সেবির নতুন নিয়ম: ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের উপর কঠোর নজরদারি

SEBI-র নতুন নিয়ম: ভারতীয় প্রতিভূতি ও বিনিময় বোর্ড (SEBI) ফিনইনফ্লুয়েন্সার (Finfluencers)-দের উপর নজরদারি বাড়িয়ে একটি নতুন নিয়ম প্রয়োগ করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে কোনও স্টক মার্কেট এডুকেটর লাইভ স্টক প্রাইস ডেটা ব্যবহার করতে পারবে না। এই নিয়ম সেই সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের উপর কঠোর নজরদারি রাখার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে যারা শিক্ষার নামে বিনিয়োগ সংক্রান্ত টিপস ও পরামর্শ দিয়ে আসছিল।

SEBI-র নতুন নিয়মগুলি কী?

SEBI এই সার্কুলারের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এখন থেকে কোনও স্টক মার্কেট এডুকেটর কেবলমাত্র তিন মাসের পুরোনো স্টক প্রাইস ডেটা ব্যবহার করতে পারবে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল সেই ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের রোখা যারা রিয়াল-টাইম মার্কেট ডেটা ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করছিল। এই নিয়ম কেবলমাত্র লাইভ স্টক প্রাইস নয়, বরং সেই স্টকের নাম, কোড নাম, অথবা এমন কোনও উপাদানের উপর প্রযোজ্য হবে যা বিনিয়োগের সুপারিশ করে।

SEBI সার্কুলারে কী বলা হয়েছে?

SEBI-র সার্কুলারে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি কেবলমাত্র স্টক মার্কেটের শিক্ষা দিচ্ছে, তাহলে তাকে কোনও ধরণের বিনিয়োগ পরামর্শ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। এর অর্থ হল, যদি কোনও অনধিকৃত ব্যক্তি স্টক মার্কেটের পরামর্শ দেয়, “শিক্ষা”র নামে হলেও, তাকে SEBI-র অনুমতি দেওয়া হবে না।

ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের উপর কী প্রভাব পড়বে?

এই নতুন নিয়মের সবচেয়ে বেশি প্রভাব সেই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সক্রিয় ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের উপর পড়বে, যারা লাইভ মার্কেট আপডেটস, ট্রেডিং টিপস ও বিনিয়োগ পরামর্শের মাধ্যমে তাদের ফলোয়ারদের আকর্ষণ করত। এর আগে, অক্টোবর ২০২৪ সালে SEBI আরও একটি সার্কুলার জারি করেছিল, যাতে পঞ্জীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনধিকৃত ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। এখন এই নতুন নিয়মের সাথে, ফিনইনফ্লুয়েন্সাররা “শিক্ষা”র নামেও অনধিকৃত ট্রেডিং পরামর্শ দিতে পারবে না।

SEBI সার্কুলারের মূল বিষয়গুলি

•    অপ্রমাণিত বিনিয়োগ পরামর্শের অনুমতি নেই: কেবলমাত্র SEBI-র দ্বারা পঞ্জীকৃত পেশাদাররা স্টক মার্কেট সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে পারবেন।
•    মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নিষিদ্ধ: কোনও ব্যক্তি গ্যারান্টিড প্রফিট অথবা নির্দিষ্ট রিটার্নের দাবি করতে পারবে না, যতক্ষণ না SEBI এর অনুমতি দেয়।
•    কোম্পানিগুলিও দায়ী থাকবে: যদি কোনও আর্থিক কোম্পানি এমন ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে যুক্ত থাকে যারা মিথ্যা দাবি করছে, তাহলে SEBI তাকেও দায়ী করবে।
•    শিক্ষার অনুমতি, কিন্তু গোপন পরামর্শ নয়: স্টক মার্কেটের শিক্ষা দেওয়া ঠিক আছে, কিন্তু এরই মধ্যে বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া অথবা ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
•    বিজ্ঞাপন স্বচ্ছ হতে হবে: SEBI-র কাছে পঞ্জীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলি কোনও ফিনইনফ্লুয়েন্সারের সাথে বিজ্ঞাপন অংশীদারিত্ব অথবা প্রমোশনাল ডিল করতে পারবে না।
•    গোপন লেনদেন নিষিদ্ধ: টাকা, রেফারাল অথবা কাস্টমার ডেটার গোপন লেনদেনের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
•    কঠোর ব্যবস্থার প্রস্তাব: নতুন নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানা, স্থগিতাদেশ অথবা SEBI পঞ্জীকরণ বাতিল করা হতে পারে।

SEBI-কে কেন এই পদক্ষেপ নিতে হল?

আজকাল YouTube, Instagram ও Telegram-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের দাপট বেড়েছে। তবে, এই ফিনইনফ্লুয়েন্সারদের অনেকেই “শিক্ষা”র নামে স্টক টিপস ও বিনিয়োগ পরামর্শ বিক্রি করছিল, যার ফলে ছোট বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছিল।

SEBI দেখেছে যে, এই ফিনইনফ্লুয়েন্সাররা পেইড মেম্বারশিপ, কোর্স ও ব্যক্তিগত গ্রুপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে স্টক টিপস বিক্রি করছিল, যার ফলে ছোট বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এই কঠোর ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল সেই অনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ পরামর্শদাতাদের রোখা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারের স্বচ্ছতা বজায় রাখা।

ফিনইনফ্লুয়েন্সার ইন্ডাস্ট্রির উপর প্রভাব

এই নতুন নিয়মের পর, অনেক ফিনইনফ্লুয়েন্সারকে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। লাইভ স্টক ডেটা ব্যবহার করতে না পারার ফলে তাদের কন্টেন্টের জনপ্রিয়তা কমতে পারে। তাদের অথবা SEBI-র কাছ থেকে পঞ্জীকরণ নিতে হবে অথবা তাদের কৌশল সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে হবে।

SEBI-র নতুন নিয়ম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে স্টক মার্কেটের শিক্ষা ও বিনিয়োগ পরামর্শের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকতে হবে। এখন ফিনইনফ্লুয়েন্সার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের কন্টেন্ট ও কার্যকলাপে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। যারা এই নিয়ম ভঙ্গ করবে, তাদের SEBI-র কঠোর ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।