দিল্লিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের সনাক্তকরণে বার্ষিক স্ক্রিনিং অভিযান

দিল্লিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের সনাক্তকরণে বার্ষিক স্ক্রিনিং অভিযান
সর্বশেষ আপডেট: 27-04-2025

দিল্লির শিক্ষা বিভাগ প্রতি বছর স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীর স্ক্রিনিং করে যাতে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের চিহ্নিত করা যায়। এই পদ্ধতি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক চাহিদা চিহ্নিত করার ও তার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শিক্ষা: দিল্লির সকল সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, অসাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি এবং স্থানীয় সংস্থা পরিচালিত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। শিক্ষা निदेशालয় একটি গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, এই বছরও দিল্লিতে প্রতিবন্ধীতার সনাক্তকরণের জন্য একটি বার্ষিক স্ক্রিনিং অভিযান পরিচালিত হবে। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল প্রতিবন্ধীতার সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সময়মতো চিহ্নিত করা এবং শিশুদের তাদের শিক্ষায় সাহায্য করা।

প্রতিবন্ধীতার সনাক্তকরণ সম্পর্কিত অভিযান

দিল্লি সরকারের এই প্রচেষ্টা হল প্রতিটি শিশুর পড়াশোনায় যে কোনও ধরণের অসুবিধা সময়মতো চিহ্নিত করা, যাতে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা যায়। শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক এই অভিযানের আওতায় ২১ প্রকার প্রতিবন্ধীতার সনাক্তকরণ করা হবে। এর জন্য সকল স্কুলে একটি বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, যাতে শিশুদের শিক্ষাগত যাত্রাকে সহজ ও আরও সুগম করা যায়।

এই অভিযান বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার (আরপিডব্লিউডি) আইন, ২০১৬ অনুসারে করা হচ্ছে, যাতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাগত কর্মসূচির উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়।

স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াটিকে দুটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে:

১. পর্যায় ১: ক্লাস শিক্ষক কর্তৃক প্রাথমিক পরীক্ষা

এই পর্যায়ে, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর পর্যবেক্ষণ করা হবে। এটি একটি প্রাথমিক পরীক্ষা হবে, যেখানে শিক্ষকরা শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধীতার লক্ষণগুলির প্রাথমিক মূল্যায়ন করবেন। বিশেষ করে, মনোযোগ দেওয়া হবে যে শিশুটি চলাফেরা, লেখা, খাওয়া, কথা বলা, পড়া-লেখা করতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা। যদি শিক্ষক কোনও শিশুর মধ্যে প্রতিবন্ধীতার লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তবে তাকে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য চিহ্নিত করা হবে।

২. পর্যায় ২: বিশেষ শিক্ষক বা পরামর্শদাতা কর্তৃক গভীরভাবে পরীক্ষা

এই পর্যায়ে, বিশেষ শিক্ষক বা পরামর্শদাতা কর্তৃক ছাত্রছাত্রীর গভীর মূল্যায়ন করা হবে। এই পরীক্ষাটি তখন করা হবে, যখন ক্লাস শিক্ষক কর্তৃক শিশুটিকে চিহ্নিত করা হবে। এই পর্যায়ে, প্রতিবন্ধীতার ধরণ এবং গভীরতা মূল্যায়ন করা হবে এবং এর উপর ভিত্তি করে শিশুদের জন্য শিক্ষাগত সহায়তার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

স্কুলগুলিকে কী করতে হবে?

  1. প্রশস্ত (PRASHAST) মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার: এই অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্কুলগুলিকে প্রশস্ত মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে, যা ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবন্ধীতার সনাক্তকরণ ও রেকর্ড রাখতে সহায়তা করবে।
  2. অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া (NOC): কোনও ছাত্রছাত্রীর মূল্যায়ন করার আগে, স্কুলকে অভিভাবকদের কাছ থেকে NOC (No Objection Certificate) পেতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে অভিভাবকদের শিশুর স্ক্রিনিং এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
  3. তালিকা তৈরি করা: যারা ছাত্রছাত্রী প্রতিবন্ধীতার লক্ষণ দেখায়, তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। এই তালিকা ভবিষ্যতে শিশুদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য প্রয়োজন হবে।
  4. সময়মতো প্রতিবেদন প্রণয়ন: স্কুলগুলিকে সময়মতো প্রতিবেদন প্রণয়ন করে পাঠাতে হবে, যাতে সকল ছাত্রছাত্রীর ডেটা সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করা যায়।

প্রয়োজনীয় তারিখ

  • ৩০ এপ্রিল, ২০২৫: সমস্ত শিক্ষকদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করতে হবে। এই প্রশিক্ষণে তাদের প্রতিবন্ধীতার সনাক্তকরণ ও সাহায্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হবে।
  • ২৫ জুলাই, ২০২৫: স্কুলগুলিকে তাদের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। এরপর প্রতিবেদন প্রণয়ন করে ৩১ জুলাই, ২০২৫-এর মধ্যে District Co-ordinator-কে পাঠাতে হবে।

কি বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিতে হবে?

স্কুলগুলিকে নিম্নলিখিত দিকগুলিতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, যাতে প্রতিবন্ধীতার সঠিক সনাক্তকরণ করা যায়:

  • শিশুদের চলাফেরা, লেখা ও খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা।
  • শিশুদের কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা বা অস্পষ্টতা দেখা দিচ্ছে কিনা।
  • পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে কিনা।
  • শিশুদের সামাজিক আচরণ স্বাভাবিক কিনা।
  • শিশুদের মধ্যে অত্যধিক ভয় বা কাল্পনিক জগতে হারিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা আছে কিনা।

প্রতিবন্ধীতার সনাক্তকরণের সুবিধা

এই অভিযানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল প্রতিবন্ধী শিশুরা সময়মতো শিক্ষার যথাযথ সুযোগ পাবে। শিক্ষা বিভাগের এই প্রচেষ্টা হল প্রতিটি শিশুর জীবনে প্রতিবন্ধীতার কারণে কোন বাধা না আসে। সরকারের ধারণা, যদি প্রতিবন্ধীতা দ্রুত সনাক্ত করা যায়, তবে শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাগত কর্মসূচি তৈরি করা যাবে এবং তাদের তাদের পুরো ক্ষমতা বিকাশে সুযোগ দেওয়া যাবে।

Leave a comment