তুর্কি বর্জন: জেএনইউ-এর পর এবার জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া তুর্কি সরকারের সাথে যুক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাক্ষরিত এমওইউ (MOU) স্থগিত করে দিয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও তুর্কির ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাদের চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে।
শিক্ষা: ভারত-তুর্কি সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে, দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) এবং কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় তুর্কির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সাথে চলমান তাদের চুক্তি বাতিল করার বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশপ্রেম ও জাতীয় নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এমওইউ স্থগিত করেছে
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া তুর্কি সরকারের সাথে যুক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাক্ষরিত Memorandum of Understanding (MoU) অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। জামিয়ার প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক সাইমা সইয়েদ জানিয়েছেন, আমরা তুর্কির সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের সকল সহযোগিতা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রেখেছি। জামিয়া সরকার এবং দেশের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
এই সিদ্ধান্ত ভারত-তুর্কি সম্পর্কের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এসেছে, যা স্পষ্ট করে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিও দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় তুর্কির সাথে চুক্তি ভেঙে দিয়েছে
উত্তরপ্রদেশের কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও একইভাবে তুর্কির ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে স্বাক্ষরিত এমওইউ বাতিল করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করেছে যে তারা দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থের প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো চুক্তি বা সম্পর্ক গ্রহণযোগ্য হবে না, তা শিক্ষার ক্ষেত্রে হোক বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে।
জেএনইউ-এর অগ্রণী পদক্ষেপ ও দেশপ্রেমের নজির
দেশে সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ নিয়েছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। জেএনইউ তুর্কির ইনোনু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে। জেএনইউ-এর উপাচার্য শান্তিশ্রী ডি. পণ্ডিত এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছেন, "জেএনইউ ভারতের ট্যাক্সপেয়ারদের টাকায় চালিত একটি প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের দায়িত্ব দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া। আমাদের বার্তা স্পষ্ট, জেএনইউ সম্পূর্ণরূপে দেশ ও তার সেনাবাহিনীর সাথে দাঁড়িয়ে আছে।"
তিনি আরও বলেছেন, যারা আমাদের শত্রু দেশগুলির সমর্থন করেছে, তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। তাই আমরা তুর্কির সাথে শিক্ষা সংক্রান্ত সকল চুক্তি বন্ধ করে দিয়েছি। জেএনইউতে তুর্কি ভাষার পাঠদানও এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশপ্রেমের অনুভূতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ও পর্যালোচনা শুরু করেছে
এদিকে খবর এসেছে যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষাগত চুক্তির পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছে। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে সকল এমওইউ-এর পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং পর্যালোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে দেশের অন্যান্য প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এই দিকে পদক্ষেপ নিতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত কেবল কূটনৈতিক উত্তেজনার সময় নেওয়া একটি পদক্ষেপ নয়, বরং এটি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা দেশপ্রেম ও জাতীয়তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনও। দেশের তরুণ ও শিক্ষাঙ্গনের প্রতিনিধিরা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে তারা জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং বিদেশী সহযোগিতায়ও এটাই তাদের অগ্রাধিকার।