ইরান ইজরায়েলের উপর একসাথে ১০০টি শাহেদ-১৩৬ আত্মঘাতী ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এই ড্রোনগুলি ১৮০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং ৪০-৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক বহন করতে পারে। জর্ডান এবং ইজরায়েল এগুলিকে আটকাতে ব্যস্ত।
শাহেদ-১৩৬: ইরান ইজরায়েলের উপর একসাথে ১০০টি শাহেদ-১৩৬ আত্মঘাতী ড্রোন নিক্ষেপ করে বৃহৎ সামরিক চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছে। এই ড্রোনগুলি প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে এবং প্রতিটিতে ৪০-৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক রয়েছে। যদিও এগুলির গতি ধীর, তবে বৃহৎ সংখ্যায় আক্রমণের মাধ্যমে সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জর্ডান এবং ইজরায়েল মিলে এগুলিকে আটকাতে ব্যস্ত। জেনে নিন এই ড্রোনগুলির প্রকৃত শক্তি কী এবং এই আক্রমণের পরবর্তী ধাপ কী হবে।
ইরানের বৃহৎ আক্রমণ: ১০০ শাহেদ-১৩৬ ড্রোন একসাথে উৎক্ষেপণ
ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা এখন প্রকাশ্যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। ১৩ জুন ইজরায়েল কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটিতে বৃহৎ আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে ইরান এখন ইজরায়েলের উপর একটি অত্যন্ত কৌশলগত আক্রমণ চালিয়েছে। এই আক্রমণের অংশ হিসেবে ইরান প্রায় ১০০টি শাহেদ-১৩৬ আত্মঘাতী ড্রোন ইজরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছে।
এই ড্রোনগুলির লক্ষ্য ইজরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি, প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এই আক্রমণ ধীর হলেও ইজরায়েলের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপক এবং একাধিক স্তরে চ্যালেঞ্জ করে।
শাহেদ-১৩৬ ড্রোন: এই অস্ত্র কী?
শাহেদ-১৩৬ হল একটি লয়েটারিং মিউনিশন বা আত্মঘাতী ড্রোন, যা ইরান তার সস্তা কিন্তু প্রাণঘাতী অস্ত্রের তালিকায় যুক্ত করেছে। এই ড্রোনটি একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি, অর্থাৎ এটি তার লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে নিজেই বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। ইরান এর আগেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এটি ব্যবহার করেছে।
মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
পরিসর: ২০০০ থেকে ২৫০০ কিলোমিটার
গতি: ১৮০-২০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা
বিস্ফোরক ক্ষমতা: ৪০-৫০ কিলোগ্রাম
উচ্চতা: ৩০০০-৪০০০ মিটার
ডিজাইন: কম খরচে, প্রোপেলার-চালিত, রাডারে দৃশ্যমান
উদ্দেশ্য: বৃহৎ সংখ্যায় "সোয়ার্ম আক্রমণ" করা
কিভাবে আক্রমণ করে, এবং কেন এটি বিপজ্জনক?
শাহেদ-১৩৬ ড্রোন যদিও আধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত নয়, তবে এর প্রকৃত অস্ত্র হল এর সংখ্যা। একসাথে ১০০টি ড্রোন নিক্ষেপ করলে যেকোনো দেশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অতিরিক্ত বোঝা দেওয়া সম্ভব।
যদি একটিও ড্রোন বেঁচে যায় এবং কোনো সামরিক ঘাঁটি বা নাগরিক এলাকায় পড়ে, তাহলে প্রচুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বিস্ফোরক ক্ষমতা এতটাই যে ৫০-১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বিধ্বংস সাধন করতে পারে।
ইজরায়েলে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে?
শাহেদ-১৩৬-এর গতি ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ইরান থেকে ইজরায়েলের দূরত্ব প্রায় ১৬০০-১৮০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এই ড্রোনগুলি ইজরায়েলে পৌঁছাতে গড়ে ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগবে।
পরিস্থিতির মূল্যায়ন:
- ড্রোন নিক্ষেপের ২-৩ ঘণ্টা পর জর্ডানের বিমান বাহিনী এগুলিকে আটকাতে শুরু করে
- IDF (ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস)-এর মতে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এগুলি ইজরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করতে পারে
- জর্ডান, ইরাক এবং ইজরায়েলের বিমান বাহিনী সক্রিয়ভাবে এগুলিকে আটক করছে
জর্ডান এবং ইজরায়েলের বায়ু সুরক্ষা কেমন?
ইরানের ড্রোন আক্রমণের পর জর্ডান তার বায়ুসীমা সম্পূর্ণরূপে সতর্ক করে তুলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, জর্ডানের সীমান্তেই কয়েক ডজন ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। জর্ডানের এই পদক্ষেপ ইজরায়েলের জন্য বড় স্বস্তি।
ইজরায়েলের পক্ষ থেকে F-35 যুদ্ধবিমান এবং প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছে। IDF স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তাদের উদ্দেশ্য এই ড্রোনগুলি ইজরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করার আগেই আটকানো।