ভারতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর ব্যবহার এখন আর কেবলমাত্র ডেটা এনালাইসিস বা চ্যাটবট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। প্রযুক্তি জগৎ এখন সেই স্থানে পৌঁছেছে যেখানে AI নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে, তাও মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এই নতুন প্রযুক্তিগত লাফের নাম হল এজেন্টিক AI (Agentic AI) – অর্থাৎ এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে।
সম্প্রতি Salesforce কর্তৃক প্রকাশিত একটি গ্লোবাল রিপোর্টে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে ভারত সহ সারা বিশ্বে এজেন্টিক AI-এর চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের মানবসম্পদ (HR) সেক্টরে এই প্রযুক্তি নতুন বিপ্লবের দিকে ইঙ্গিত করছে।
এজেন্টিক AI: কি এই প্রযুক্তি?
Agentic AI এমন একটি AI প্রযুক্তিকে বলা হয় যা কোনও মানুষের সাহায্য বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে, সমস্যা সমাধান করতে এবং কার্যক্রম গ্রহণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ঐতিহ্যগত AI থেকে অনেক এগিয়ে, কারণ এতে স্বায়ত্তশাসন বা স্বনির্ভরতা রয়েছে। এক প্রকার এটি ‘ডিজিটাল কর্মী’ হিসাবে কাজ করে, যা কেবলমাত্র আদেশ বুঝতে পারে না, বরং নিজেই কৌশল তৈরি করতে পারে।
রিপোর্টে কি তুলে ধরা হয়েছে?
Salesforce-এর এই রিপোর্টে বিশ্বজুড়ে ২০০ CHRO (Chief Human Resource Officers)-এর মতামত নেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ২০২৭ সালের মধ্যে Agentic AI গ্রহণের হার ৩৮৩% বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি একটি চমকপ্রদ সংখ্যা, যা দেখায় যে ভারত কত দ্রুত ডিজিটাল কর্মীশক্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, রিপোর্টে এটিও বলা হয়েছে যে আগামী দুই বছরে AI এজেন্ট ব্যবহারের ফলে উৎপাদনশীলতা গড়ে ৪১.৭% বৃদ্ধি পেতে পারে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলি কম সময়ে আরও বেশি এবং উন্নত কাজ পেতে পারবে।
ভারতীয় HR নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি
- ভারতে HR ক্ষেত্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা Agentic AI নিয়ে বেশ উৎসাহিত।
- ৮৮% CHRO মনে করেন এই প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য তাদের কর্মীদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
- ২৪.৭% কর্মীর ভূমিকায় পরিবর্তন সম্ভব, কারণ এখন মানুষের সাথে ডিজিটাল এজেন্টরাও কাজ করবে।
- ৮১% HR নেতা মনে করেন দলবদ্ধ কাজ, যোগাযোগের মতো নরম দক্ষতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Salesforce-এর প্রেসিডেন্ট এবং চিফ পিপল অফিসার, নাথালি স্কারডিনো বলেছেন, “প্রতিটি সেক্টরকে তাদের চাকরির পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এখন কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, বরং মানবিক এবং কৌশলগত দক্ষতার মিশ্রণ প্রয়োজন।”
ডিজিটাল শ্রম হচ্ছে নতুন মানদণ্ড
এক সময় AI কে সাপোর্ট টুল হিসাবে দেখা হত, কিন্তু এখন এটি কোর কর্মীশক্তির অংশ হয়ে উঠছে। রিপোর্ট অনুসারে, আগামী ৫ বছরে ৮৫% ভারতীয় HR কর্মকর্তা মনে করেন যে মানব কর্মী এবং ডিজিটাল এজেন্ট মিলে একটি দল হিসাবে কাজ করবে।
যদিও, বর্তমান অবস্থা হল যে মাত্র ১২% CHRO Agentic AI তাদের সংগঠনে সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করেছে। অর্থাৎ বেশিরভাগ কোম্পানি এখনও এই পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
AI এবং মানব দক্ষতার ভারসাম্য প্রয়োজন
Agentic AI-এর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য কীভাবে তৈরি করা যায়। প্রযুক্তি যদিও সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে তাতে মানবিক অনুভূতি, নীতি এবং সহানুভূতি থাকে না।
তাই ভারতে কোম্পানিগুলিকে উচিত কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত কাঠামোতেই বিনিয়োগ না করে, বরং তাদের কর্মীদের পুনঃদক্ষতা এবং উচ্চ দক্ষতা অর্জনেও মনোযোগ দেওয়া।
কর্মীদের উদ্বেগ এবং সচেতনতার অভাব
রিপোর্টে একটি আকর্ষণীয় দিক এটিও উঠে এসেছে যে ৬০% এর বেশি HR কর্মকর্তার মনে হয় যে তাদের কর্মীরা এখনও বুঝতে পারেনি যে AI তাদের কর্মজীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে।
এই থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে যেখানে একদিকে নেতৃত্ব এই প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত, অন্যদিকে কর্মীদের এখনও এর ব্যবহারিকতা, ভূমিকা এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলি নিয়ে স্পষ্টতা নেই।