ডোনাল্ড ট্রাম্পের "ওয়ান বিগ বৃটিফুল বিল"-এ আমেরিকা থেকে বিদেশে পাঠানো অর্থের উপর ৩.৫% ট্যাক্সের প্রস্তাব রয়েছে। এর ফলে ভারতকে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এলন মাস্ক এবং সিনেটে এর প্রতিবাদ হচ্ছে।
বিল: আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রস্তাবিত 'ওয়ান বিগ বৃটিফুল বিল' আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে ২১৫-২১৪ ভোটে খুবই সামান্য ব্যবধানে অনুমোদন পেয়েছে। এই বিলটি আমেরিকার ট্যাক্স সিস্টেমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব করে, কিন্তু সবচেয়ে বিতর্কিত বিধান হলো বিদেশে পাঠানো অর্থ (রেমিট্যান্স) এর উপর ৩.৫% ট্যাক্স আরোপের কথা। এই একটি পরিবর্তনই ভারতের মতো দেশগুলিকে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি করতে পারে।
'ওয়ান বিগ বৃটিফুল বিল' কি?
এই বিলটি ট্রাম্পের ট্যাক্স নীতির অংশ, যেখানে দেশীয় ট্যাক্স সংস্কারের পাশাপাশি বিদেশে যাওয়া অর্থের উপর ট্যাক্স আরোপের কথা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হিসেবে আমেরিকার ভেতরে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স সিস্টেমকে আরও স্বচ্ছ করা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। বিলে গান সাইলেন্সার এবং ইনডোর ট্যানিং সার্ভিসের উপর আরোপিত ট্যাক্স অপসারণ, গ্রিন এনার্জি ক্রেডিট বাতিল এবং ছাত্র ঋণ প্রোগ্রামে কাটছাঁটের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রেমিট্যান্স ট্যাক্স: ভারতের উপর সবচেয়ে বড় প্রভাব
বিলের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রস্তাব হলো—রেমিট্যান্সের উপর ৩.৫% ট্যাক্স আরোপ। আগে এই ট্যাক্স ৫% প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু সমালোচনার পরে তা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই ট্যাক্স আমেরিকায় বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকদের দ্বারা তাদের নিজ দেশে পাঠানো অর্থের উপর আরোপ করা হবে। ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, কারণ ভারত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ।
ভারত কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
বিশ্ব ব্যাংক এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এর তথ্য অনুযায়ী, ভারত ২০২৪ সালে প্রায় ১২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পেয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৮% শুধুমাত্র আমেরিকা থেকে এসেছে। যদি ৩.৫% ট্যাক্স আরোপ করা হয়, তাহলে ভারত প্রতি বছর অর্ধ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এই ক্ষতি শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রার নয়, লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পরিবারের জীবিকার উপরও সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
কোন রাজ্যগুলিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে?
রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরতা ভারতের কিছু রাজ্যে অত্যন্ত বেশি। বিশেষ করে কেরাল, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে হাজার হাজার পরিবার সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী ভারতীয়দের পাঠানো অর্থের উপর নির্ভরশীল। এই ট্যাক্সের ফলে এই রাজ্যগুলির গ্রামীণ এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতের আন্তর্জাতিক প্রবাসী জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি
১৯৯০ সালে ভারতের প্রবাসী জনসংখ্যা ছিল ৬৬ লক্ষ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ১৮৫ লক্ষ হয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলিতে কাজ করছে। আইটি, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থ এবং প্রকৌশলের মতো ক্ষেত্রে কর্মরত ভারতীয়রা উচ্চ বেতন পান, যার ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাস্ক এবং ট্রাম্পের মধ্যে শব্দযুদ্ধ
এই বিল নিয়ে কোটিপতি উদ্যোক্তা এলন মাস্কও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, “কোনো বিল বড় হতে পারে অথবা সুন্দর, কিন্তু দুটো একসাথে হওয়া কঠিন।” এই মন্তব্য ট্রাম্প এবং মাস্কের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।