চীনের দ্বৈত নীতি: পাহালগাম হামলার নিন্দা ও পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন

চীনের দ্বৈত নীতি: পাহালগাম হামলার নিন্দা ও পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন
সর্বশেষ আপডেট: 11-05-2025

চীন জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা জানিয়েছে, একই সাথে পাকিস্তানকে ‘আয়রন ক্ল্যাড ফ্রেন্ড’ বলে অভিহিত করে তাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ওয়াং ই ইশাক ডারের সাথে আলোচনায় পাকিস্তানের সমর্থন করেছেন, অন্যদিকে ডোভালের সাথে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: চীনের সাম্প্রতিক নীতি তাদের এমন একটি দেশ হিসেবে তুলে ধরেছে, যারা একই সাথে উভয় পক্ষের প্রতি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। একদিকে চীন জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা জানিয়েছে, অন্যদিকে তারা পাকিস্তানকে তাদের ‘লোহার মতো শক্তিশালী বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছে। এই ঘটনা চীনের দ্বৈত নীতিকে উন্মোচন করে, যার অধীনে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে, কিন্তু পাকিস্তানকে তাদের কৌশলগত মিত্র হিসেবে সমর্থনও অব্যাহত রাখে।

পাহালগাম হামলার উপর চীনের নিন্দা

২২শে এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা সমগ্র অঞ্চলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই হামলায় ভারতীয় সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের প্রাণহানি ঘটেছিল, এবং এ নিয়ে সমগ্র বিশ্ব উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। চীনও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারতের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাথে টেলিফোনে কথা বলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

চীন স্পষ্ট করে বলেছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরোধী এবং এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ওয়াং বলেছেন যে উভয় দেশ—ভারত এবং পাকিস্তান—সংযম অবলম্বন করে পারস্পারিক মতবিরোধ সমাধানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও, চীন আরও বলেছে যে তারা সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি ব্যাপক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, যা কেবলমাত্র ভারত ও পাকিস্তান নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপকারে আসবে।

পাকিস্তানের প্রতি চীনের সমর্থন

যদিও, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর এই বক্তব্য পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ইশাক ডারের সাথে আলোচনার সময়, ওয়াং পাকিস্তানকে ‘আয়রন ক্ল্যাড ফ্রেন্ড’ (লোহার মতো শক্তিশালী বন্ধু) বলে অভিহিত করেছেন। চীন পাকিস্তানের প্রতি তাদের অঙ্গীকার বারবার পুনর্ব্যক্ত করেছে, এমনকি তাদের ‘সকল মৌসুমের কৌশলগত অংশীদার’ বলেও অভিহিত করেছে।

চীনের এই পদক্ষেপকে আবারও সেই নীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যাতে তারা পাকিস্তানকে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে মনে করে এবং সমর্থন করে, যদিও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিচ্ছে।

পাকিস্তানের সাথে চীনের স্থায়ী সম্পর্ক

চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘ দশকের পুরনো এবং উভয় দেশই বহু সংকট সত্ত্বেও তাদের অংশীদারিত্বকে দৃঢ় রেখেছে। ওয়াং ই-এর বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে চীন পাকিস্তানকে কেবলমাত্র কৌশলগত অংশীদার হিসেবেই নয়, বরং তাদের জাতীয় স্বার্থ পূরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও মনে করে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাধীনতার সমর্থনে চীনের নীতিকে কেন্দ্র করে বিশেষজ্ঞদের মতামত মিশ্র। যেখানে কেউ কেউ এটিকে একটি স্থির কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করেন, অন্যরা এটিকে পাকিস্তানের প্রতি চীনের ঝুঁকে পড়া হিসেবে দেখছেন।

চীনের দ্বৈত নীতি নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই দ্বৈত নীতি প্রশ্নবিদ্ধ। চীন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে, যারা নিজেরাই সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করার জন্য কুখ্যাত। চীনের এই নীতি বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলছে, বিশেষ করে যখন তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু পাকিস্তানের সাথে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বও বজায় রাখছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি

চীনের এই নীতির মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সামরিক সংঘাতের পর, উভয় দেশ যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সম্মত হয়। এই যুদ্ধবিরতির পর, অনেক দেশ এটিকে মধ্যস্থতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যেখানে চীন, আমেরিকা এবং সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু ভারত এটিকে সম্পূর্ণরূপে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফলাফল বলে উল্লেখ করে এবং এই প্রক্রিয়ায় কোনও বহিরাগত হস্তক্ষেপকে অস্বীকার করেছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত এখনও পর্যন্ত এই সম্পূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের উপর কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি, কিন্তু কূটনৈতিক মহলে এটিকে চীনের দ্বৈত নীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত দেখবে যে আগামী দিনগুলিতে চীনের এই নীতির তার উপর কী প্রভাব পড়ে। চীনের এই মনোভাব আবারও প্রশ্ন তুলে ধরেছে যে চীন কি সত্যিই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নাকি তারা তাদের কৌশলগত প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই ধরণের দ্বৈত খেলা খেলছে।

Leave a comment