ভারতীয় রেল তার যাত্রীদের জন্য একটি বড় সুবিধার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শীঘ্রই যাত্রীরা যাত্রার ২৪ ঘন্টা আগে তাদের আসন নিশ্চিত হওয়ার আপডেট পেতে শুরু করবেন, যেখানে বর্তমানে এই তথ্য কেবলমাত্র চার ঘন্টা আগে দেওয়া হয়।
নতুন দিল্লি: ভারতীয় রেল তার যাত্রীদের সুবিধা আরও উন্নত করার জন্য একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেখানে ওয়েটিং টিকিটধারী যাত্রীদের ট্রেন ছাড়ার মাত্র চার ঘন্টা আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো তাদের টিকিট নিশ্চিত হয়েছে কিনা জানার জন্য, আগামী সময়ে তারা যাত্রার ২৪ ঘন্টা আগেই এই তথ্য পেতে পারবেন।
এই নতুন ব্যবস্থার ফলে কোটি কোটি যাত্রী উপকৃত হবেন, বিশেষ করে যারা দূরবর্তী এলাকা থেকে ট্রেনে যাত্রা করেন এবং স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন।
বর্তমানে ব্যবস্থা কেমন?
বর্তমানে ভারতীয় রেল দুটি ধাপে রিজার্ভেশন চার্ট প্রস্তুত করে
- প্রথম চার্ট: ট্রেন ছাড়ার চার ঘন্টা আগে
- দ্বিতীয় (চূড়ান্ত) চার্ট: ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগে
এই ব্যবস্থায় ওয়েটিং টিকিটধারী যাত্রীদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়। অনেক সময় তাদের যাত্রার প্রস্তুতি অসম্পূর্ণ রাখতে হয় অথবা স্টেশনে পৌঁছে গেলেই জানতে হয় যে তাদের টিকিট নিশ্চিত হয়নি।
নতুন ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন হবে?
রেলওয়ের রাজস্থানের বিকানের ডিভিশনে একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই নতুন ব্যবস্থার সূচনা করা হয়েছে। এর অধীনে এখন যাত্রীরা যাত্রার ২৪ ঘন্টা আগেই জেনে নিতে পারবেন তাদের টিকিট নিশ্চিত হয়েছে কিনা। এর ফলে তারা সময়মতো তাদের যাত্রার পরিকল্পনা করতে পারবেন এবং স্টেশনে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হবেন না।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত পাইলট প্রকল্পের সময় কোনও প্রযুক্তিগত বা পরিচালন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়নি। যদি আগামী সপ্তাহগুলিতেও সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলে, তাহলে এই ব্যবস্থা সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হবে।
দীর্ঘ দূরত্ব যাত্রা করা ব্যক্তিদের স্বস্তি
যারা ১০০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূর থেকে ট্রেন ধরতে আসেন, তাদের আর চার ঘন্টা আগে টিকিট নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
তারা আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা করতে পারবেন এবং যাত্রার চাপ কমবে।
হোটেল এবং ক্যাব বুকিংয়ে সুবিধা
অনেক লোক স্টেশনের কাছে হোটেল বা ট্যাক্সি বুক করে। সময়ের আগে টিকিটের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে তারা নির্দিষ্ট সময়ে সুবিধাগুলি পেতে পারবেন।
জরুরি যাত্রায় সাহায্য
হঠাৎ কোনও কাজে বা জরুরি অবস্থায় যাত্রা করতে হলে আগে থেকেই তথ্য পেলে বিকল্প পরিকল্পনা করতে সাহায্য পাওয়া যাবে।
পরিকল্পনা আরও ভালো হবে
অনেক যাত্রীকে রিজার্ভেশনের অনিশ্চয়তার কারণে বিকল্প মাধ্যম (বাস, ফ্লাইট) বুক করতে হয়। ২৪ ঘন্টা আগে নিশ্চিতকরণের ফলে এই সমস্যাও কমবে।
প্রযুক্তিগতভাবে কীভাবে সম্ভব হবে?
রেলওয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, যেহেতু তৎকালীন টিকিট ট্রেনের নির্ধারিত ছাড়ার ৪৮ ঘন্টা আগেই বুক করা হয়, তাই চার্ট তৈরি করে ২৪ ঘন্টা আগে যাত্রীদের তথ্য দেওয়া প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব।
রেলওয়ের ডেটা এবং রিজার্ভেশন সিস্টেমে ডিজিটাল পরিবর্তন, বিশেষ করে PRS (Passenger Reservation System) এবং CRIS (Centre for Railway Information Systems) এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন বৃহৎ পরিসরে ডেটা প্রসেসিংয়ে কোনও বাধা নেই।
কী হতে পারে সম্ভাব্য প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ?
যদিও এই সুবিধা যাত্রীদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসবে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং প্রশ্নও উঠেছে:
- যাত্রার টিকিট বাতিল করার ব্যক্তিদের কী হবে?: অনেক যাত্রী যাত্রার ठीक আগে টিকিট বাতিল করে দেন। যদি চার্ট ২৪ ঘন্টা আগে তৈরি হয়, তাহলে পরে খালি হওয়া আসনগুলি কীভাবে পূরণ করা হবে?
- কী দুবার চার্ট প্রকাশিত হবে?: রেলওয়ে আগে দুটি ধাপে চার্ট তৈরি করত। এখন দেখতে হবে ২৪ ঘন্টা আগে একটি চূড়ান্ত চার্ট তৈরি হবে নাকি মাঝে একটি আপডেটেড তালিকাও দেওয়া হবে।
- শ্রেণী এবং ট্রেনের ক্যাটাগরির প্রভাব: কী এই সুবিধা সকল ট্রেনে (শতাব্দী, রাজধানী, মেইল-এক্সপ্রেস, জনশতাব্দী) এবং সকল শ্রেণীতে (SL, 3AC, 2AC, 1AC) প্রযোজ্য হবে নাকি কিছু নির্বাচিত সেবার জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে?
- ওয়েটিং লিস্টের আপডেটের পদ্ধতি: রেলওয়ে কি ওয়েটিং লিস্ট ক্রমাগত আপডেট করতে থাকবে নাকি ২৪ ঘন্টা আগের অবস্থা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে?
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রথমে পাইলট প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে চালানো হবে এবং তারপর যাত্রীদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রেলওয়ে বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ভারতীয় রেলের ডিজিটাইজেশনের দিকে একটি বড় ধাপ।
ডঃ নীরেজ গোয়েল, পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন
রেলওয়েতে স্বচ্ছতা এবং যাত্রীদের সুবিধা বাড়ানোর দিকে এটি একটি সাহসী এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এর ফলে যাত্রীদের যাত্রার পরিকল্পনার উপর অনিশ্চয়তা দূর হবে এবং রেলওয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়বে।
ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত
ভারতীয় রেল ক্রমাগত তার সিস্টেমকে যাত্রীদের উপযোগী করে তুলছে। আগে অনলাইন টিকিট বুকিং, তৎকালীন টিকিট, পেপারলেস টিকিট, ওয়াই-ফাই স্টেশন, IRCTC অ্যাপ, ইত্যাদি অনেক সেবা দেওয়া হয়েছে এবং এখন এই নতুন সুবিধা যাত্রীদের মানসিক ও ব্যবহারিক অসুবিধা দূর করবে।
রেলওয়ের এই পদক্ষেপটি যদি সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে এটি প্রতিদিন কোটি কোটি যাত্রীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারে।