আরসিবি জয় উদযাপনে ১১ মৃত্যু: দিল্লিতে ডাকা হল কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী

আরসিবি জয় উদযাপনে ১১ মৃত্যু: দিল্লিতে ডাকা হল কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী
সর্বশেষ আপডেট: 10-06-2025

কর্ণাটকে সম্প্রতি সংঘটিত হওয়া ভয়াবহ হতাহতের ঘটনায় ১১ জন আরসিবি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর) সমর্থকের মৃত্যু হওয়ার পর রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমারকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে।

নয়াদিল্লি: ব্যাঙ্গালোরে আরসিবির আইপিএল জয়ের পর উদযাপনের সময় সংঘটিত হওয়া হতাহতের ঘটনায় কর্ণাটকের রাজনীতিতে নতুন করে ঝড় উঠেছে। এই দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু এবং কয়েক ডজন মানুষের আহত হওয়ার পর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আক্রমণ তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমারকে কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতৃত্ব দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন।

১১ জুন সকাল ১১টায় রাহুল গান্ধীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার দিল্লিতে উভয় নেতার সাথে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে হতাহতের পুরো ঘটনা, প্রশাসনিক প্রস্তুতির সম্ভাব্য ব্যর্থতা এবং রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং কর্ণাটক বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত রণদীপ সুরজেওয়ালাও উপস্থিত থাকবেন।

হতাহতের ঘটনার পটভূমি: উৎসব থেকে শোক

আইপিএল ২০২৫-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিবি) এর ঐতিহাসিক জয়ের পর শহরে একটি বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এই আয়োজন দল এবং সমর্থকদের জন্য একটি গৌরবের মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, কিন্তু জনসাধারণের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এই আনন্দের মুহূর্ত শোকে পরিণত হয়। প্রচণ্ড গরম এবং হাজার হাজার মানুষের ভিড়ের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়। অব্যবস্থা এবং গুজবের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটে, যাতে ১১ জনের মৃত্যু এবং অনেকে গুরুতর আহত হয়।

এই ঘটনার পর বিরোধী দলগুলি কংগ্রেস সরকারের তীব্র সমালোচনা করে এবং অভিযোগ করে যে প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে নি। বিরোধীরা এই দুর্ঘটনাকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছে। বিজেপি এবং জেডিএস-এর মতো দলগুলি বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানিয়েছে যাতে এই গুরুতর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যায়। বিরোধীরা এই প্রশ্নও তুলেছে যে সরকার কেবলমাত্র পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে বলির পাঁঠা বানিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক চেহারা রক্ষা করার চেষ্টা করছে।

সরকারের ভেতরেও উঠছে স্বর

কর্ণাটকে কংগ্রেস সংগঠন তিনটি বৃহৎ গোষ্ঠীতে বিভক্ত বলে মনে হচ্ছে –

  • সিদ্ধারামৈয়া গোষ্ঠী
  • ডি.কে. শিবকুমার গোষ্ঠী
  • গৃহমন্ত্রী জি. পরমেশ্বরের গোষ্ঠী

এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ইতিমধ্যেই চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে এই হতাহতের ঘটনায় সম্মিলিত জবাবদিহিতার দাবি আরও তীব্র হয়েছে। দলের উচ্চপদস্থ নেতৃত্ব ভয় পাচ্ছেন যে যদি এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান না করা হয়, তাহলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং প্রশ্ন

ঘটনার পর ব্যাঙ্গালোরের সাবেক পুলিশ কমিশনার বি. দয়ানন্দসহ পাঁচজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে निलम्बিত করা হয়েছে। সরকার দাবি করেছে যে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে নেওয়া হয়েছে। তবে, সিদ্ধারামৈয়া স্পষ্ট করে বলেছেন যে, “রাজ্য সরকার কোনও গাফিলতি করেনি, প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পুরোপুরি চেষ্টা করেছে। হতাহতের ঘটনা একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল, কিন্তু এটিকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া ভুল।”

রাহুল গান্ধীর বৈঠক থেকে কী আশা করা যায়?

কংগ্রেস নেতৃত্ব এই পুরো ঘটনাকে কেবলমাত্র একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে গুরুতর সংকট হিসেবে বিবেচনা করছে। রাহুল গান্ধীর এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হল:

  • ঘটনার পুরো পর্যালোচনা
  • দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ
  • ভবিষ্যতের কর্ম পরিকল্পনা
  • দলের ভাবমূর্তি নিয়ন্ত্রণ করা

সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী এই বিষয়ে জনসম্মুখে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে সকল পক্ষের মতামত নিতে চান, যাতে কোনও তাড়াহুড়ো করে বক্তব্য না দেওয়া হয়।

কংগ্রেসের সামনে দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জ

একদিকে দলকে বিরোধীদের আক্রমণ সহ্য করতে হচ্ছে, অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ কলহ এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা সংশোধন করাও জরুরি। দলের চেষ্টা হচ্ছে এই ঘটনাকে কেবলমাত্র প্রশাসনিক গাফিলতি হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। রাহুল গান্ধীর এই বৈঠক দলের জন্য সংকট ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে সরকারের পক্ষ থেকে কী বক্তব্য দেওয়া হবে এবং কী কী দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Leave a comment