কানাডায় G-7 শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন হচ্ছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীসহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত আছেন। ভারত আউটরিচ পার্টনার হিসেবে যোগদান করেছে। শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিষয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে।
G-7 শীর্ষ সম্মেলন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমানে তিনটি দেশ ভ্রমণে রয়েছেন। এই ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্ব হল কানাডা, যেখানে তিনি ১৬ ও ১৭ জুন অনুষ্ঠিত G-7 শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। এই শীর্ষ সম্মেলন কানাডার ক্যানানাস্কিস শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী আউটরিচ পার্টনার হিসেবে এতে অংশ নিচ্ছেন। ভারত G-7-এর সদস্য নয়, কিন্তু কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-এর বিশেষ আমন্ত্রণে ভারতকে এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
২০১৫-এর পর প্রথম ভ্রমণ
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এটি ২০০৯ সালের পর প্রথম কানাডা ভ্রমণ। এই সময় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব নেতার সাথে দেখা করবেন। সম্মেলনের বাইরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও তাঁর অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাশাপাশি এই শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন এবং মেক্সিকোর মতো দেশের নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। মোট ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই মঞ্চে একত্রিত হচ্ছেন।
কাদের সাথে দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী?
G-7 শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ্, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে দেখা করবেন। এছাড়াও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোরের সাথেও তাঁর আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সভাগুলি কেবল ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে না, বরং কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকেও আরও সম্প্রসারিত করবে।
G-7-এর ভূমিকা এবং ভারতের অংশগ্রহণ
G-7 শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বের সাতটি সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতির একটি মঞ্চ। এতে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং জাপান অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এর অংশ। পূর্বে এই গোষ্ঠী G-8 ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর তাকে গোষ্ঠী থেকে বাদ দেওয়া হয়। ভারত G-7-এর স্থায়ী সদস্য নয়, কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তাকে আউটরিচ পার্টনার হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ক্রমিকভাবে ষষ্ঠ G-7 শীর্ষ সম্মেলন।
কী বিষয় নিয়ে ভারত বক্তব্য দেবে?
এই বার G-7 শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের (Global South) কণ্ঠস্বর হিসেবে উঠে আসছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই মঞ্চে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তি সহযোগিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে তার ভূমিকার কারণে তার মতামত গুরুত্বের সাথে শোনা হবে।
ভারত-কানাডা সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের আশা
গত কয়েক বছর ধরে ভারত এবং কানাডার সম্পর্কে উত্তেজনার পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। বিশেষ করে খালিস্তান ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই শীর্ষ সম্মেলনের সুযোগে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় শক্তিশালী করার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
ইউক্রেন এবং মেক্সিকোর অংশগ্রহণও আলোচনার বিষয়
ভারতের মতো ইউক্রেন এবং মেক্সিকোও G-7-এর সদস্য নয়, কিন্তু এ বছর তাদেরও শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধানের অংশগ্রহণ নিয়ে বিশেষ আলোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোর প্রথমবারের মতো G-7 শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপস্থিতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য কানাডায় এসে পৌঁছেছেন। তার বিমান রবিবার রাতে কানাডার আলবার্টা প্রদেশের ক্যালগারিতে অবতরণ করে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন, যেখানে তিনি অনেক বিশ্ব নেতার সাথে দেখা করবেন। বাইডেন এবং ট্রুডোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনারও সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভ্রমণ কর্মসূচী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমানে তিনটি দেশ ভ্রমণে রয়েছেন। প্রথমে তিনি সাইপ্রাস ভ্রমণ করেন, তারপর কানাডায় আসেন এবং এর পর তিনি ক্রোয়েশিয়া যাবেন। এই ভ্রমণ 'অপারেশন সিন্দুর'-এর সাফল্যের পর তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ভ্রমণ। এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা নয়, বরং ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করা।