তৃণমূলের অভিষেক ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রতিনিধিদলে; যুসুফ পঠানের অংশগ্রহণে আপত্তি

তৃণমূলের অভিষেক ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রতিনিধিদলে; যুসুফ পঠানের অংশগ্রহণে আপত্তি
সর্বশেষ আপডেট: 20-05-2025

টিএমসি ‘অপারেশন সিন্দুর’ সংক্রান্ত সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছে। যুসুফ পঠান দৌর্যে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। মমতা ব্যানার্জী দলের সিদ্ধান্তের সমর্থন করেছেন।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়: সম্প্রতি পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং তার পরবর্তী ‘অপারেশন সিন্দুর’ ভারতের সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতিকে আবারও বিশ্বব্যাপী মঞ্চে কেন্দ্রস্থলে নিয়ে এসেছে। এই সমগ্র ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকার একটি সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন (সংসদীয় প্রতিনিধিদল) বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার উদ্দেশ্য হল – ভারতের পক্ষ বিশ্বের কাছে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা এবং পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘেরা করে দেওয়া।

এই প্রতিনিধিদলে বিজেপি ছাড়াও কংগ্রেস, টিএমসি (তৃণমূল কংগ্রেস) এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এতে যে রকম রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখা গেছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে একটি জাতীয় উদ্দেশ্যের মাঝেও রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক স্থিতি থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নয়।

টিএমসি থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধিদলের অংশ হবেন

টিএমসি তাদের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে জানিয়েছে যে, দলের অধ্যক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ এবং জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে মনোনীত করেছেন। দল জানিয়েছে, “আমরা এই কথা জানিয়ে আনন্দিত যে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদবিরোধী ভাবমূর্তি দৃঢ় করার জন্য প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”

এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়েছে – টিএমসি ভারতের স্বার্থকে সর্বোচ্চ মনে করে, কিন্তু তারা কোনও পরিস্থিতিতেই তাদের অধিকার এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে আপোষ করবে না।

যুসুফ পঠানের নাম নিয়ে টিএমসি ক্ষুব্ধ

প্রকৃতপক্ষে, কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে টিএমসি সাংসদ যুসুফ পঠানকেও প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সূত্র মতে, যুসুফ পঠান এই দৌর্যে যাচ্ছেন না। খবর হল, সরকার টিএমসি নেতৃত্বকে বিশ্বাসে না নিয়ে সরাসরি পঠানের সাথে যোগাযোগ করেছিল। এটাই টিএমসিকে বিরক্ত করেছে।

টিএমসি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, দলের আপত্তি রয়েছে যে, যখন কোনও দলের সাংসদকে বিদেশ ভ্রমণের জন্য নির্বাচিত করা হয়, তখন প্রথমে সেই দলের মতামত নেওয়া উচিত। যুসুফ পঠানও দলীয় সিদ্ধান্তের সম্মান করে নিজেকে অনুপস্থিত রেখেছেন।

শশী থারুরের ঘটনা এবং কংগ্রেসের অবস্থান

অন্যদিকে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরও এই প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। থারুর নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করায় গর্ব প্রকাশ করেছেন, কিন্তু কংগ্রেসের অভ্যন্তরে তার এই পদক্ষেপ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও কঠোর স্থিতি প্রকাশ পায়নি। দলের নেতারা থারুরের স্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা এখনও বলা হয়নি।

এখানে একটি বড় পার্থক্য দেখা গেছে – যেখানে শশী থারুর দলীয় সিদ্ধান্ত থেকে সরে নিজের স্থিতি দেখিয়েছেন, সেখানে যুসুফ পঠান টিএমসির সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ মনে করেছেন।

টিএমসির বিদেশ নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট স্থিতি

টিএমসির মতে, বিদেশ নীতি সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্র সরকারের বিষয় এবং তার দায়িত্বও কেন্দ্রকেই নিতে হবে। টিএমসি সরাসরি বলেছে যে, কোন সাংসদ কোন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র দল নিতে পারে, কেন্দ্র সরকার নয়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মিডিয়ার সাথে আলাপচারিতায় বলেছেন, “প্রতিনিধিদল পাঠানোর ব্যাপারে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু টিএমসি থেকে কে যাবেন তা নির্ধারণ করার অধিকার শুধুমাত্র দলের, সরকারের নয়। বিজেপি, কংগ্রেস, টিএমসি, আপ বা যে কোনও দল – তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন নিজেরাই করবে।”

Leave a comment