ভারতের আমেরিকান ট্যারিফ কমানোর সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের চাপে নয়, বরং বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী। আমেরিকা পারস্পারিক ট্যারিফ আরোপ করতে চায়, আর ভারত তার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে।
ট্যারিফ: ২ এপ্রিল থেকে ভারতসহ অনেক দেশের উপর পারস্পারিক ট্যারিফ আরোপের আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করছেন যে ভারত তাঁর চাপে ট্যারিফ কমানোর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ সূত্র এই দাবিকে অস্বীকার করেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কোনও চাপে নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত বাণিজ্যিক চুক্তি অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে।
ভারত আগেও করেছে বাণিজ্যিক ট্যারিফে পরিবর্তন
ভারত আমেরিকার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড এবং নরওয়ে-র মতো দেশগুলির সাথেও বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ট্যারিফ কমিয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের সাথেও একই ধরণের আলোচনা চলছে। আমেরিকান ট্যারিফ কমানোকেও এই প্রক্রিয়াটির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও বিশেষ চাপের কারণে নয়।
আমেরিকার দাবি এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া
আমেরিকা চায় ভারত কৃষিপণ্য বাদ দিয়ে প্রায় সকল পণ্যের উপর ট্যারিফ সরিয়ে ফেলুক। যদি ভারত এই দাবি মানে, তাহলে তাকে তার ট্রেড প্রোটেকশন কমাতে হবে, যার ফলে আমেরিকান কোম্পানিগুলি উপকৃত হবে। তবে ভারত স্পষ্ট করে বলেছে যে কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে তার জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
মোদী-ট্রাম্পের আলোচনা এবং বাণিজ্য চুক্তির দিক
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প বছরের শেষের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির (Bilateral Trade Agreement) প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। এই চুক্তির লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছোনো। দুই দেশ ট্যারিফ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বাধা কমাতে উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদেরও নিযুক্ত করেছে।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনায় কি হয়েছিল?
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি আমেরিকা সফর করেছে, যেখানে আমেরিকার বাণিজ্য সচিব এবং বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক মতবিরোধ সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এর আগেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়েছিল, তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট ফলাফল বেরোয়নি।
ভারতে ট্যারিফ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কৌশল
ভারতের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ী শ্রেণী আমেরিকান ট্যারিফের প্রভাব কমাতে কৌশল তৈরি করছে। প্রতিবেদন অনুসারে, সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান পণ্যের উপর ট্যারিফ কমাতে বিবেচনা করছে। এদিকে ভারতীয় শিল্পও তাদের আমেরিকান অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছে যাতে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি এবং তার প্রভাব
ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আমেরিকার কংগ্রেসে তার প্রথম ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি সেসব দেশের উপর ট্যারিফ আরোপ করবেন যারা আমেরিকার উপর অনুচিত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করে। ট্রাম্প বলছেন যে ভারত, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার পণ্যের উপর বেশি ট্যারিফ আরোপ করে, যার ফলে আমেরিকান কোম্পানিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেছেন যে ২ এপ্রিল থেকে পারস্পারিক ট্যারিফ আরোপ করা হবে, যাতে আমেরিকা সমান বাণিজ্যিক লাভ পায়।