মুম্বই উচ্চ ন্যায়ালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI) কে ধাক্কা দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কোচি টাস্কার্স কেরালার পক্ষে রায় দিয়েছে।
খেলাধুলার খবর: ক্রিকেটের জগতে তার প্রশাসনিক কঠোরতা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধতার জন্য বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI) এবার বড় ধাক্কা খেয়েছে। মুম্বই হাই কোর্ট আইপিএল থেকে বাদ দেওয়া দল কোচি টাস্কার্স কেরালার পক্ষে ঐতিহাসিক রায় দিয়ে BCCI কে ৫৩৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এই রায়টি এক দশকের পুরানো একটি বিরোধের সাথে জড়িত, যেখানে কোচি ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই লীগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে মধ্যস্থতার রায়ে কোনো "স্পষ্ট অবৈধতা" পাওয়া যায়নি, তাই BCCI-এর আবেদন খারিজ করা হচ্ছে।
সম্পূর্ণ ঘটনা কী?
২০১০ সালে আইপিএল-এ দুটি নতুন দল - পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া এবং কোচি টাস্কার্স কেরালা - যুক্ত হয়েছিল। কোচি টাস্কার্স কেরালার ফ্র্যাঞ্চাইজি রেন্ডেভুজ স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড (RSW)-এর নেতৃত্বে একটি গ্রুপকে দেওয়া হয়েছিল, যা পরে কোচি ক্রিকেট প্রাইভেট লিমিটেড (KCPL) পরিচালনা করেছিল। দলটি ২০১১ সালের আইপিএল মৌসুম খেলেছিল, কিন্তু BCCI অভিযোগ করেছিল যে দলটি প্রয়োজনীয় ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং পরের বছরই তাদের চুক্তি বাতিল করে দেয়।
মধ্যস্থতায় মামলা
২০১২ সালে KCPL এবং RSW BCCI-এর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া শুরু করে। তাদের দাবি ছিল যে দলটিকে বাদ দেওয়া অন্যায় এবং অবৈধ ছিল। বছরব্যাপী শুনানির পর, ২০১৫ সালে মধ্যস্থতাকারী প্যানেল কোচি টাস্কার্সের পক্ষে রায় দেয়। এই রায় অনুযায়ী: BCCI কে KCPL কে ৩৮৪.৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এছাড়াও RSW কে ১৫৩.৩ কোটি টাকা সুদ এবং আইনি খরচ হিসাবে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। BCCI এই রায় মুম্বই হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল, কিন্তু আদালত বিচারপতি আর চাগলার নেতৃত্বে রায় দিয়ে বলেছে যে মধ্যস্থতার রায়ে এমন কোনো ত্রুটি নেই যা আদালতের হস্তক্ষেপকে যুক্তিসঙ্গত করে। আদালত বলেছে যে BCCI কে আর দেরি না করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কোচি টাস্কার্স কেরালার পারফরম্যান্স কেমন ছিল?
আইপিএল-এর ইতিহাসে কোচি টাস্কার্স কেরালা কেবলমাত্র এক মৌসুম - ২০১১ - খেলেছিল। সেই মৌসুমে:
- দলটি ১৪ টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৬ টি ম্যাচে জয়ী হয়েছিল।
- ৮ টি ম্যাচে হেরেছিল।
- দলটি ১২ পয়েন্ট নিয়ে ৮ম স্থানে মৌসুম শেষ করে।
- মোট ১০ টি দলের প্রতিযোগিতায় তাদের অবস্থান ছিল মধ্যম।
- যদিও পারফরম্যান্স চমৎকার ছিল না, কিন্তু দলের বিরুদ্ধে চুক্তি বাতিল করার মতো বড় পদক্ষেপকে অযৌক্তিক বলা হয়েছে।
BCCI-এর ভাবমূর্তিকে ধাক্কা?
BCCI বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থা হিসাবে পরিচিত। কিন্তু এই ঘটনায় যেমনভাবে তারা পর্যাপ্ত আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে বাদ দিয়েছে, তা তাদের স্বচ্ছতা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরে। উল্লেখযোগ্য যে আদালত এটাও দেখেছে যে BCCI-র মতো প্রতিষ্ঠানকেও নিয়ম মেনে চলতে হবে, এবং কোনো বাণিজ্যিক চুক্তিতে मनमानी চলতে পারে না।