এনসিইআরটির নতুন বই: সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস থেকে মুঘল, দিল্লি সালতানাত বাদ

এনসিইআরটির নতুন বই: সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস থেকে মুঘল, দিল্লি সালতানাত বাদ
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

এনসিইআরটির সপ্তম শ্রেণীর নতুন বই থেকে দিল্লি সালতানাত ও মুঘলদের অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন এই বইগুলিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও কুম্ভ মেলা যোগ্যতামূলক বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষা: নতুন এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বিশেষ করে সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যক্রমে লক্ষণীয়। এই বই থেকে মুঘল ও দিল্লি সালতানাত সম্পর্কিত সকল তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে, ভারতীয় রাজবংশ, কুম্ভ মেলা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ জাতীয় ভারত সরকারের উদ্যোগগুলিকে নতুন অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো (NCFSE) ২০২৩ অনুযায়ী স্কুলে শিক্ষায় ভারতীয় ঐতিহ্য ও জ্ঞান ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। এই পরিবর্তনগুলি ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজকে সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করার জন্য করা হয়েছে।

মুঘল ও দিল্লি সালতানাতের উল্লেখ বাদ দেওয়া

এনসিইআরটি সপ্তম শ্রেণীর সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক থেকে মুঘল সাম্রাজ্য ও দিল্লি সালতানাতের উল্লেখ সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছে। পূর্বে এই বইগুলিতে মুঘল ও দিল্লি সালতানাত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য ছিল, যেমন: তুঘলক, খিলজি, মামলুক, লোদি রাজবংশ ও মুঘল সম্রাটদের অর্জন। এই সাম্রাজ্যগুলি সম্পর্কে অনেক পৃষ্ঠা জুড়ে আলোচনা করা হতো, যাতে তাদের সংস্কৃতি, প্রশাসন ও সামাজিক কাঠামোর উপর জোর দেওয়া হতো।

২০২২-২৩ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে, এনসিইআরটি পাঠ্যক্রমকে যুক্তিসঙ্গত করার চেষ্টা করেছিল এবং সেই সময় মুঘল ও দিল্লি সালতানাত সম্পর্কিত অধ্যায়গুলি ছোট করে দেওয়া হয়েছিল। এখন এই নতুন বইতে এই অধ্যায়গুলি সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এনসিইআরটি কর্মকর্তাদের মতে, এটি বইয়ের প্রথম খণ্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড আগামী মাসগুলিতে প্রকাশিত হবে। তবে, তারা স্পষ্ট করেননি যে, বাদ দেওয়া অধ্যায়গুলি পরবর্তী খণ্ডে ফিরে আসবে কি না।

ভারতীয় রাজবংশ ও কুম্ভ মেলায় গুরুত্ব প্রদান

নতুন পাঠ্যপুস্তকে এখন ভারতীয় ইতিহাসের উপর, বিশেষ করে প্রাচীন ভারতীয় রাজবংশগুলির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এখন বইগুলিতে মগধ, মৌর্য, শুঙ্গ, সাতবাহন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় রাজবংশ সম্পর্কিত নতুন অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই অধ্যায়গুলিতে ভারতীয় ঐতিহ্য, ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, একটি নতুন অধ্যায় যোগ করা হয়েছে যার নাম “কীভাবে ভূমি পবিত্র হয়”। এই অধ্যায়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র স্থান ও তীর্থস্থানের উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জ্যোতির্লিঙ্গ, চারধাম যাত্রা, শক্তিপীঠ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থান। এই অধ্যায়ে জওহরলাল নেহরুর একটি উক্তিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে তিনি ভারতকে তীর্থস্থানের দেশ বলে অভিহিত করেছিলেন।

নতুন বইগুলিতে কুম্ভ মেলাও উল্লেখ করা হয়েছে, যা এই বছর প্রয়াগরাণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মেলায় প্রায় ৬৬ কোটি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। তবে, বইতে সেই ভিড়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি যেখানে ৩০ জনেরও বেশি তীর্থযাত্রী মারা গেছে এবং অনেকে আহত হয়েছে।

সরকারী উদ্যোগের গুরুত্ব

নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভারত সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হল:

  • মেক ইন ইন্ডিয়া
  • বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও
  • অটল সুরঙ্গ

এই উদ্যোগগুলির উদ্দেশ্য ভারতীয় সমাজে উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করা এবং এই দিকগুলি পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করে ছাত্রছাত্রীদের সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সচেতন করা।

ভারতীয় সংবিধান নিয়ে নতুন অধ্যায়

নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভারতের সংবিধান নিয়ে একটি অধ্যায় যোগ করা হয়েছে। এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে একসময় মানুষের নিজের বাড়িতে জাতীয় পতাকা তোলার অনুমতি ছিল না। এই অধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের সংবিধানের গুরুত্ব এবং জাতীয় পতাকার মর্যাদা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

এই পরিবর্তনগুলি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজকে সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করার চেষ্টা। নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভারতীয় ঐতিহ্য, ইতিহাস ও ধর্মের বিভিন্ন দিকের উপর অধিক জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে বাচ্চারা তাদের ভারতীয় পরিচয়ের সাথে যুক্ত হতে পারে। এই পরিবর্তনটি নিশ্চিত করে যে, ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।

এই পরিবর্তনের প্রভাব

এই পরিবর্তনগুলির স্কুল শিক্ষার উপর গভীর প্রভাব পড়বে। এই পরিবর্তন ছাত্রছাত্রীদের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে, যা তাদের ভারতীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অধিক সচেতন ও সংবেদনশীল করে তুলবে। এছাড়াও, ছাত্রছাত্রীরা এই বুঝতে পারবে যে আমাদের দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি কতটা বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ।

এই পরিবর্তনগুলির উদ্দেশ্য ছাত্রছাত্রীদের তাদের সাংস্কৃতিক মূলের সাথে যুক্ত রাখা এবং তাদের ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া।

Leave a comment