কেন্দ্র সরকার ‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ (One Nation, One Election) এর দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য লোকসভা এবং সকল রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত করা, যার ফলে নির্বাচনী ব্যয়, প্রশাসনিক বোঝা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কমবে।
নয়াদিল্লি: ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে শীঘ্রই একটি বড় গঠনগত বিপ্লব দেখা যেতে পারে। কেন্দ্র সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ (One Nation, One Election) পরিকল্পনা এখন তার চূড়ান্ত আকার ধারণ করছে। সরকারের লক্ষ্য ২০৩৪ সালের মধ্যে সমগ্র দেশে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত করা। এই দিকে সাংবিধানিক সংশোধন এবং বিস্তৃত কৌশল নিয়ে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।
‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ পরিকল্পনা কী?
‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ এর সরল অর্থ হল দেশজুড়ে লোকসভা এবং সকল রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে ভারতে প্রতি বছর কোনও না কোনও রাজ্যে নির্বাচন হয়, যার ফলে আর্থিক ব্যয়, প্রশাসনিক বোঝা এবং নীতিগত স্থবিরতা (policy paralysis) সৃষ্টি হয়। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্বাচন চক্রকে একীভূত করে প্রশাসনিক স্থায়িত্ব আনা এবং সরকারগুলিকে তাদের পুরো মেয়াদে উন্নয়নমূলক কাজে মনোযোগ দিতে সক্ষম করা।
২০৩৪ লক্ষ্য বছর, ২০২৯ থেকে শুরু হবে সমন্বয় প্রক্রিয়া
সংবিধান (১২৯তম সংশোধন) বিল, ২০২৪ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন (সংশোধন) বিল, ২০২৪ নিয়ে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ২০৩৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে দেশকে একটি সমান নির্বাচনী সময়সূচীতে নিয়ে আসা প্রাথমিকতা। এর জন্য ২০২৯ সালের পর যাদের বিধানসভা নির্বাচন হবে তাদের মেয়াদ ২০৩৪ সাল পর্যন্ত সীমিত করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, উত্তর প্রদেশ, যেখানে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন ২০৩২ সালে প্রস্তাবিত, সেখানে মেয়াদ কেবলমাত্র দুই বছর করা হবে যাতে রাজ্য নির্বাচন ২০৩৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সাথে যুক্ত করা যায়।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে আইনগত ভিত্তি
সরকার ‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন বিলের খসড়া প্রস্তুত করেছে। এর অনুসারে, রাষ্ট্রপতি লোকসভার প্রথম বৈঠকের তারিখের ভিত্তিতে একটি অধিসূচনা জারি করবেন, যাতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন কখন হবে তা নির্ধারিত হবে। এরপর গঠিত রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ লোকসভার মেয়াদের সাথে যুক্ত করা হবে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে যে কোনও রাজ্যই হোক না কেন, তার বিধানসভার সমাপ্তি এবং নতুন নির্বাচন লোকসভা নির্বাচনের সাথে সাথেই হবে।
যদি কোনও কারণে লোকসভা বা কোনও বিধানসভা তার ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে যায়, তবে সেখানে অবশিষ্ট মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন আবার লোকসভা চক্রের সাথে যুক্ত হবে।
JPC-এর ভূমিকা এবং মেয়াদ বৃদ্ধি
‘এক জাতি, এক নির্বাচন’ বিলটি ২০২৪ সালের শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভায় উত্থাপিত হয়েছিল এবং এটি সংসদ সদস্য পি.পি. চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত যুক্ত সংসদীয় কমিটি (JPC)-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই কমিটিকে সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষ, যেমন রাজ্য সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হবে, কারণ তারা এখন পর্যন্ত মহারাষ্ট্র এবং উত্তরাখণ্ড সফর করেছে এবং অন্যান্য রাজ্য সফর করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে।
যদিও, সংবিধান সংশোধন বিলে একটি নমনীয়তাও রাখা হয়েছে। যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে যে কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের সাথে বিধানসভা নির্বাচন করা সম্ভব নয়, তবে সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পৃথক নির্বাচন করার সুপারিশ করতে পারে। এই বিধানটি নিশ্চিত করে যে সংবিধানের সংঘীয় কাঠামো সুরক্ষিত থাকবে এবং রাজ্যের বিশেষ পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া হবে।
কী কী সুবিধা হবে?
- নির্বাচনী ব্যয়ে প্রচুর কমতি: বারবার নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। এই ব্যয় এখন একবারেই কমে যাবে।
- উন্নয়ন কাজে গতি: নির্বাচন আচরণবিধি বারবার প্রয়োগের ফলে পরিকল্পনাগুলি আটকে যায়। এটি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
- রাজনৈতিক স্থায়িত্ব: বারবার নির্বাচনী রাজনীতি এবং দলবদল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।