প্রধানমন্ত্রী মোদী ও রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের বৈঠকে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শক্তি ও প্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত-আমেরিকা সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশল ও ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার প্রতিজ্ঞা করেছে।
PM Modi US Visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাত হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (ভারতীয় সময় শুক্রবার ভোর ৩ টায়) হোয়াইট হাউসে। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশল ও শক্তি অংশীদারিত্বসহ বহু বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশ পরবর্তী পাঁচ বছরে পারস্পরিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আসুন জেনে নিই এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ১০টি প্রধান দিক।
১. ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রধান কৌশলগত অংশীদারের মর্যাদা
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ভারতকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (ইন্দো-প্যাসিফিক) -এ একটি প্রধান কৌশলগত অংশীদার বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার ক্য়াড অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা অঞ্চলীয় শান্তি ও স্থায়িত্বকে বৃদ্ধি করবে।
২. ভারত পাবে আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও সামরিক সহযোগিতা
আমেরিকা ভারতকে অত্যাধুনিক অস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও সামরিক ব্যবস্থা সরবরাহ করবে। উভয় দেশ প্রতিরক্ষা খাতে যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।
৩. শক্তি খাতে অংশীদারিত্ব পাবে উৎসাহ
আমেরিকা এখন ভারতকে কাঁচা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি, উভয় দেশ নবায়নযোগ্য শক্তি (Renewable Energy) প্রকল্প নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে, যা ভারতের শক্তি সম্পদকে আরও শক্তিশালী করবে।
৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) -তে যৌথ উন্নয়ন
ভারত ও আমেরিকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত AI ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হবে, যা ভারতীয় স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকেও ব্যাপক উপকার করবে।
৫. বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উদ্যোগ
আমেরিকার ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অভিযোগের সমাধান করার জন্য উভয় দেশ নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।
৬. সেমিকন্ডাক্টর ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এ সহযোগিতা
ভারতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য আমেরিকা প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। উভয় দেশ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) -এ সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।
৭. ছোটো নিউক্লিয়ার মডুলার রিঅ্যাক্টরের যৌথ উন্নয়ন
ভারত ও আমেরিকা মিলে ছোটো নিউক্লিয়ার মডুলার রিঅ্যাক্টর উদ্ভাবন করবে, যা পরিষ্কার ও টেকসই শক্তি উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে এবং শক্তি চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।
৮. ভারতীয় সম্প্রদায় পাবে উন্নত কনসুলার সেবা
আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্য লস অ্যাঞ্জেলেস ও বোস্টনে নতুন ভারতীয় কনস্যুলেট খোলা হবে, যা প্রবাসী ভারতীয়দের ভিসা, পাসপোর্ট ও অন্যান্য সেবার সুবিধা দেবে।
৯. মুম্বাই হামলার অভিযুক্ত তাহওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ
২০০৮ সালের মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার অভিযুক্ত তাহওয়ুর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হবে। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট এই প্রত্যর্পণে অনুমতি দিয়েছে, যা ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিকে পূরণ করবে।
১০. সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান
ভারত ও আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উভয় দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের অর্থায়ন বন্ধ করা, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
