কখনো ভেবে দেখেছেন, শুধুমাত্র মনে মনে চিন্তা করলেই আপনার মোবাইল নিজেই চলতে শুরু করবে? স্ক্রিন ছোঁয়ার কোনো প্রয়োজন ছাড়াই মেসেজ পাঠাতে পারবেন? এখন এটি আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে পরিণত হয়েছে! এলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিঙ্ক মানুষের মস্তিষ্কের সাহায্যে কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের প্রথম বৃহৎ মানব পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
এই ব্রেন চিপ প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন মানুষ শুধুমাত্র চিন্তা করার মাধ্যমেই টাইপ করতে পারবে, গেম খেলতে পারবে এবং এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবে—মাউস, কিবোর্ড বা টাচ স্ক্রিন ছাড়াই। এটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিপ্লবী মুহূর্ত, এলন মাস্ক টুইট করেছেন।
কিভাবে কাজ করে নিউরালিঙ্ক ব্রেন চিপ?
নিউরালিঙ্কের ইমপ্লান্ট একটি অত্যন্ত পাতলা, ক্ষুদ্র চিপ, যা মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রো-সার্জারির মাধ্যমে ইমপ্লান্ট করা হয়। এই চিপ নিউরনের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পড়ে এবং তাকে ডিজিটাল কমান্ডে রূপান্তরিত করে।
অর্থাৎ: যখন আপনি কিছু ভাবেন—যেমন ফেসবুক খুলুন অথবা মেসেজ পাঠান—তখন চিপ সেই চিন্তাকে কম্পিউটার সিগন্যালে রূপান্তরিত করে এবং আপনার ফোন সেই কাজটি করে।
প্রথম পরীক্ষা কেমন হয়েছিল?
২০২৫ সালের শুরুতে নিউরালিঙ্ক প্রথম ব্রেন ইমপ্লান্ট করেছিল একজন ২৯ বছর বয়সী যুবকের উপর, যিনি মেরুদণ্ডের আঘাতের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের সাহায্যে একটি অন-স্ক্রিন কিবোর্ড ব্যবহার করেছিলেন
- WhatsApp-এ মেসেজ পাঠিয়েছে
- YouTube খুলেছে
- এবং Minecraft গেমও খেলেছে—একটি বোতামও ছাড়া!
এখন কি কি হতে পারে?
- মস্তিষ্কের মাধ্যমে টাইপিং, গেমিং এবং অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ
- অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য নতুন আশা
- AI এবং ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেসের সমন্বয়—অর্থাৎ সুপারহিউম্যান ক্ষমতা
- কিছু বিশেষজ্ঞ এমনকি বলছেন যে আগামী দিনে মানুষ "চিন্তা করে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ" করবে—টাচস্ক্রিন, মাউস, কিবোর্ডের মতো জিনিসগুলি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।
ভারতে এর আলোচনা কেন হচ্ছে?
AI এবং নিউরোসায়েন্সের মিল ভারতীয় হেলথটেক এবং এডটেক শিল্পেও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। IIT দিল্লি এবং IISc বেঙ্গালুরু'র মতো প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি ভারতে আনার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি আমরা এই প্রযুক্তি সঠিকভাবে গ্রহণ করি, তাহলে হাজার হাজার differently abled মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে, বলেন ডাঃ শরদ মালহোত্রা, একজন নিউরো-বিজ্ঞানী।
কিন্তু ঝুঁকিও আছে…
এই প্রযুক্তির সাথে কিছু বড় নৈতিক এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নও জড়িত:
- মস্তিষ্কের ডেটা কেউ হ্যাক করতে পারবে কি?
- চিন্তার গোপনীয়তা কি এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে?
- সাধারণ মানুষের জন্য কি এই প্রযুক্তি নিরাপদ হবে?
নিউরালিঙ্ক আশ্বাস দিয়েছে যে তাদের কাছে মিলিটারি-গ্রেড এনক্রিপশন এবং বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি সিস্টেম রয়েছে যা ডেটা সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত রাখে। মানুষ + AI-এর এই নতুন সংমিশ্রণ আমাদের এমন এক যুগে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে চিন্তাই হবে সবচেয়ে বড় কমান্ড। এখন আপনাকে আপনার ফোন ছোঁয়ার প্রয়োজন হবে না—শুধু ভাববেন, এবং সে নিজেই সব করে দেবে।