মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাম্প ইরানকে চূড়ান্ত সুযোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমেরিকা চায় ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করে। যুদ্ধবিরতির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু সংঘাতও তীব্র হচ্ছে।
ট্রাম্প-ইরান: মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই সংকটের মধ্যে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে তিনি কোন যুদ্ধবিরতি আনতে নয়, বরং কিছু "বড়" করার উদ্দেশ্যে ফিরে এসেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে শেষ সুযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু এটি সম্পূর্ণরূপে আমেরিকার শর্তের উপর নির্ভর করবে—বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার শর্তে। অন্যদিকে, আমেরিকান প্রশাসনের ভেতরে এই ব্যাপারে গভীর মতবিরোধ রয়েছে যে আমেরিকাকে এই সংঘাতে কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের মধ্যে ট্রাম্পের প্রবেশ
মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প G7 শীর্ষ সম্মেলন থেকে অর্ধেক পথে ছেড়ে কানাডা থেকে ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি কেবল শান্তি আলোচনা করানোর জন্য নয়, বরং কোনও বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ফিরে আসছেন।
ট্রাম্প আগেও বহুবার ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিরতি আনার জন্য আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও বাস্তব ফলাফল পাওয়া যায়নি। এখন যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘাত চলছে, ট্রাম্প এটিকে একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছেন—একটি ‘শেষ সুযোগ’ হিসেবে।
আমেরিকার প্রস্তাব: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা
‘দ্য যিরুশালেম পোস্ট’-এর প্রতিবেদনের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে একটি নতুন প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রস্তাব আগের তুলনায় কিছুটা নমনীয় হতে পারে, কিন্তু এর কেন্দ্রীয় শর্ত একই থাকবে—শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। আমেরিকা চায় ইরান যেন কোনও পর্যায়েই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে, যাতে সে কখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
এই প্রস্তাবকে শেষ সুযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। এটি ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করার আমেরিকার কৌশলগত অংশ, যার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনায় শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে পারবে।
আলোচনার জন্য কাতার ও ওমান থেকে মধ্যস্থতা
ইরান, যা বর্তমানে ইসরায়েলি আক্রমণে ঘেরা, যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক পথ খুঁজে পেতে চেষ্টা করছে। এই উদ্দেশ্যেই তিনি কাতার ও ওমানের মাধ্যমে আমেরিকার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। সৌদি আরবও পর্দার আড়াল থেকে মধ্যস্থতা করছে যাতে যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন যে ইসরায়েলি আক্রমণ রোধ করার জন্য ইরান আমেরিকার সাথে যোগাযোগ করেছে। তিনি এটাও বলেছেন যে ইরানকে বুঝতে হবে যে তারা এই যুদ্ধ জিততে পারবে না এবং আলোচনার জন্য ফিরে আসাই তাদের স্বার্থে হবে।
ইসরায়েলের অবস্থান: ‘মিথ্যা আলোচনা’ থেকে সতর্ক
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই আলোচনা প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর অবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন। তিনি আমেরিকান মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ইরানের চেষ্টা কেবল সময় কেনার। নেতানিয়াহু ইরানকে মিথ্যা কথা বলা এবং আমেরিকাকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ করেছেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করে যে ইরানের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বাস্তব প্রস্তাব আসেনি এবং যতক্ষণ না কোনও নির্ণায়ক কথা হয়, ততক্ষণ ইসরায়েল সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখবে।
আমেরিকার দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গি
আমেরিকান প্রশাসনের ভেতরেও এই সংঘাতে সরাসরি জড়িত থাকা নিয়ে মতবিরোধ গভীর হচ্ছে। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) মনে করে যে আমেরিকাকে এই সংঘাতে ইসরায়েলের পাশে থাকা উচিত, কিন্তু ট্রাম্প সমর্থক গোষ্ঠী ও কিছু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের মতামত এর থেকে আলাদা। তারা মনে করে যে আমেরিকাকে এই যুদ্ধ থেকে দূরে থাকা উচিত এবং কেবল কৌশলগত চাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
প্রাক্তন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিফেন্স সেক্রেটারি ড্যান শাপিরো-এর মতে, ট্রাম্প এখনও পর্যন্ত কোনও সামরিক আক্রমণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে, তিনি ইরানকে কূটনৈতিক টেবিলে আনার জন্য যুদ্ধের হুমকির ব্যবহার করছেন।
সামরিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ, কিন্তু সিদ্ধান্ত বাকি
আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তর মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিমানবাহী জাহাজ এবং প্রায় ৩০টি জ্বালানি ট্যাঙ্কার বিমান মোতায়েন করেছে। সূত্রের মতে, যদি ট্রাম্প সামরিক অভিযানের অনুমতি দেন, তাহলে আমেরিকা সেই পরিকল্পনাটি অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই পদক্ষেপটি বর্তমানে কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করার জন্য। ট্রাম্প এই পরিস্থিতিটিকে একটি উন্নত চুক্তির জন্য ব্যবহার করতে চান, যার ফলে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে আমেরিকার শর্ত মানতে হবে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি বলেছেন যে এই যুদ্ধ ইরান শুরু করেনি এবং এটিকে অব্যাহত রাখার তাদের কোনও আগ্রহ নেই। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে "ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল" বলে অভিহিত করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে নেতানিয়াহু দশক ধরে আমেরিকাকে তার যুদ্ধগুলিতে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
আরাঘচি বলেছেন যে যদি ট্রাম্প সত্যিই কূটনীতিতে আগ্রহী হন, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ তাদের। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে যতক্ষণ না ইসরায়েল তার আগ্রাসন বন্ধ করে, ততক্ষণ ইরানও পিছু হটবে না।