে।

কোন রাজ্যগুলি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে?

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করীর মতে, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি, যেখানে সবচেয়ে বেশি টোল রাজস্ব আসে, এই নতুন ব্যবস্থা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।

টপ ৫ রাজ্য (২০২৪-২৫ সালের টোল রাজস্ব অনুযায়ী):

  • উত্তরপ্রদেশ: ৭,০৬০ কোটি টাকা
  • রাজস্থান: ৫,৯৬৭ কোটি টাকা
  • মহারাষ্ট্র: ৫,১১৫ কোটি টাকা
  • গুজরাট: ৪,৮৯০ কোটি টাকা
  • কর্ণাটক: ৪,২০০ কোটি টাকা

কখন থেকে নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হবে?

সরকারের সূত্রের মতে, এই নীতির পরীক্ষামূলক প্রকল্প দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে এবং পূর্ব এক্সপ্রেসওয়ে (দিল্লি-কলকাতা) তে শুরু করা হবে। যদি এটি সফল হয়, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের সকল প্রধান এক্সপ্রেসওয়েতে এটি কার্যকর করা হবে।

কী কী হবে চ্যালেঞ্জ?

  • প্রযুক্তিগত অবকাঠামো: ANPR ক্যামেরা এবং ফাস্ট্যাগ সিস্টেমকে সম্পূর্ণরূপে সঠিক করা হবে।
  • ডেটা গোপনীয়তা: যানবাহনের চলাচল ট্র্যাক করার ফলে ডেটা লিকের ঝুঁকি।
  • গ্রামীণ এলাকায় কভারেজ: দূরবর্তী এলাকায় নেটওয়ার্ক সংযোগের সমস্যা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি ভারতের টোল সংগ্রহ ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে। "এই ব্যবস্থা ইউরোপ এবং আমেরিকায় সফলভাবে চলছে। যদি ভারত এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে, তাহলে এটি যানবাহন ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব উভয়ের জন্যই গেম-চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে," - ডাঃ প্রবীণ কুমার, পরিবহন অর্থনীতিবিদ।

Leave a comment